শুক্রবার, ৩১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

ইরানের তাবরিজের জাহানশাহ মসজিদ

পোস্ট হয়েছে: এপ্রিল ২৫, ২০১৮ 

news-image

ইরানে ইসলাম আসার পরপরই আবু মোজাফফার জাহানশাহ কারাকুইনলু’র নির্দেশে এই মসজিদটি নির্মিত হয়। ১১৯৩ হিজরিতে প্রবল ভূমিকম্পে মসজিদটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এটির গম্বুজ পুরোপুরি ধসে পড়ে। এই অবস্থাতেই এখানে একশ’ বছরের বেশি সময় ধরে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেন। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু হয় এবং ১৯৭৬ সালে এর সমাপ্তি ঘটে। নানা রঙের টাইলসের ব্যবহার এবং ক্যালিগ্রাফির কারুকাজ করার কারণে মসজিদটি দেখলে যেকোনো মানুষের চোখ জুড়িয়ে যাবে। বিংশ শতাব্দিতে পুনর্নির্মাণের সময় নবম হিজরিতে নির্মিত মসজিদটির প্রাথমিক স্থাপনাকে অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছে। জাহানশাহ মসজিদটি ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে পরিচিতি পেয়েছে এবং সে নামগুলো এখনো মানুষের মুখে উচ্চারিত হয়। এরকম কয়েকটি নাম হচ্ছে, কাবুদ মসজিদ, শাহজাহান মসজিদ, ইমারাত মসজিদ এবং মোযাফফারিয়ে মসজিদ।  হিজরি ১১ শতকের প্রথমার্ধে ওসমানীয় তুর্কি পর্যটক কাতেব চালাবি এবং আউলিয়া চালাবি এই মসজিদ পরিদর্শন করেন। একই শতাব্দির দ্বিতীয়ার্ধে মসজিদটি পরিদর্শন করেন ফরাসি পর্যটক তভারনিয়া ও শারদুন।

ওসমানীয় পর্যটক ও ঐতিহাসিক কাতেব চালাবি তার ‘তারিখে জাহান নামা’ গ্রন্থে লিখেছেন: “জাহানশাহ মসজিদের প্রবেশদ্বার কিসরার প্রাসাদের ছাদের চেয়ে উঁচু। এটি একটি চমৎকার স্থাপনা যা বিচিত্র রঙের টাইলস দিয়ে সাজানো এবং এটির গম্বুজ অনেক উঁচু। একবার কেউ এই মসজিদে প্রবেশ করলে তার আর বের হতে মন চাইবে না। ” ফরাসি প্রাচ্যবিদ ‘মাদাম দিভলাফাওয়া’ ঊনিশ শতকে ইরানে কাজার শাসনামলে জাহানশাহ মসজিদটি ঘুরে দেখেন। তিনি লিখেছেন: “এই মসজিদের ওপর ব্যাপক গবেষণা হওয়া দরকার।  মসজিদের অনন্য নির্মাণশৈলী দেশি বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করছে। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে ভূমিকম্পের কারণে এই সুন্দর স্থাপনার গম্বুজ ধসে পড়েছে এবং দেয়ালেরও বেশ ক্ষতি হয়েছে। এই মসজিদে রয়েছে একটি বিশাল আঙিনা যার ঠিক মাঝখানে স্থাপিত হয়েছে ওজুখানা। মসজিদের ভেতরের অংশে স্থাপিত টাইলসের ব্যবহার হয়েছে বিস্ময়কর পদ্ধতিতে। এখানে ব্যবহৃত টাইলসগুলোকে প্রথমে কেটে টুকরো টুকরো করা হয়েছে। এরপর সেগুলোকে পাশাপাশি এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে যেন মনে হয়, পুরো দেয়ালজুড়ে রয়েছে একটি মাত্র টাইলসখণ্ড।”

ফরাসি প্রাচ্যবিদ ‘দিভলাফাওয়া’ আরো লিখেছেন: “জাহানশাহ মসজিদে রয়েছে দু’টি আলাদা নামাজ আদায়ের কক্ষ যার প্রত্যেকটিতে অতীতে আলাদা আলাদা গম্বুজ ছিল। প্রতিটি কক্ষের দেয়ালের টাইলসের ওপর রয়েছে আরবি ভাষায় লেখা অনন্যসুন্দর ক্যালিগ্রাফি। মসজিদের মেঝেতে বসানো হয়েছে অনেক দামী পাথর যা দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। তাবরিজের নিকটবর্তী উরুমিয়েহ এলাকা থেকে এই এসব পাথর উত্তোলন করা হয়েছে। এতকাল পরেও এসব পাথর নতুনের মতো ঝকঝকে রয়ে গেছে।”

ইরানের তাবরিজ শহরের জাহানশাহ মসজিদের প্রবেশপথে লেখা রয়েছে পবিত্র কুরআনের সূরা তওবার ১৮ নম্বর আয়াত যেখানে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। নিঃসন্দেহে তারাই আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিবসের প্রতি এবং নামায কায়েম করেছে ও যাকাত আদায় করেছে; তারা আল্লাহ ব্যতীত আর কাউকে ভয় করে না। অতএব, আশা করা যায়, তারা হেদায়েত প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” সেইসঙ্গে মসজিদের দেয়ালের প্রতি পরতে পরতে রয়েছে কুরআন ও হাদিসের অসংখ্য বাণী।

জাহানশাহ মসজিদের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে দু’টি বাঁকা ও উঁচু মিনার।  মসজিদের আঙিনার দক্ষিণ প্রান্তে জাহানশাহ ও তার কন্যকে দাফন করা হয়। কবরের উপরের স্থাপনা ধসে পড়ায় দীর্ঘদিন এই কবরের অস্তিত্ব কেউ জানতে পারেনি। কিন্তু মসজিদ পুনর্নির্মাণের সময় কবর দু’টি আবিষ্কৃত হয়। এই মসজিদের আরেকটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- এর ভেতরের অংশের দেয়ালজুড়ে রয়েছে আল্লাহ তায়ালার গুণবাচক অসংখ্য নাম।- পার্সটুডে।