ইরানের জাতীয় গ্রন্থাগার
পোস্ট হয়েছে: এপ্রিল ৩, ২০১৯
![news-image](https://www.iranmirrorbd.com/wp-content/uploads/2019/07/2674015.jpg)
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের আর্কাইভ ও জাতীয় গ্রন্থাগার হচ্ছে প্রশিক্ষণ, জ্ঞানার্জন, গবেষণা ও সেবামূলক একটি প্রতিষ্ঠান। ১৩১৬ ফারসি সালে (১৮৯৫) আনুষ্ঠানিকভাবে এ গ্রন্থাগার যাত্রা শুরু করে। এটি ১৩৫৮ ফারসি সালে (১৯৭৯) তৎকালীন ‘পাহলভী গ্রন্থাগার’, ১৩৬২ ফারসি সালে (১৯৮৩) ‘মারকাজে খাদামাতে কেতাবদারী’ (বই সংরক্ষণ ও সেবা কেন্দ্র) ও ১৩৭৮ ফারসি সালে (১৯৯৯) ইসলামী প্রজাতন্ত্রের বিপ্লবের সাংস্কৃতিক আর্কাইভ কেন্দ্র ‘জাতীয় গ্রন্থাগার’-এর সাথে একীভূত হয়। ১৩৮১ সালে (২০০২) সর্বোচ্চ ব্যবস্থাপনা পরিষদের সিদ্ধান্তক্রমে ‘জাতীয় আর্কাইভও জাতীয় গ্রন্থাগারের সাথে একীভূত হয় এবং বর্তমানত কাঠামো লাভ করে। ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের জাতীয় গ্রন্থাগারটি ‘ইরানের জাতীয় পাঠাগার’ ও ‘ইরানের জাতীয় দলিলাদির ভাণ্ডার’ নামক দু’টি সংযুক্ত ভবনে কার্যক্রম চালাচ্ছে।
নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী অর্পিত দায়িত্ব পালনের ভিত্তিতে জাতীয় গ্রন্থাগার বইপত্র সংগ্রহ ও তথ্যসূত্র সংরক্ষণ করে থাকে। দেশের ভেতরে প্রকাশিত সকল বই ও বই ব্যতীত অন্যান্য প্রকাশনা সংগ্রহ করা হয়। বই ছাড়া ম্যাগাজিন, সংবাদপত্র, পোস্টার, ছবি, অডিও-ভিডিও ক্যাসেট, ইলেকট্রনিক ও ডিজিটাল তথ্যাবলি এবং এগুলোর কপি উপহার প্রাপ্তি বা খরিদ সূত্রে সংগ্রহ করা হয়। ইরানের বাইরে ইরানের তথ্যকেন্দ্র বা ইসলামী কেন্দ্র থেকে ফারসি বহির্ভূত বিশেষ করে ইংরেজি ও আরবি ভাষায় ছাপানো প্রকাশনাসহ ফারসি ভাষায় প্রকাশিত সকল প্রকাশনা সংগ্রহ করা হয় ও ফারসি বহির্ভূত ভাষা বিশেষ করে ইংরেজি ও আরবি ভাষায় প্রকাশিত নির্ভরযোগ্য সূত্রের ভিত্তিতে বিভিন্ন বিষয়ে প্রকাশিত তথ্যাদি সংগ্রহ করা হয়।
আন্তর্জাতিক সংস্থার সিদ্ধান্তক্রমে যে স্ট্যান্ডার্ড তুলে ধরা হয় তা হল সকল বই এ ওঝইঘ নম্বর থাকবে। একইভাবে প্রতিটি জিনিসেই একটি নম্বর থাকবে যাতে পাঠাগারে তা সহজেই চেনা যায় ও পাওয়া যায়। যে কোন দেশের পাঠাগারে সহজে খুঁজে পাওয়ার জন্য এরকম পদক্ষেপ নেয়া হয়। জাতীয় গ্রন্থাগার ওঝইঘ ও ওঝওখ এর জাতীয় কেন্দ্র হিসেবে আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড মেনে বই এবং পত্র-পত্রিকার জন্য নম্বর বরাদ্দ দিয়ে থাকে। ফলে জাতীয় গ্রন্থাগার শুধু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার সগর্ব উপস্থিতিই ঘোষণা করেনি; বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সকল প্রকার বিনিময় বা সহযোগিতার দ্বারও উন্মুক্ত করেছে।
ইরানের জাতীয় গ্রন্থাগার বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের অধিকার সংরক্ষণের লক্ষ্যে ১১ মে ১৯৯৯ সাল থেকে বুদ্ধিবৃত্তিক নিদর্শন সংরক্ষণ করে আসছে এবং ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (১৩৮৫ বাহমান) পর্যন্ত এতে প্রায় ১০৫০০টি নিদর্শন সংরক্ষিত হয়েছে।
জাতীয় গ্রন্থাগারে প্রকাশনা বিভাগ গবেষণা, ব্যবহারিক শিক্ষা ও সংস্কৃতিমূলক মৌলিক বই ছাপানো ও প্রকাশ করার দায়িত্বে নিয়োজিত। এছাড়াও প্রতি বছর যেসব বই প্রকাশিত হয় তার তালিকাও এ বিভাগে প্রকাশ করা হয়।
সারাদেশে বইপত্র সংরক্ষণ ও তথ্য আদান-প্রদান সংক্রান্ত তৎপরতা আরও জোরদার করার লক্ষ্যে জাতীয় গ্রন্থাগারে গবেষণা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। এ গ্রন্থাগারের জন্য ৬০টিরও বেশি অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের পদ অনুমোদিত বিজ্ঞান, গবেষণা ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন যার গবেষণা কার্যক্রমগুলো হলো বিভিন্ন প্রকার তথ্যকেন্দ্র ও পাঠাগারের জন্য প্রয়োজনীয় আদর্শ ও নির্দেশনা অনুমোদন; সারাদেশে বইপত্র সংরক্ষণ ও তথ্য পৌঁছানোর কর্মতৎপরতা সহজ করার জন্য প্রয়োজনীয় সাজ-সরঞ্জাম সরবরাহ করা, সারা দেশে পুস্তক সংরক্ষণ ও তথ্য আদান-প্রদান উন্নয়ন ও সমৃদ্ধকরণে পদক্ষেপ নেয়া এবং জ্ঞান বিষয়ক মৌলিক গ্রন্থ প্রকাশের চেষ্টা চালানো; সাময়িকী প্রকাশ, পুস্তক সংরক্ষণ ও তথ্য আদান-প্রদান সম্পর্কিত বিশ্বকোষ সংকলন, ইরান ও ইসলাম বিষয়ে ম্যাগাজিন ছাপানো, ইরানী পত্রপত্রিকার জন্য নির্দেশনা প্রকাশ, বিশেষজ্ঞ ও অনুসন্ধানী ব্যক্তিবর্গের মধ্যে পেশাগত সমৃদ্ধি আরও বৃদ্ধির জন্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের এ শাখায় বইপত্র প্রকাশ এবং মৌলিক ও ব্যবহারিক গবেষণা আয়োজন।
সংগ্রহ
১. ছাপানো বইপত্র : বর্তমানে গ্রন্থাগারে ফারসি, আরবি, ইংরেজি, ফরাসি, জার্মানি, রুশ ও অন্যান্য ভাষায় প্রায় ১৫ লক্ষ বই রয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রচুর বইপত্র রয়েছে, তবে ‘ইরান পরিচিতি’ ও ‘ইসলাম পরিচিতি’ ও ‘বই সংরক্ষণ ও তথ্য আদান-প্রদান’ সংক্রান্ত যত বই রয়েছে তা নজিরবিহীন।
২. দুষ্প্রাপ্য পাণ্ডুলিপি : এ বিভাগে ফারসি ও আরবি ভাষায় প্রায় ২৫ হাজার পাণ্ডুলিপি রয়েছে; লিথোগ্রাফিক পদ্ধতিতে ছাপা বই রয়েছে প্রায় ২৬ হাজার। এর মধ্যে কমপক্ষে ১৩৫ প্রকার বই অত্যন্ত আড়ম্বরপূণ সুদৃশ্য। জাতীয় গ্রন্থাগার এখন পর্যন্ত ২৩ খণ্ডে ঐ পাণ্ডুলিপিগুলোর তালিকা প্রকাশ করেছে।
৩. ইরান পরিচিতি ও ইসলাম পরিচিতি : জাতীয় গ্রন্থাগারের একটি মূল দায়িত্ব হচ্ছে ফারসি বহির্ভূত ভাষায় লেখা ইরান ও ইসলাম সম্পর্কিত বইপত্র সংগ্রহ করা। এভাবে ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান ও রুশ ভাষায় লেখা প্রায় ৪০ হাজার বই সংরক্ষণ করা হয়েছে। এগুলোর অধিকাংশই সাজ-সজ্জা অলংকারে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। জাতীয় গ্রন্থাগার পুস্তক পরিচিতি সংক্রান্ত তথ্যাবলি প্রকাশে তৎপর যা শিগগিরই আগ্রহী গবেষকবৃন্দের হাতে পৌঁছে দেয়া হবে।
৪. পত্র-পত্রিকা : কাজার শাসনামল থেকে আজ পর্যন্ত ইরানে প্রকাশিত ম্যাগাজিন, সাময়িকী, দৈনিকপত্র, বুলেটিন, সংবাদপত্র ইত্যাদি এ গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত আছে। এছাড়া বিদেশী পত্র-পত্রিকাও সংরক্ষণ করা হয়েছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ সংগ্রহশালায় ১৩ হাজার শিরোনামের মোট ১ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি খ- বাঁধাইকৃত পত্র-পত্রিকা রয়েছে। এছাড়া রয়েছে প্রকাশনা অব্যাহত আছে এমন ১৮০০ শিরোনামের সাময়িকী, ৭০টি দৈনিক পত্র ও ৫৫০ সাপ্তাহিকী যা সারাদেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ সংগ্রহ। জাতীয় গ্রন্থাগারে ইরান পরিচিতি ও ইসলাম পরিচিতি বিষয়ক পত্র-পত্রিকার সমাবেশও চোখে পড়ার মতো।
৫. পুস্তক বহির্ভূত সম্পদ : বইয়ের বাইরেও বিভিন্ন সম্পদ এখানে সংরক্ষিত আছে। যেমন : ডিজিটাল, ভিডিও, অডিও, ব্রোশিওর, পোস্টার, ম্যাপ, ছবি, পোস্টকার্ড, প্রতিকৃতি, টিকিট, পঞ্জিকা ইত্যাদি। মোটামুটি ৪৭ প্রকারের মোট দশ লক্ষ নমুনা সংগৃহীত আছে।
জাতীয় গ্রন্থাগারটি ৯৭০০০ বর্গমিটার আয়তনের একটি আটতলা ভবনে অবস্থিত। গ্রন্থাগরের বিভিন্ন হলগুলো হলো- খাজা নাসিরুদ্দিন তূসি হল (প্রামাণ্য দলিলাদি ও দুষ্প্রাপ্য পাণ্ডুলিপি), দেহখোদা হল (পত্রপত্রিকা), কামালউদ্দীন বেহযাদ হল (পুস্তক বহির্ভূত সম্পদ), ইবনে নাদিম হল (সংগ্রহশালা ও বই পরিচিতি), খারীজমী হল (বিজ্ঞান ও কারিগর বিদ্যা), শিশু ও তরুণদের জন্য বিশেষ হল, হাফেজ ও সাদী হল (সাধারণ পাঠাগার), রুদাকী হল (বিশেষজ্ঞ তরুণদের জন্য), ইবনে সিনা হল (মানববিজ্ঞান), ফারাবী হল (সমাজবিজ্ঞান), শহীদ মোতাহহারী হল (ইরান পরিচিতি ও ইসলাম পরিচিতি তথ্যকেন্দ্র), শেখ তুসী হল (ইসলামদ পরিচিতি), আবু রাইহান বিরূনী হল (ইরান পরিচিতি)।
-ইমেইল : [email protected]
-ইন্টারনেট :www.nlai.ir
-ঠিকানা : শহীদ হাক্কানী হাইওয়ে, (মেট্রো মীর দামাদের পর)
বুলোভারে কেতাবখনে মেল্লীয়ে ইরান।
পোস্ট কোড : ১৫৩৭৬১৪১১১
অনুবাদ : শাহ নওয়াজ তাবীব