ইরানের চ’বাহর সমুদ্র বন্দরের বাণিজ্যিক ইতিহাস
পোস্ট হয়েছে: জুন ৮, ২০১৬
বেলুচিস্তানের নামকরা শহর হলো চ’বাহর। ইরানের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে এবং সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশের তিনটি প্রধান শহরের একটি হলো চ’বাহর। প্রদেশের অন্য দুটি শহর হলো কোনারাক এবং নেগর। চ’বাহর শহরটি ওমান সাগরের তীরে অবস্থিত। প্রায় তিন শ’ কিলোমিটার উপকূল জুড়ে এই শহরটি অবস্থিত। বন্দর নগরীটিই চ’বাহরের মূলকেন্দ্র। চ’বাহরের আয়তন হলো সতের হাজার বর্গকিলোমিটারেরও বেশি। কর্কটক্রান্তির নিকটে অবস্থান, ওমান সাগরের প্রভাব এবং মৌসুমি বায়ুর ফলে এখানে চারটি ঋতুতেই মোটামুটি নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া বিরাজ করে। অনেকের মতে আবহাওয়াগত বৈশিষ্ট্যের সাথে মিল রেখেই এই শহরের নামকরণ করা হয়েছে চ’বাহর। চ’বাহর তো নয় আসলে এর নাম ছিল চহার বাহর অর্থাৎ চার বসন্ত।
চ’বাহর থেকে ৩৫০ কিলোমিটার পূর্বে ইরানশাহ্র অবস্থিত। এই ইরানশাহ্রের মাধ্যমে ইরানের বৃহৎ শহরগুলোর সাথে চ’বাহরের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। প্রাচীনকালে এই অঞ্চলটি ’তীস’ নামে বিখ্যাত ছিল। বিশেষ করে ভৌগোলিক দিক থেকে কৌশলগত অবস্থানে থাকার কারণে চ’বাহর সারাবিশ্বেই পরিচিত ছিল। একটা সময় ছিল শাসকরা এই চ’বাহরের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারত না। তখন উপনিবেশবাদী শক্তিগুলো, যেমন ব্রিটেন, পর্তুগাল, স্পেন প্রভৃতি এই চ’বাহরের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার জন্য পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছিল। এর নিদর্শন এখনো সেখানে অবশিষ্ট রয়েছে। যেমন চ’বাহর থেকে ৯ কিলোমিটার পশ্চিমে তীস টিলায় এখনো পর্তুগীজদের কেল্লার নিদর্শন রয়েছে। অন্যদিকে ব্রিটিশদের হস্তক্ষেপের প্রমাণস্বরূপ এখনো চ’বাহরের মূল শহরে ‘বাংলো’ ভবন কালের সাক্ষী হয়ে রয়েছে।
চ’বাহর সমুদ্র বন্দরের বাণিজ্যিক ইতিহাস বেশ প্রাচীন। বিশেষ করে হাখামানেশী যুগে সমুদ্র পথে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কিংবা যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই বন্দরটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চীন, ভারত এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যেসব বাণিজ্যিক পণ্য মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে পাঠানো হতো, সেসব এই চ’বাহর বন্দর হয়েই যেত। ভেনিজুয়েলার বিখ্যাত পর্যটক মার্কো পোলো তাঁর ভ্রমণ কাহিনীতে চ’বাহর বন্দর সম্পর্কে লিখেছেন: ‘সমুদ্রপথে ভ্রমণকারী বহু বণিক চ’বাহর সমুদ্র বন্দরে নোঙর ফেলেন এবং এখান থেকে সড়ক পথে বিভিন্ন পণ্য বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করা হয়।’
চ’বাহর ছাড়াও সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশে আরো দুটি উল্লেখযোগ্য বন্দর আছে। একটির নাম তীস বন্দর। অপরটির নাম কোনারাক। এগুলোর মধ্যে তীস বন্দরটি বেশি প্রাচীন। এই বন্দরটির এতো খ্যাতি বা পরিচিতির কারণ মনে হয় এখানকার প্রাচীন ও মূল্যবান কিছু নিদর্শন। তাছাড়া এখানে আছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেরও কিছু নমুনা। যেমন এখানে রয়েছে অনেকগুলো কূপ, রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রাচীন গুহা। আরো আছে তীস কেল্লা, জামে মসজিদ এবং অসংখ্য মাযার। তীস কেল্লাটি পর্তুগিজ কেল্লা। এই কেল্লাটি তীস বন্দরের ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর অন্যতম। তীস চ’বাহর থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে দুটি পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত। দূর থেকে এর সৌন্দর্য দৃষ্টি কেড়ে নেয়। সূত্র: পার্সটুডে