ইরানি রূপকথা ‘সী-মোরগ’ (২য় পর্ব)
পোস্ট হয়েছে: জুলাই ১৭, ২০১৬
![news-image](https://www.iranmirrorbd.com/wp-content/uploads/2016/07/8367599484536550294-1.jpg)
এক গরিব লোক সংসারের ভার সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার আশ্রয় নিয়ে সমুদ্রে গিয়ে ডুবে মরতে চাইলে সী-মোরগ পরপর কয়েকবার তাকে উদ্ধার করে একটি করে মাছও তার হাতে দিয়ে দেয়। লোকটির কাছ থেকে ধুরন্ধর এক ব্যক্তি সামান্য আটার বিনিময়ে ওই মাছ নিয়ে নেয়।
তৃতীয়বারের মতো এই ঘটনা ঘটলে সী-মোরগ বিস্ময়ের সঙ্গে তাকে জিজ্ঞেস করে: তোমাকে যে প্রথম মাছটি আমি দিয়েছিলাম ওই একটা মাছই তো তোমার সাত প্রজন্মের জন্য যথেষ্ট ছিল! তারপরও কেন মরতে আসো?
সী-মোরগের প্রশ্নের জবাবে এবার আত্মহত্যা করতে যাওয়া লোকটি বললো: প্রথম মাছটির বিনিময়ে সামান্য আটা নিয়ে বৌয়ের হাতে দিয়েছি। দ্বিতীয় মাছটিও সেরকমই সামান্য আটার বিনিময়ে নিয়ে নিয়েছে এক লোক। সেই আটায় রুটি বানিয়ে বাচ্চাদের দিয়েছি। এটা কি কোনো জীবন হলো? আমার কপালটা এমন কেন!
সী-মোরগ বললো: কপালের দোষ দিয়ে লাভ নেই। তোমাকে যে মাছগুলো দিয়েছি সেগুলোর পেট ছিল সোনা-রূপায় ভর্তি।
শুনেই লোকটির বুক থেকে দীর্ঘ একটি শ্বাস বেরিয়ে গেল আকাশের শূন্যতায়। এবার যে মাছটি তার হাতে আছে ভালো করে সেটিকে ধরলো এবং ঘরের দিকে পা বাড়ালো।
কিন্তু আজও পথের মোড়ে সেই প্রতারক ধোঁকাবাজ লোকটি তার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিল। যখনই সে দেখতে পেল আরেকটি মাছ নিয়ে লোকটি বাসার দিকে ফিরছে সামনে এগিয়ে গিয়ে আগের মতোই বললো: দাও, মাছটা দাও আর তার বিনিময়ে এক মুষ্টি আটা নিয়ে যাও। প্রস্তাব শুনে লোকটি আজ হাসলো। প্রতারক লোকটি বললো: ঠিক আছে,দুই মুষ্টি দেবো। এবারও হাসলো। প্রতারক এবার তিন মুষ্টি,চার মুষ্টি.. এভাবে বাড়াতে লাগলো। কিছুতেই আজ লোকটি তার মাছ দিতে চাইলো না। প্রতারক লোকটি বুঝতে পারলো যে আজ কোনো একটা ঘটনা ঘটেছে। বললো: ঠিক আছে এক হাজার দিনার দেবো,দাও।
লোকটা তারপরও মাছ বিক্রি করতে রাজি হলো না। এবার প্রতারক লোকটা মাছওয়ালার কলার টেনে ধরলো। শুরু হয়ে গেল হাতাহাতি থেকে মারামারি।
মারামারির এক পর্যায়ে টহলরত পেয়াদারা এসে দুজনকেই ধরে নিয়ে গেল বাদশার দরবারে। বাদশাহ তাদের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের ঘটনা দেখে জিজ্ঞেস করলো: কী হয়েছে তোমাদের ? চীৎকার করছো কেন ? জবাবে মাছ হাতে লোকটি বললো: হুজুর! তিনটি মাছ আমি পেয়েছি। মাছগুলোর পেট সোনারূপায় পরিপূর্ণ। ঘরে খাবার নেই। বাচ্চারা অভুক্ত। এই প্রতারক আমার কাছ থেকে পরপর দুদিন দুটি মাছ নিয়ে আমাকে প্রথমদিন দিয়েছে এক মুষ্টি আটা। দ্বিতীয় দিন একটি মাছের বিনিময়ে দিয়েছে সামান্য আটা।
আজও সে এই তৃতীয় মাছটিও নিতে চায়। আমি দিতে চাচ্ছি না বলেই সে আমাকে মারার চেষ্টা করছিল।
বাদশাহ এবার আগের দুটি মাছ নিয়ে আসার জন্য আদেশ দিলেন। মাছগুলো নিয়ে আসার পর সেগুলোর পেট ফাঁড়তেই বেরিয়ে এল জ্বলজ্বল সোনারূপা। এগুলো দেখে তো বাদশাহ হতবাক। দুই ঠোঁটে আঙুল কামড়ে দাঁড়িয়ে রইলেন তিনি। মনে মনে বললেন: খোদার কী কুদরত! মাছের পেটে এতোসব সোনা-জহরত…!
বাদশাহ এবার লোকটাকে তার মাছগুলো বুঝিয়ে দিয়ে বললেন: সত্যি করে বলো তো! এই মাছগুলোর রহস্য কী! কোত্থকে এনেছো এগুলো? লোকটি এবার তার সাংসারিক দুরবস্থার বিবরণ তুলে ধরলো এবং বললো খাবার জুটাতে না পেরে সমুদ্রে ডুবে মরতে চেয়েছিল। সী-মোরগ তখন তাকে বাঁচিয়েছিল এবং পরপর তিনদিন সী-মোরগ তাকে একটি করে মাছ এনে দিয়েছিল তার হাতে। এসব শুনে বাদশা বললো: যাও! ওই সী-মোরগটাকে নিয়ে আসো আমার কাছে।
মাছগুলো ফেরত পেয়ে যতটুকু আনন্দিত হয়েছিল লোকটি এবার তারচেয়েও বেশি কষ্ট পেয়ে ব্যথা বুকে লালন করে খালি হাতে ফিরে গেল বাড়িতে। মনে মনে ভাবলো, হায় কপাল! ভাগ্য আমার উন্নতির পথে আবারও বিশাল পাথর এনে ফেলে রেখেছে। কী যে করি!
বাসায় ফিরতেই তার বৌ রেগেমেগে জিজ্ঞেস করলো: কী হলো আবার! খালি হাতে ফিরলে যে! আটা কই! লোকটি বললো: শান্ত হও বৌ! সব বলছি।
এই বলে যা যা ঘটেছিল সব ঘটনা বৌ সে খুলে বললো। সবশেষে বললো: বাদশাহ এখন আমাকে ওই পাখিটাকে মানে সী-মোরগকে তার কাছে এনে দিতে বললো। এখন কী করি বলো! আমি সী-মোরগকে কী করে ধরবো আর বাদশার কাছে নিয়ে যাবো!
কথা শুনে বৌয়ের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। সে ভাবতেই চাইলো না তার স্বামীর কপালে কী দু:খ এসে ভর করেছে। সে বরং ভাবলো যাক এবার বুঝি তার কষ্টের দিন শেষ হতে যাচ্ছে। তার চোখেমুখে সোনার ঔজ্জ্বল্য চকমক করতে লাগলো।
বেচারা লোকটি কোনোরকমে রাতটা কাটিয়ে সকালে সূর্য উঠতেই বাড়ি থেকে বের হলো। ভেবে কুল পাচ্ছিলো না কী করবে সে। একবার ভাবে এই দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও পালিয়ে যাবে। তাতে অন্তত এই জটিল পরিস্থিতি আর মানুষগুলোর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। কিন্তু তারচেয়ে সহজ বুদ্ধি হলো আগের সিদ্ধান্তে ফিরে যাওয়া মানে সমুদ্রে ডুবে মরা। হয়তো তাতে কোনো উপায় বেরিয়ে আসবে। যেই চিন্তা সেই কাজ। সোজা সমুদ্রে গিয়ে ডুবে মরতে চাইলো। ঘটনাক্রমে আজও নেই সী-মোরগ আকাশে উড়ছিল। সে দেখলো লোকটি ডুবে মরার চেষ্টা করছে। ভাবলো এর বদ অভ্যাস হয়ে গেছে। লোভে পেয়েছে ওকে। মরুক গে। এরকম মানুষের মরে জাহান্নামে যাওয়াই ভালো।
সী-মোরগ আর নীচে এলো না। উপর থেকেই দেখছিলো। যখন দেখলো বিশাল বিশাল ঢেউ তার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে সী-মোরগ ভয় পেয়ে গেল এবং নীচে নেমে এসে তাকে উদ্ধার করলো এবং বললো: আবারও মরতে এসেছো তুমি? যাও! মরতেই যদি চাও এমন জায়গায় গিয়ে ডুবে মরো যেখানে আমি তোমাকে দেখতে পাবো না। লোকটি: আমি মাছের লোভে আসি নি। কেন এসেছি শোনো। এই বলে বাদশার পুরো ঘটনা সী-মোরগকে খুলে বললো। সূত্র:পার্সটুডে