ইরানিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে বাংলা নববর্ষ উদযাপন
পোস্ট হয়েছে: এপ্রিল ১৩, ২০১৬
![news-image](https://www.iranmirrorbd.com/wp-content/uploads/2016/04/IMG_2256.jpg)
বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৬ ঢাকার ধানমন্ডিতে অবস্থিত ইরানিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে বাংলা নববর্ষ ১৪২৩ উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে এক উদ্যাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবিদ ও সাহিত্য ব্যক্তিত্ব অধ্যাপিকা আসমা আব্বাসী ও ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর জনাব সাইয়্যেদ মূসা হোসেইনী। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বিদ্যালয়ের ভাইস প্রিন্সিপাল ড. জহির উদ্দিন মাহমুদ। পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে শিশুরা ‘এসো হে বৈশাখ…’, ‘তাক্ডুম তাক্ডুম বাজে…’, ‘পরের জাগা পরের জমি…’ ও ইরানি নওরোযের ফারসি গান এবং ‘কাঁঠাল’, ‘খুকী ও কাঠবিড়ালি’ ছড়া পরিবেশন করে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আঁকা পেইন্টিং দিয়ে বিদ্যালয় প্রাঙ্গন সাজানো হয়।
অধ্যাপিকা আসমা আব্বাসী তাঁর বক্তৃতায় নববর্ষে জীবনকে সুন্দরভাবে গড়া, নিজে ভাল হওয়ার পাশাপাশি অন্যকে আল করার প্রচেষ্টা চালানো, সুন্দর ব্যবহার, পারস্পরিক সহমর্মিতার মাধ্যমে সবার জীবনকে আলোকিত করার আহ্বান জানান। তিনি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানে তাঁর সেমিনারে অংশগ্রহণের স্মৃতি ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ইরান হল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী দেশ, গোলাপের দেশ। তিনি স্কুলের পাঠসূচিতে ধর্মের শক্তিশালী ভিত্তি থাকার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন ও সবক্ষেত্রে মহানবী (সা.)-এর আদর্শকে অনুসরণের আহ্বান জানান। তিনি মহানবীর সুন্নাতের অনুসরণে ‘সবাইকে সালাম দেয়া’ ও ‘গাছ লাগানোর’ জন্য উৎসাহিত করেন। অনুষ্ঠানে মিসেস আব্বাসী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের কবিতা এবং ফারসিতে একটি মুনাজাত পাঠ করেন।
জনাব সাইয়্যেদ মূসা হোসেইনী তাঁর বক্তৃতায় বলেন, বাংলা নববর্ষের গানে যে জ্বরা ও গ্লানি মুছে যাওয়ার কামনা ফুটে উঠেছে ইরানি নববর্ষের চেতনাও একই। পুরাতন ও জীর্ণতাকে অতিক্রম করে নতুন ও শুভকে ধারণ করাই নববর্ষের মুখ্য চেতনা। প্রকৃতিতে নতুন সাজ, নতুন পত্রপল্লব সঞ্চার আমাদের মানবপ্রকৃতি ও মানবচরিত্রকে ভাল দিয়ে নতুনভাবে সাজানোর বার্তা পৌঁছে দেয়। তিনি ইরানিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ সকলের জন্য আল্লাহর কাছে তৌফিক কামনা করেন ও নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান।
ড. জহির উদ্দিন মাহমুদ তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ৯৯২ হিজরি মোতাবেক ১৫৫৬ সালে সম্রাট আকবরের শাসনামলে ইরানি গবেষক ফতেহ্উল্লাহ সিরাজী বাংলা সনের রূপরেখা প্রদান করেন যা রাষ্ট্রীয়ভাবে চালু হয়। পরবর্তীকালে ১৯৬৬ সালে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে এর কিছু হিসাব সংস্কার করে প্রতি বছর ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন করা হয়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ১৯২৭ সালে ‘এসো হে বৈশাখ…’ গান রচনা করে নববর্ষের আগমনকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, বাঙালিরা এখন বসন্তের আগমনে পহেলা ফাল্গুন ও নববর্ষে পহেলা বৈশাখ দু’টি উৎসব পালন করে থাকে। তিনি বলেন, পবিত্র কুরআনে যে বলা হয়েছে- ‘তিনি সূর্যকে প্রচণ্ড দীপ্তি ও চাঁদকে ¯স্নিগ্ধতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন বছর গণনা ও হিসাবের জন্য’ (সূরা ইউনূস : ৬) এবং ‘সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে আল্লাহ ১২টি মাস নির্ধারণ করেছেন’ (সূরা তওবা : ৩৬)- এর মাধ্যমে আমরা প্রকৃতিতে রাত, দিন, বছরের আবর্তন ও পরিবর্তন সম্পর্কে মহান আল্লাহর বাণী সম্পর্কে সচেতন হই। তিনি ‘শুভ নববর্ষে’ শিক্ষার্থীদের সকল শুভ ও কল্যাণ অর্জন ও ধারণ করার প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানান এবং সকল কল্যাণের উৎস মহান আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ কামনা করেন।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে অধ্যাপিকা আসমা আব্বাসীকে পুস্তক উপহার দেন ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর সাইয়্যেদ মূসা হোসেইনী।