ইরানকে যেভাবে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থেকে সুরক্ষা করবে ইউরোপ
পোস্ট হয়েছে: মে ২০, ২০১৮

ইরানের পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশটির ওপর নতুন করে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আমেরিকা। ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা থেকে আমেরিকা বেরিয়ে গেলেও সমঝোতায় অটল থাকার কথা জানিয়েছে বাকি দেশগুলো। একইসাথে ইরানে ব্যবসা করা যেসব প্রতিষ্ঠান মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে সেগুলোকে সুরক্ষা করা হবে বলে তেহরানকে আশ্বস্ত করেছে সমঝোতায় স্বাক্ষরকারী ইউরোপীয় তিন দেশ।
পরমাণু সমঝোতা থেকে আমেরিকা বেরিয়ে যাওয়ার পর বাকি দেশগুলোর করণীয় ঠিক করতে মঙ্গলবার সকালে ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা ফেডেরিকা মোগেরিনির সঙ্গে বৈঠক করেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ। এদিন রাতে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন, জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো ম্যাস ও ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাঁ-ইভেস লা দ্রিয়াঁ’র সঙ্গেও বৈঠক করেন জারিফ।
বৈঠকে সমঝোতা থেকে আমেরিকা বেরিয়ে যাওয়ার পর বাকি দেশগুলো তেহরানের স্বার্থ রক্ষা করতে পারবে কিনা- ইউরোপীয় দেশগুলোর কাছে তার নিশ্চয়তা চান ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী। পাশাপাশি ইরানের সঙ্গে ইউরোপীয় জোট বাণিজ্য সম্প্রসারণ অব্যাহত রাখবে কিনা তাও জানতে চান তিনি।
এসময় নতুন করে দেওয়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থেকে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে সুরক্ষা করা হবে বলে ইরানকে আশ্বস্ত করেন তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তারা ইরানের স্বার্থ রক্ষায় দেশটির সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে কিছু কার্যক্রমের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করেন।
নিজের প্রথম বৈঠক শেষে জারিফ বলেন, সঠিক পথেই তাদের আলোচনা এগিয়ে যাচ্ছে। বৈঠক সুন্দর ও গঠনমূলক হয়েছে।
জারিফের সঙ্গে বৈঠক শেষে মোগেরিনি বলেন, ইরানের পরমাণু সমঝোতা বাঁচিয়ে রাখতে বহুমাত্রিক কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্মত হয়েছে। এসব কার্যক্রমের মধ্যে যেসব বিষয় আওতাভুক্ত থাকবে তার রূপরেখাও তুলে ধরেন তিনি।
পরমাণু সমঝোতা বাঁচাতে ইরানের তেল ও গ্যাস পণ্য বিক্রি অব্যাহত রাখা, ইরানের সঙ্গে কার্যকর ব্যাংকিং লেনদেন সম্পাদন, সমুদ্র, ভূমি, আকাশ ও রেল পরিবহন সম্পর্ক অব্যাহত রাখা, ইরানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন করে বিনিয়োগ করা, আর্থিক ব্যাংকিং, বিমা ও বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে দেওয়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বাতিলের লক্ষ্যে একটি কর্মকৌশল ঠিক করার বিষয়ে আলোচনা হয়।
গত ৮ মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকাকে ইরানের পরমাণু সমঝোতা থেকে বের করে নেন। অথচ ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত এ সমঝোতা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে অনুমোদিত হওয়ার ফলে এটি আন্তর্জাতিক আইনে পরিণত হয়েছিল যা মেনে চলতে প্রতিটি দেশ বাধ্য। মার্কিন সরকার এ সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গেলেও ইউরোপীয় দেশগুলো এটি মেনে চলার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে ইরানকেও এ সমঝোতা বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে। তবে তেহরান সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছে, তার স্বার্থ রক্ষিত না হলে অচিরেই সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গিয়ে পূর্ণ মাত্রায় শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি চালু করবে ইরান। – তেহরান টাইমস।