ইমাম খোমেইনী (র.)-এর তুরস্কে নির্বাসিত জীবন
পোস্ট হয়েছে: জানুয়ারি ২২, ২০১৪

কোম আবার অবরুদ্ধ হলো। ১৩৪৩ ইরানী সালের ১৩ই আবান (১৯৬৪ সালের ৪ নভেম্বর) শাহের সেনারা কোম ঘেরাও করে ইমাম খোমেইনীকে গ্রেফতার করে। ইমামকে সরাসরি মেহরাবাদ বিমানবন্দরে নিয়ে সেখান থেকে তাঁকে তুরস্কের ইজমিরে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেয়া হলো। সকল বেলা কোমের অধিবাসীদের ঘর থেকে বের হতে দেয়া হলো না। সৈন্যরা ধর্মীয় নেতাদের বাড়িও ঘেরাও করল। ইমামের জ্যেষ্ঠপুত্র মোস্তফা খোমেইনীও গ্রেফতার হলেন। তাঁকে তেহরানের কারাগারে বন্দি করা হলো। প্রায় দু’মাস পর তিনিও তুরস্কে নির্বাসিত হলেন।
তেহরানের তুর্কী দূতাবাসে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সমর্থনে তারাবার্তা আসতে লাগল। এ সময়ে প্রধানমন্ত্রী হাসান আলী মনসুরকে ইসলামী কোয়ালিশন আন্দোলনের জনৈক সদস্য হত্যা করল। উল্লেখ্য, আলী মনসুরই ক্যাপিটিউলেশন আইন প্রণয়ন ও ইমাম খোমেইনীর নির্বাসনের জন্য দায়ী ছিল। ইরানের মুসলিম জনগণ ইমাম খোমেইনীর নির্বাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিটির কাছে নিম্নোক্ত চিঠি পাঠাল : ‘আমরা ইরান সরকারের মানবাধিকারবিরোধী কার্যকলাপের প্রতি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমরা আশা করি, জাতিসংঘ এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ ব্যাপারে ৫ নভেম্বরের নিউইয়র্ক টাইমস, লন্ডন টাইমস এবং লা মন্ডে পত্রিকায়ও খবর বের হয়- সাভাকের পরামর্শ অনুযায়ী নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা হিসাবে ইরানের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দকে নির্বাসনে প্রেরণ করা হয়েছে। শীর্ষস্থানীয় ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এখন জেলখানায় এবং অন্য নেতারা নিজ নিজ বাড়িতে পুলিশ কর্তৃক নজরবন্দি।
সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, তুরস্কের ইজমিরে ইমাম খোমেইনীর নির্বাসন। ইরানী সংবিধানের ১৪ নং ধারা লঙ্ঘন করে এটা করা হয়েছে। উক্ত ধারায় বলা হয়েছে যে, আইনানুগ বিধান ছাড়া কোন ইরানী নাগরিককে নির্বাসিত করা যাবে না অথবা জোর-জবরদস্তি করে বাড়ি থেকে অন্যত্র বসবাস করার জন্য বহিষ্কার করা যাবে না। ১৯৬২ সাল থেকে ইমাম খোমেইনী বিদ্রোহের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে কোমে পুলিশের হাতে নজরবন্দি ছিলেন। কাজেই পরবর্তীকালে উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য তিনি কি করে দায়ী হতে পারেন?
আরো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার এই যে, তুরস্ক সরকার এ ধরনের এক মহান ধর্মীয় নেতাকে নিজ দেশে গ্রহণ করে তাঁর গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করছে। এ দিকেও আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী আপনারা এ বিষয়ে যথারীতি তদন্ত চালিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন বলে আমরা আশা রাখি। তারিখ ১৫ এপ্রিল, ১৯৭৫।’
তুরস্ক সরকার চাপের মুখে ইমাম খোমেইনীকে ইরানী শাসকগোষ্ঠীর সহায়তার ইরাকে পাঠিয়ে দেয়। ইরাকী সরকার শর্তাধীনে তাঁকে গ্রহণ করতে রাজি হয়। শর্তগুলো ছিল, ইমাম খোমেইনী কতদিন ইরাকে নির্বাসনে থাকবেন, সে দেশে তাঁর ভবিষ্যৎ কী হবে সে সম্পর্কেও ইরান সরকারের নাক গলাবার কোন অধিকার থাকবে না। তাছাড়া ইরাকে তাঁর কার্যকলাপ সম্পর্কে ইরান কোন হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
(নিউজলেটার, নভেম্বর ১৯৯১)