বৃহস্পতিবার, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

English

ইমাম খোমেইনী (র.)-এর কবিতার সংকলন

পোস্ট হয়েছে: জুলাই ১৭, ২০১৮ 

দিওয়ানে ইমাম
ইমাম খোমেইনী (র.)-এর কবিতার সংকলন
অনুবাদ : ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী
বাংলা অনুবাদ সম্পাদনা : ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান
প্রকাশক : রিয়াজ খান
রোদেলা প্রকাশনী
রুমি মার্কেট (২য় তলা) ৬৮-৬৯, প্যারিদাস রোড
(বাংলাবাজার), ঢাকা-১১০০
প্রকাশকাল : জানুয়ারি ২০১৮
মূল্য : ৬০০ টাকা।
হযরত আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ আল-মুসাভী আল-খোমেইনী ইরানের রাজধানী তেহরান থেকে ২২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত খোমেইন শহরে ১৩২০ হিজরির ২০ জমাদিউস সানী মোতাবেক ১৯০১ সালের ২৩ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। এ মহান ব্যক্তিত্বের পিতার নাম আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ মোস্তফা মুসাভী এবং মাতার নাম হাজেরা। তাঁর পিতা খুবই উঁচু স্তরের আলেম ছিলেন। ইমাম খোমেইনীর প্রপিতামহের নাম সাইয়্যেদ দ্বীন আলী শাহ। তিনি কাশ্মীরের অধিবাসী ছিলেন এবং সেখানেই শাহাদাত বরণ করেন। ইমাম খোমেইনীর মাতা হাজেরাও ছিলেন আলেম পরিবারের সন্তান।
ইমাম রুহুল্লাহ মুসাভী খোমেইনী ইরানের ইসলামি বিপ্লবের অবিসংবাদিত নেতা। তিনি বিশ^সভ্যতার অন্যতম লালনভুমি ইরানে আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন রাজতন্ত্রের উত্তরাধিকারী পাহলভী বংশকে উৎখাত করেন।
১৯৪১ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত ইমাম খোমেইনী ইরানের তৎকালীন শাসক রেযা শাহ পাহলভীর স্বৈরাচারী শাসননীতি ও ধর্মবিরোধী কর্মকাকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করেন। ফলশ্রুতিতে ১৯৬৩ সালের ৫ জুন থেকে তাঁকে কয়েক দফা গ্রেফতার করা হয় ও পরবর্তীকালে ১৯৬৪ সালের ৪ নভেম্বর তুরস্কে নির্বাসনে পাঠানো হয়। ইমাম খোমেইনী তুরস্ক, ইরাক ও সবশেষে ফ্রান্সে প্রায় ১৫ বছর নির্বাসনে থাকা অবস্থায়ই ইরানে বিপ্লবের নেতৃত্ব দেন। তাঁর নেতৃত্বে জনগণের অব্যাহত সংগ্রামের ক্রান্তিকাল অতিক্রম করে ১৯৭৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ইমাম খোমেইনী দেশে ফিরে আসেন ও ১১ ফেব্রুয়ারি ইরানে ইসলামি বিপ্লব বিজয় লাভ করে। ১৯৮৯ সালের ৩ জুন ইমাম খোমেইনী ইন্তেকাল করেন।
বস্তুত সমকালীন ইতিহাসের সর্বাধিক আলোচিত ইসলামি বিপ্লবের সফল নেতা হিসেবে বিশ^ব্যাপী ইমাম খোমেইনীর পরিচয় তিনি একজন রাজনৈতিক ও বিপ্লবী নেতা। কিন্তু এটিই কি তাঁর আসল পরিচয়? প্রকৃতপক্ষে ইমাম খোমেইনী শুধু একজন সংগ্রামী ব্যক্তিত্বই ছিলেন না; বরং সুফিতত্ত্ব ও নীতিশাস্ত্রের বিশেষজ্ঞ হিসেবেও তিনি ছিলেন এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। মানবজীবনে শিল্প-সংস্কৃতি ও সাহিত্যের ভূমিকা সম্পর্কেও ইমাম খোমেইনী সচেতন ছিলেন। এক্ষেত্রেও তিনি রেখে গেছেন মূল্যবান নির্দেশনা। ইমাম খোমেইনীর ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বাইরের দুনিয়া খুব কমই জানে। এর কারণ, তাঁর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিই সাধারণত ফারসি থেকে অনূদিত হয়ে বাইরে এসেছে। তদুপরি ইমাম খোমেইনীর আরেকটি পরিচয় ১৯৮৯ সালে ৮৮ বছর বয়সে তাঁর ইন্তিকালের আগ পর্যন্ত খোদ ইরানের সমাজও জানত না। সেটি হলো তাঁর কবিত্ব। এই বইয়ের ভূমিকা ও তৎসঙ্গে তাঁর পুত্রবধূ ফাতেমার একটি পত্র পাঠ করলে বুঝা যাবে, কীভাবে এই রহস্যটি এতদিন গোপন ছিল এবং কীভাবে ইমাম খোমেইনী কবি ও কবিতা তাঁর নিত্যসঙ্গী ছিল! ইমাম খোমেইনীর ইন্তেকালের পর ১৩ জুন, ১৯৮৯ তাঁর পুত্র আহমাদ খোমেইনী প্রথমবারের মতো তাঁর কবিপ্রতিভার কথা প্রকাশ করেন। ইমাম খোমেইনী (র.) বিভিন্ন সময়ে এ জাতীয় মরমি কবিতা রচনা করেছেন যা তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয় নি; তিনি এসব কাব্যকীর্তি তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশের অনুমতি দেন নি। তাঁর রচিত কবিতা ও রুবাই সব মিলিয়ে প্রায় তিনশ’। এই গ্রন্থে ইমামের লেখা ১৪৭টি গযল, ১১৮টি রূবাই, ২টি মুসাম্মাত, ১টি তারজী’ বান্দ, কয়েকটি কিতআ ও কতিপয় বিক্ষিপ্ত বয়েত সংকলিত হয়েছে। এতে অন্তর্ভুক্ত কবিতাসমূহের আধ্যাত্মিক ও রূপক শব্দসমূহের টীকা লিখেছেন আলী আকবার রাশাদ।
আমরা আশা করি এই কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে ইমাম খোমেইনীর বিশাল ব্যক্তিত্বের একটি অনুদ্ঘাটিত দিগন্ত উন্মোচিত হবে। ইমাম খোমেইনীকে সুফিতাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়নের বাতায়ন খুলে যাবে। তাতে আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা বাংলার কবি ও কবিতা এবং সাহিত্যের যোদ্ধা ও বোদ্ধারা একটি নতুন দিক দর্শন লাভ করতে সক্ষম হবেন।