বিশিষ্টজনদের দৃষ্টিতে ইমাম খোমেইনী (রহ.)
পোস্ট হয়েছে: ডিসেম্বর ২৬, ২০১৩

মুসলমান এবং বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের নেতা, ইসলামী ইরানের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর ইন্তেকাল তাঁর কোটি কোটি অনুসারীকে শোকাকূল করে তোলে। যারা ইমামের পথ ও তাঁর আদর্শিক নীতি অনুসরণ করত এবং আন্তরিকভাবে ভালোবাসত তারা তাঁর মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়ে। ইসলামী বিপ্লবের নেতার মৃত্যুতে তাঁর মহান ব্যক্তিত্বের সঙ্গে পরিচিত বিশ্বে শোকের ছায়া নামে। সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও বৈজ্ঞানিক ব্যক্তিত্বরা তাঁর সম্পর্কে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে মন্তব্য করেন। এমনকি তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর কিছু শত্রুও লজ্জিত হয়। এখানে ইমামের মহান ব্যক্তিত্ব এবং ইসলামী চিন্তাধারার পুনরুজ্জীবন ও বিশ্বব্যাপী ইসলামী বিপ্লবে তাঁর ভূমিকা সম্পর্কে বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের কিছু মতামত তুলে ধরা হলো। এসব মতামতের মধ্যে কোন কোনটি ইমামের মৃত্যুর আগেই করা হয়েছিল।
‘লেবানন এবং সারা বিশ্বের মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে, বিশ্বের দাম্ভিক শক্তিসমূহের আধিপত্য থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য ইসলামী ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালাতে হবে এবং ইমাম খোমেইনীর নেতৃত্বকে অনুসরণ করতে হবে। বিশ্বের নির্যাতিত জনগণ ইরানের ইসলামী বিপ্লবের ওপর তাদের আশা-আকাক্সক্ষা ন্যস্ত করেছে।’- আহমদ জাকি তাফাহি, লেবাননী চিন্তাবিদ
‘ইমাম খোমেইনী শুধু তাঁর জাতির ইতিহাসের ধারাই পরিবর্তন করেননি, তিনি ২০ শতকের শেষার্ধের ইতিহাসে তার প্রত্যক্ষ প্রভাবও রেখেছেন।’- ইরানে নিযুক্ত আরব সাহারা প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রদূত (১৯৯১)
‘ইমাম খোমেইনী একজন খাঁটি মুসলমান। তিনি আমাদের দ্বীনি ভাই। তিনি আমাদের মতোই ইসলামের পতাকাতলে থেকেই সামনে অগ্রসর হচ্ছেন।’- আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শায়েখ, মিশর।
‘বর্তমান বিশ্বে একটি মাত্র ইসলামী সরকার আছে এবং সেটা হচ্ছে ইমাম খোমেইনীর সরকার। কারণ, এই একমাত্র সরকারই ইসলামী শরীয়ার প্রতিটি বিধান বাস্তবায়ন করেছে। অবশিষ্ট আর কোন সরকারই ইসলামী সরকার নয়। ফিলিস্তিনী চিন্তাবিদরা বিশ্বাস করেন, ইমাম খোমেইনী একজন বুদ্ধিমান, জ্ঞানী ও সাহসী মুজাহিদ নেতা, যিনি বিশ্বের মুসলমানদের নেতৃত্ব দিতে পারেন।’- শেখ ইউসুফ জিরাইল, ফিলিস্তিনী চিন্তাবিদ
‘আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেইনী ইসলামী উম্মাহর ইমাম হওয়ার যথেষ্ট দাবি রাখেন। আমার মতে, তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি বর্তমান মুসলিম বিশ্বের সকল নেতার চেহারা থেকে অপমান, সংকীর্ণতা ও অলসতার চিহ্ন মুছে ফেলেছেন। তিনি মুসলিম ও অমুসলিম জাতিসমূহের মধ্যে ইসলামী মূল্যবোধ পুনরুজ্জীবিত করেছেন। নিশ্চয়ই ইতিহাস এসব বিষয় চিরকালের জন্য রেকর্ড করে রাখবে। তিনি ইমাম আলী (আ.)-এর জীবন্ত উদাহরণ।’- আলজেরিয়ার শিক্ষা ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী (১৯৯১)
‘এটা নিঃসন্দেহ যে, বিপ্লবের নেতা-যিনি একজন আলেম-ইরানী বিপ্লবের বিজয় অর্জনের মূল ব্যক্তি। বিশ্বের সকল মুক্তিকামী ও নির্যাতিত মানুষের হৃদয়ে তিনি আলোড়ন তুলেছেন। তিনি শুধু ইরানের নন, সারা বিশ্বের মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সকল নির্যাতিত মানুষের নেতা। তারা তাঁকে একজন মুক্তিদূতরূপে গণ্য করে।’ –কাপুচি, ফিলিস্তিনী আর্চ বিশপ।
‘পাকিস্তানের মুসলমানরা ইরানের ইসলামী বিপ্লবের বলিষ্ঠ সমর্থক। পাকিস্তানের সভা সমাবেশগুলোতে ইমাম খোমেইনী ও বিপ্লব আলোচনার দুটি প্রধান বিষয়। বিশ্বের দাম্ভিক শক্তিসমূহ এটা ভালো করে জানে, ইরানের ইসলামী বিপ্লব এবং ইমাম খোমেইনীর প্রতি বিশ্বের নির্যাতিত জাতিসমূহের সমর্থন রয়েছে।’- আল মোন্তাজেরী ধর্মীয় কেন্দ্রের প্রধান, পাকিস্তান
‘ইরানের ইসলামী বিপ্লব সত্যিকারের মানুষ ও সমাজের একটি নয়া দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছে। ইরানের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্য জগতের শত্রুতার এটাই কারণ। ইমাম খোমেইনী ইরানীদের জীবনকে নতুন করে অর্থবহ করে তুলেছেন।’- রজার গারুদী, ফরাসী বুদ্ধিজীবী
‘ইমাম খোমেইনীর নেতৃত্বে সংঘটিত ইরানের মহান ইসলামী বিপ্লব আমাদের জন্য মহা শিক্ষা নিয়ে এসেছে। এখনও যদি আমরা ঘুম থেকে না জাগি তাহলে শত্রুরা আমাদের মতবিরোধকে কাজে লাগাবে এবং আমাদের ওপর নির্যাতন চালাবে।’- মাওলানা আতাহারী, কাশ্মীরের একজন সুন্নি মুফতি।
‘কেবল ইসলাম ও ইমাম খোমেইনীর পথ অনুসরণ করলেই ফিলিস্তিনী বিপ্লব সাফল্য লাভ করবে। ইসলামী বিপ্লব থেকে অনেক দূরে থাকার কারণে এবং অঞ্চলের নতজানু ও প্রতিক্রিয়াশীল নেতাদের বিশ্বাসঘাতকতার জন্য ফিলিস্তিনী বিপ্লব এখনও সাফল্য লাভ করেনি, যদিও হাজার হাজার শহীদ তাঁদের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন।… আমরা ঘোষণা করছি, ইমাম খোমেইনী হচ্ছেন সারা বিশ্বের মুসলমানদের, বিশেষ করে অধিকৃত অঞ্চলের নেতা… আমরা তাঁর প্রতি আবারো আনুগত্য প্রকাশ করছি। আল-কুদস মুক্ত করা এবং ফিলিস্তিনী জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রচেষ্টারত মুসলমানদের জন্য ইরান হচ্ছে আজ একটি শক্তিশালী ঘাঁটি।’- শেখ ইউসুফ সানি, জুমআর জামায়াতের ইমাম, ফিলিস্তিন।
‘আমি ইরানীদের অনুরোধ করছি, তারা যেন বিপ্লবের প্রতি সর্বাত্মক যত্নবান থাকেন। ইমাম উপ¯হাপিত এই বিপ্লবের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যাতে সাফল্য লাভ করে সে বিষয়টির প্রতি আপনারা পরিপূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে দৃষ্টি রাখবেন এবং সেগুলোর প্রতি গুরুত্ব দেবেন। এই বিপ্লবকে সংরক্ষণ করা, এমনকি আপনাদের নিজেদের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করতে হবে। কোন ব্যক্তির জীবনের চেয়েও এই বিপ্লবের গুরুত্ব অনেক বেশি বলে এর প্রতি যত্নবান হতে হবে। কারণ, একজন ব্যক্তির আশা-আকাক্সক্ষা থাকে তার নিজের মাঝেই সীমাবদ্ধ।’- মুনির শফিক, ফিলিস্তিনী ইসলামী চিন্তাবিদ।
‘ইমাম খোমেইনী এবং ইরানী জাতি একটি মহান ঐতিহাসিক কাজ করেছেন। আমার মতে, একজন পশ্চিমা ও অমুসলিম ব্যক্তি হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, আজকের দুনিয়ার এভাবে একটি ধর্মীয় আদর্শভিত্তিক বিপ্লব সংঘটিত হওয়া এক অলৌকিক ঘটনা।’- রবার্ট কালসন, কানাডীয় বিজ্ঞানী
‘ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার সহায়তায় ও ইমামের নেতৃত্বে ইরানী জাতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে। এই দায়িত্ব পালন করে যদি তারা মানব জীবনের সর্বক্ষেত্রে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা কায়েমে সফল হয় তা হলে মুসলিম দেশসমূহ তাদের পথ অনুসরণ করবে।’- হামিদ আলগার, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।
‘আয়াতুল্লাহ খোমেইনীর নীতিবোধ থেকে উৎসারিত আওয়াজের কারণেই ইরানের ইসলামী বিপ্লব মর্যাদার দাবিদার।’- উইলিয়াম ওয়ারসি, মার্কিন লেখক ও সাংবাদিক
‘ইরানের ইসলামী বিপ্লব বিশ্বের আশ্রয়হীন লোকদের আশ্রয়স্থল এবং ইমাম খোমেইনীই হচ্ছেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি নিপীড়িত ও বঞ্চিতদের পক্ষে। তিনি যালিমদের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় কথা বলেন। ইমামের প্রতি আকর্ষণ এ রকম যে, শিয়া-সুন্নি নির্বিশেষে সকল মুসলমান তাঁর সত্যবাদিতায় বিশ্বাস করেন।’- হায়দার আলী, হায়দরাবাদ জুমআর জামায়াতের ইমাম, পাকিস্তান।
‘ইমাম খোমেইনী শুধু ইরানের নেতাই নন, তাঁর নাম শুনে দক্ষিণ আফ্রিকার নির্যাতিত জনগণের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। বিশ্বের জেনে রাখা উচিত, ইমাম খোমেইনী দুনিয়ার নিপীড়িত মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক।’- আবদুল্লাহ বিদাত, দক্ষিণ আফ্রিকার মুসলিম যুবনেতা।
‘বর্তমানে ইমাম খোমেইনীর শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের সুখ্যাতি আমেরিকা, এমনকি শিশুদের মধ্যে সম্ভবত এ কারণে ছড়িয়ে পড়েছে যে, তিনি বিশ্বের সামনে ইসলামের শক্তি এবং পাশ্চাত্যের দুর্বলতা প্রমাণ করেছেন। ইমাম খোমেইনীর নেতৃত্বের বদৌলতে এবং মুসলিম ইরানী জাতির সাহস ও প্রতিরোধের ফলেই ইরানে ইসলামী বিপ্লবের সাফল্য অর্জিত হয়েছে।’- শেখ মুহাম্মাদ জাভেদ আলশারী, জুমআর জামায়াতের ইমাম, ডেট্রয়েট, যুক্তরাষ্ট্র
‘তাঁর দেশে এবং বিশ্বের বিশাল এলাকায় তিনি (ইমাম খোমেইনী) যে কাজ করেছেন তা অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও গভীর চিন্তায় রেখে তাঁর সম্পর্কে কারো মতামত প্রকাশ করা উচিত।’- পোপ দ্বিতীয় জন পল।
‘ইমাম খোমেইনী গৌরব নিয়ে এ পৃথিবীতে বেঁচেছিলেন এবং গৌরবের সঙ্গেই এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। তিনি বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের সামনে বিশ্বাস, দয়া ও সহজ সরলতার শ্রেষ্ঠতম দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন।’- হাফিজ আল-আসাদ, সিরিয়ার প্রেসিডেণ্ট (১৯৯১)
‘ইমাম খোমেইনীর নাম ইরানের ইতিহাসে নয়া অধ্যায়ে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।’- এরিক হোনেকা, জার্মানি
‘ইমাম খোমেইনীর মৃত্যু বিশ্বের স্বাধীনতাকামী মানুষকে শোকাভিভূত করেছে।’- আর্নেস্টো কার্ডিনাম, নিকারাগুয়ার যুদ্ধবিশারদ
(নিউজলেটার, জুন ১৯৯১)