আয়াতুল্লাহ বেহেশতী ও তাঁর ৭২ সাথির শাহাদাত বার্ষিকী
পোস্ট হয়েছে: ডিসেম্বর ২৬, ২০১৩

২৮ জুন হচ্ছে আয়াতুল্লাহ ড. সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ হোসাইন বেহেশতী এবং ইমাম খোমেইনীর আরো বাহাত্তর জন নিবেদিতপ্রাণ অনুসারীর শাহাদাত বার্ষিকী। ১৯৮১ সালের এই দিনে ইসলামী বিপ্লবের শত্রুদের পেতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে তাঁরা শহীদ হন। ইরানের ইসলামী বিপ্লবকে নস্যাৎ করার জন্য বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী শক্তিবর্গের দেশীয় এজেন্ট ও মুনাফিকরা প্রথম থেকেই ইমামের বিশ্বস্ত সহকর্মী ও অনুসারীদের ওপর হামলা চালিয়ে আসছিল। ১৯৮১ সালের ২৮ জুন এই মুনাফিকরা তেহরানের ইসলামী রিপাবলিকান পার্টির সদর দফতরে বোমা পেতে রাখে। দুটি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণে শহীদ হন ইরানের প্রধান বিচারপতি বিপ্লবের অন্যতম দার্শনিক, সংগঠক ও ইমামের প্রিয় ছাত্র আয়াতুল্লাহ ড. সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ হোসাইন বেহেশতী। শাহাদাতপ্রাপ্তদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন হুজ্জাতুল ইসলাম, পিএইচডি ডিগ্রিধারী ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে প্রথম কাতারের নেতা। এর মধ্যে ৩০ জনের অধিক ছিলেন পার্লামেন্ট সদস্য। এই বোমা হামলার প্রধান লক্ষ্য ছিল বিশিষ্ট আয়াতুল্লাহ ড. বেহেশতী, যিনি ছিলেন ইরানের ইসলামী বিপ্লবের গৌরবোজ্জ্বল সাফল্যে অংশগ্রহণকারী এক দৃঢ়চিত্ত ব্যক্তিত্ব। আয়াতুল্লাহ বেহেশতীর শাহাদাত প্রসঙ্গে ইমাম খোমেইনী বলেছেন : ‘শহীদ বেহেশতী মজলুমের জীবনযাপন করেছেন আর মৃত্যুবরণ করলেন মজলুম হয়ে। তিনি ছিলেন ইসলামের দুশমনদের চক্ষুশূল।’ শহীদ বেহেশতী ইসলামিক রিপাবলিকান পার্টিকে দিয়েছিলেন উৎসাহ ও পথনির্দেশনা। এই পার্টি ছিল ইরানের ইসলামবিরোধী চক্রের মোকাবিলায় প্রতিরোধের কেন্দ্রবিন্দু। শহীদ বেহেশতী সম্পর্কে ইরানীরা ইমাম খোমেনীর একটি উক্তি স্মরণ করে : ‘তিনি নিজেই ছিলেন স্বয়ং একটি জাতি।’ আয়াতুল্লাহ বেহেশতী ও তাঁর সঙ্গী বাহাত্তর জনের কোরবানি ইসলামী মূলনীতিকে শক্তিশালী করতে প্রেরণা জুগিয়েছে।
এই বোমাবাজী শুধু সাম্রাজ্যবাদী ও মুনাফিকগোষ্ঠীর শয়তানি পদচারণার একটি পদক্ষেপ মাত্র। শয়তানের উদ্দেশ্য হলো এই ধরনের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের মাধ্যমে খোদায়ী প্রেরণায় জাগ্রত ইরানের বিপ্লবী সরকারকে উৎখাত করা। এই ধরনের ষড়যন্ত্র যদি অন্য কোন দেশে সংঘটিত হতো তাহলে সেই দেশের সরকারই হয়তো উৎখাত হয়ে যেত। কিন্তু নতুন প্রতিষ্ঠিত ইসলামী প্রজাতন্ত্র এই ধরনের ষড়যন্ত্রের মোকাবিলায় অথবা ইরাকের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধে নিজ ভূখণ্ডের হাজার হাজার কিলোমিটার সীমান্ত রক্ষার ক্ষেত্রে ছিল যথেষ্ট শক্তিশালী। আল্লাহর অশেষ রহমত, ইমাম খোমেইনীর বিজ্ঞ নেতৃত্ব এবং ইরানী জনগণের ঐক্য ইরানের ইতিহাসে নতুন যুগের সূচনা করেছে।
আয়াতুল্লাহ বেহেশতী ও অন্য বাহাত্তর জন সরকারি কর্মকর্তার শাহাদাত ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে আনলেও তাদের স্থান দখল করেছেন অন্য দায়িত্বশীল এবং প্রতিশ্রুতিশীল মুসলিম ভাইয়েরা। শহীদানের জানাযা অনুষ্ঠান ছিল অতিশয় গৌরবোজ্জ্বল। হাজারো মানুষের ভীড়ে তা ছিল অসাধারণ। পাশ্চাত্যের সংবাদমাধ্যমগুলো এই জনসমাগমকে ইচ্ছাকৃতভাবে বর্ণনা করেছে সামান্য এক শবযাত্রা হিসাবে। এই ঐতিহাসিক জানাযা মিছিলে বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছিল ‘আমেরিকা মুর্দাবাদ’, ‘মুনাফিকরা মুর্দাবাদ’, ‘লাখো বেহেশতী এখনো জাগে ইরানে’ প্রভৃতি স্লোগান।
১৯৮১ সালের ২৮ জুনের ঘটনার পর আরো একটি বিপ্লববিরোধী সন্ত্রাস সংঘটিত হয়। এই ঘটনায় ইসলামী পরামর্শ পরিষদের ২৭ জন প্রতিনিধি শাহাদাত বরণ করেন এবং আরো অনেকে আহত হন। এইসব ঘটনা আসলে ইরানের বিপ্লবী জাতির যুগান্তকারী প্রতিরোধ সংগ্রামেরই সামান্য প্রতিক্রিয়া মাত্র। সন্ত্রাসী তৎপরতার মাধ্যমে মুনাফিকরা চেয়েছিল ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে ধ্বংস করতে, কিন্তু এর মাধ্যমে আসলে ওরা ইসলামী প্রজাতন্ত্রের শক্তিকেই বিশদভাবে তুলে ধরেছে এবং নিজেদের কদর্য চেহারারই প্রকাশ ঘটিয়েছে। ইসলামের এই দুশমনরাই মযলুম জনতার সহায় বলে ভান করে।
ইসলামের ইতিহাসে ৬১ হিজরির ১০ মুহররমে সংঘটিত আশুরার ঘটনার মতোই ১৯৮১ সালের ২৮ জুন ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানে সংঘটিত ঘটনায়ও শহীদের সংখ্যা সমান। এই ঘটনার ক্ষেত্রেও শহীদদের আত্মোৎসর্গ এবং দৃঢ় মনোবলের পরিচয় ফুটে ওঠে। এটা নিঃসন্দেহ যে, আয়াতুল্লাহ বেহেশতী আর তাঁর বাহাত্তর জন সাথির পবিত্র শাহাদাত, পূর্ববর্তী সময়ের চেয়ে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের জনগণকে অধিকতর বিপ্লবী করে তুলেছে।
এই শাহাদাত প্রকৃতপক্ষে ছিল এক রহমত যা আমাদের বিপ্লবী জাতিকে বিশ্বব্যাপী অত্যাচার আর অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে অধিকতর দৃঢ় মনোবলের অধিকারী করেছে।
(নিউজলেটার, জুন ১৯৯১)