শুক্রবার, ৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.)-এর জন্মদিবস পালন

পোস্ট হয়েছে: মার্চ ২৪, ২০১৯ 

news-image

১৩ রজব আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.)-এর পবিত্র জন্মদিবস উপলক্ষে গত ২৩ মার্চ ২০১৯ ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও আঞ্জুমানে মুমিনীনে বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স (বিলিয়া) মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা ও আনন্দ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সিনিয়র প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আল মোস্তফা আন্তর্জাতিক বিশ^বিদ্যালয়ের ঢাকাস্থ ক্যাম্পাসের প্রতিনিধি হুজ্জাতুল ইসলাম শাহাবুদ্দীন মাশায়েখী রাদ। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন হুজ্জাতুল ইসলাম আবদুল কুদ্দুস বাদশা ও ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কালচারাল কাউন্সেলর জনাব আবুল ফযল রাবিয়ী।
পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। তেলাওয়াত করেন ক্বারী সাইয়্যেদ মোহাম্মদ রেযা।


অনুষ্ঠানের সভাপতি প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান অনুষ্ঠানে আগত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বক্তাগণ যেভাবে হযরত আলীর জন্ম, তাঁর বেলায়াত ও অন্যান্য বিষয় উপস্থাপন করেছেন তা এককথায় অনবদ্য। তিনি বলেন,সুফিদের অনেকে নিজেদেরকে হযরত আলীর অনুসারী বলে দাবি করে থাকে তবে তাদের কারো কারো কর্মকা- বলে দেয় যে, তাদের সাথে ইসলামের ন্যূনতম সম্পর্কও নেই। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে সুফিদের মাধ্যমে ইসলাম প্রচারিত হয়েছে, তবে তাঁরা ছিলেন সত্যিকার অর্থে সুফি। হযরত আলী ধর্মের পাবন্দি সুফি ছিলেন একই সাথে তিনি যুদ্ধের ময়দানেও বীর ছিলেন। তিনি ছিলেন আসাদুল্লাহ- আল্লাহর সিংহ। তিনি কেবল আল্লাহর জন্য কাজ করতেন। যুদ্ধে তিনি একজন বীরকে পরাস্ত করলে সে আলীর মুখে থুথু ছিটিয়ে দেয়। হযরত আলী তাকে সেই মুহূর্তে হত্যা থেকে বিরত থাকেন।আমাদেরকেও হযরত আলীর মতো সাহসিকতা ও ত্যাগের মানসিকতা প্রদর্শন করতে হবে।
হুজ্জাতুল ইসলাম শাহাবুদ্দীন মাশায়েখী রাদ সূরা মায়েদার ৫৫ নং আয়াত তেলাওয়াত করে ‘ওয়ালী’ শব্দের ব্যাখ্যা করেন এবং পবিত্র কোরআন কাদেরকে মুমিনদের ‘ওয়ালী’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে এবং কীভাবে ‘ওয়ালী’র আনুগত্য করতে হবে তা ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ এ আয়াতেনিজের বেলায়াতের ঘোষণার পাশাপাশি রাসূলুল্লাহ (সা.) ও ইমাম আলীর বেলায়াতের ঘোষণা দিয়েছেন। তাই তাঁদের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রদর্শন করতে হবে। তিনি ‘আয়াতুল কুরসী’র প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আল্লাহ মুমিনদের ওয়ালী, আর তিনি মুমিনদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসেন। একইভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.) ও ইমাম আলীও মুমিনদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসেন। অন্যদিকে কাফেরদের ওয়ালীরা কাফেরদেরকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে দেখা যাচ্ছে মুসলমানরা নানা ভাগে বিভক্ত ও নিজেদের মধ্যে হত্যাকা-ে লিপ্ত। যদি মুসলমানরা বেলায়াতের ব্যাপারে একতাবদ্ধ না হয় তাহলে নানা দুর্গতির মধ্যে নিপতিত হবে, তারা জয় লাভ করতে পারবে না। অর্থাৎ ইহুদি-খ্রিস্টানরা বিজয় লাভ করবে।তিনি ইরানের উদাহরণ টেনে বলেন, যেহেতু ইরানের জনগণ মহানবী (সা.)-এর ওফাত-পরবর্তীকালে ইমাম আলী (আ.)-এর বেলায়াত স্বীকার করে নিয়েছে তাই শত ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও তারা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
হুজ্জাতুল ইসলাম আবদুল কুদ্দুস বাদশা বলেন, ইমাম আলী (আ.)-এর জন্ম একটি বিস্ময়কর ব্যাপার।ঐতিহাসিক বর্ণনামতে, তিনি হাতির বছরের ৩০ বছর পরে ১৩ রজব পবিত্র কাবাঘরে জন্মগ্রহণ করেন। ইমাম আলীর মা ফাতিমা বিনতে আসাদের পবিত্র কাবাঘর তাওয়াফের সময় প্রসববেদনা উঠলে তিনি মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চান। মহান আল্লাহ কাবাঘরে ফাটল সৃষ্টি করলে তিনি সেখানে প্রবেশ করেন এবং সেখানেই আলী (আ.) জন্মগ্রহণ করেন। চারদিন পর হযরত ফাতিমা বিনতে আসাদ আলীকে কোলে নিয়ে বের হয়ে আসেন। নির্ভরযোগ্য সব ইতিহাস গ্রন্থে এ ঘটনাটি বর্ণনা করা হয়েছে। কাবাঘরে মহান আল্লাহর অনুগ্রহে হযরত আলীর জন্মগ্রহণের বিষয়টি তাঁর মা হযরত ফাতিমা বিনতে আসাদের উচ্চ মর্যাদাকে প্রকাশ করে। কারণ, হযরত মারইয়ামের ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ তাঁকে পবিত্র ঘর ছেড়ে একটি গাছের নিচে অবস্থান নিতে বলেন। কিন্তু হযরত ফাতিমা বিনতে আসাদকে মহান আল্লাহ নিজের ঘরে স্থান দেন এবং সেখানে তাঁর খাওয়ার ব্যবস্থা করেন ও সন্তান জন্মদানের ব্যবস্থা করেন।
জনাব আবুল ফযল রাবিয়ী বলেন, আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর গুণ-বৈশিষ্ট্য এত বেশি যে, তা খুব অল্প সময়ে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জামাতা ছিলেন, এটি তাঁর বিশেষ বৈশিষ্ট্য নয়, বরং তিনি রাসূলের নবুওয়াত ঘোষণার পর প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, এটি তাঁর বিশেষ বৈশিষ্ট্য। তিনি যে পবিত্র কোরআনের আলোকে নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন এটি তাঁর বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
তিনি আরো বলেন, যদি কারো অন্তরে আলী (আ.)-এর প্রতি ভালোবাসা থাকে তবে আলী (আ.)-ও তাকে কাছে টেনে নিবেন। তিনি উদাহরণ হিসেবে ইরানের অন্যতম প্রসিদ্ধ আলেম আয়াতুল্লাহ মারআশী নাজাফীর জীবনের একটি ঘটনার উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মারআশী নাজাফী একদিন স্বপ্নে দেখেন যে, তিনি মসজিদে কুফায় উপস্থিত হয়েছেন যেখানে আলী (আ.) কিছু কবি-সাহিত্যিকের সাথে বসে ছিলেন। তিনি কবিতা পাঠ শুনছিলেন। একটি পর্যায়ে তিনি ইরানের অন্যতম প্রসিদ্ধ কবি শাহরিয়ারকে ডেকে নেন তাঁর কবিতা শোনার জন্য। শাহরিয়ার একটি কবিতা পাঠ করেন যার পঙ্ক্তিগুলো আমার স্মরণে ছিল। মারআশী নাজাফী বলেন, এরপর আমার ঘুম ভেঙে যায়। আমি কবি শাহরিয়ারের খোঁজ করতে বলি এবং তাঁকে আমার নিকট আসতে বলি। তিনি আমার কাছে এলে তাঁকে সেই কবিতা পাঠ করতে বলি। কবি শাহরিয়ার আশ্চর্যান্বিত হয়ে বলেন, এই কবিতা আমি এখনও কোথাও প্রকাশ করি নি, কিন্তু আপনি কিভাবে তা জানলেন? আয়াতুল্লাহ মারআশি নাজাফী তাঁকে পুরো ঘটনা খুলে বলেন।
অনুষ্ঠানে হাম্দ পরিবেশন করেন রোকনুজ্জামান কাজল ও আলী (আ.)-এর শানে কাসিদা পরিবেশন করেন জনাব নুরুল মুনীর, জনাব আলতাফ হোসেন ও মেহেদী হাসান।