মাতৃভাষা দিবসে ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলরের বাণী
পোস্ট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২০
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
আজ অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। মহান শহীদ দিবস। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত বৈচিত্র্যে সহযোগিতা ও সমর্থন জানাতেই এই নামকরণ। আজ গোটা বিশ্ব জানে যে, ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের এক মহান ও শুভ পদক্ষেপের কারণেই দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে মনোনীত হয়েছে এবং এই জন্য শাহাদাতও বরণ করতে হয়েছে অনেককে। তবে বাংলাদেশের প্রিয় মানুষ এবং ভাই ও বোনেরা, আপনারা কি জানেন কেন আপনাদের সন্তানদের এই কাজকে শুভ পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেছি? এর কারণ হিসেবে বলব, এটি ছিল মহান আল্লাহর ইচ্ছায় ঐশী প্রথাকে এগিয়ে নেয়ার প্রয়াস। কারণ, মহান আল্লাহ বৈচিত্র্য পছন্দ করেন। তাই আল্লাহ তায়ালা মানুষ, প্রাণিকুল ও উদ্ভিদসহ সমস্ত সৃষ্টিজগতকে অত্যন্ত সুন্দর ও বৈচিত্র্যময় করে সৃষ্টি করেছেন এবং সব সময় তিনি আমাদের মানুষের কাছে চান যেন আমরা এই সুন্দর ও বৈচিত্র্যময় সৃষ্টিজগৎ অবলোকন করি ।
সৃষ্টিকর্তা নিজে যেহেতু সুন্দুর, তাই সুন্দরকে তিনি ভালোবাসেন। সে কারণেই তিনি যখন এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন তখন তিনি নিজেই এই সুন্দর ও নিখুঁত সৃষ্টির জন্য নিজেকে প্রশংসিত করেছিলেন।
অতএব, সর্বশক্তিমান আল্লাহ অবশ্যই বৈচিত্র্যকে পছন্দ করেন এবং মানুষ যে বিভিন্ন সংস্কৃতিতে বিভিন্ন ভাষায় কথা বলছে এবং মহান আল্লাহর সৃষ্ট জীববৈচিত্র্যে সম্মান দেখাচ্ছে তা দেখতেও পছন্দ করেন। মহান আল্লাহ পছন্দ করেন যে, প্রতিটি জাতির জীবনযাত্রা, পোশাক, চিন্তাভাবনা ও কথা বলার ধরন থাকবে। সুতরাং মহান আল্লাহর সৃষ্টি হিসেবে আমরা যা অনুসরণ করব তা হলো সাংস্কৃতিক বিনিময়। সাংস্কৃতিক বিনিময় অর্থাৎ অন্য সংস্কৃতির ভালো ও ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলো গ্রহণ করব ও তা কাজে লাগাব। তবে জবরদস্তি করে নয়, বরং তা হবে আমাদের পছন্দ অনুসারে। না এক সংস্কৃতির ওপর অন্য সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়া অথবা সংস্কৃতিগুলোকে একীভূত করার চেষ্টার মাধ্যমে। আমাদের উচিত দুনিয়ার ঐসব চিন্তাচেতনার নিন্দা জানানো যা সংস্কৃতিকে বৈশ্বিক রূপ দেয়ার চেষ্টা করছে। জাতিগুলোর পোশাক, খাবার, কথা বলা, চিন্তা করা এবং সর্বোপরি সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যগুলোকে একীভূত করার চেষ্টা করছে। কেননা, তাদের এই চাওয়া মহান সৃষ্টিকর্তার চাওয়া ও ইচ্ছার পরিপন্থী এবং অবশ্যই এই চেষ্টা ব্যর্থ হবে। মহান আল্লাহ তায়ালা স্পষ্টভাবে পবিত্র কুরআনে বর্ণনা করেছেন,
‘হে মানবজাতি! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ এবং এক নারী থেকে এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি যাতে তোমরা একে অপরকে চিনতে পার। নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্মানিত যে সর্বাধিক তাকওয়ার অধিকারী। নিশ্চই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন।’
বাংলাদেশে অবস্থিত ইরান দূতাবাসের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর হিসেবে দেশটির ভাষার প্রতি সম্মান জানাতেই বাংলাভাষা শেখার চেষ্টা করছি যাতে এদেশের মানুষের মাতৃভাষায় কথা বলতে পারি। বাংলাদেশের মানুষও যদি পছন্দ করেন আমার ভাষা অর্থাৎ ফারসি ভাষা বিশেষ করে বিশ্বকবি হাফিজ, সাদি, রুমি, ফেরদৌসি, আত্তার ও ওমর খইয়ামের ভাষা শিখতে এবং সেই ভাষায় কথা বলতে তাহলে সেই ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার জন্য ধানমন্ডি ৪ নম্বর রোডে অবস্থিত ইরান দূতাবাসের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের দরজা সবসময় খোলা থাকবে।