আন্তর্জাতিক আল-কুদ্্স দিবস উপলক্ষে ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত
পোস্ট হয়েছে: জুন ১৫, ২০২১
আন্তর্জাতিক আল-কুদ্্স দিবস উপলক্ষে আজ ৭ই মে শুক্রবার বিকাল ৩টায় আল-কুদস কমিটি বাংলাদেশ এর উদ্যোগে এক ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষক ও আল-কুদ্্স কমিটি বাংলাদেশ এর সভাপতি অধ্যাপক ড. শাহ কাওসার মুস্তাফা আবুলউলায়ীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. শমশের আলী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মাদ রেজা নাফার। এতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ. কে. এম বদরুদ্দোজা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ সিদ্দিকুর রহমান খান, দৈনিক ইনকিলাবের সহকারী স¤পাদক জামাল উদ্দিন বারী, ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. মওলানা এ. কে. এম. মাহবুবুর রহমান ও দৈনিক আজকের ভোলার স¤পাদক অধ্যক্ষ মুহাম্মদ শওকাত হোসেন। ওয়েবিনার সঞ্চালনায় ছিলেন আল-কুদ্্স কমিটি বাংলাদেশ এর সেক্রেটারি জেনারেল মোস্তফা তারেকুল হাসান। ক্বারী এ. কে. এম. ফিরোজের সুমধুর কণ্ঠে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে ওয়েবিনারটি শুরু হয়।
প্রধান অতিথি ড. এম শমশের আলী বলেন, বাংলাদেশ একটি শান্তিকামী দেশ এবং সবসময় শান্তির পক্ষে কথা বলে আসছে। তিনি যুবকদের জন্য আয়োজিত একটি বিজ্ঞান কনফারেন্সে অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করে বলেন যে, সে কনফারেন্সের আলোচনার একটি বিষয় ছিল পারমাণবিক শক্তির বিধ্বংসী ব্যবহার নয় যেটি হিরোশিমা-নাগাশাকির ক্ষেত্রে ঘটেছিল, বরং পারমাণবিক শক্তির ইতিবাচক ব্যবহার করতে হবে। তিনি হল্যান্ডে আয়োজিত আরেকটি কনফারেন্সের কথা উল্লেখ করে বলেন, সেখানে তিনি লর্ড নোয়েল বেকারের সাক্ষাৎ লাভ করেন যিনি লীগ অব নেশন্স-এর প্রথম সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন, তিনি বলেন, আমি বাদশাহ আবদুল আজিজকে বলেছিলাম যে, ইসরাইলিরা এখানে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। আবদুল আজিজ জবাব দেন, ইহুদিরা যেহেতু জ্ঞান-বিজ্ঞানে অনেক উন্নত তাই তারা যদি আমাদের পাশে আসে তাহলে আমরা শুধু উপকৃতই হব। কিন্তু তারা এটি চিন্তা করেনি যে, এতে ফিলিস্তিনিরা নিজেদের ভূমিতেই উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে।
বিশেষ অতিথি মোহাম্মদ রেজা নাফার একটি হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বলেন, মহানবি (সা.) বলেছেন : ‘যদি কোন মুসলমান অপর কোন মুসলমানকে আহ্বান করে আর সে তার ডাকে সাড়া না দেয় তবে সে মুসলমান নয়।’ এ হাদিস অনুযায়ী ফিলিস্তিনের নির্যাতিত জনগণের আহ্বানের বিষয়টি আমাদের স্মরণ করা উচিত। পৃথিবীব্যাপী করোনা মহামারির মধ্যে ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য এই ওয়েবিনারের মাধ্যমে আমরা ফিলিস্তিনের জনগণের কাছে এ বার্তাই পৌঁছাতে চাই যে, ফিলিস্তিন ইস্যু আজও জীবন্ত।
তিনি বলেন, ২০২০ সালে ইসরাইল বিশ্বের ১৬০টি দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। ২০টি দেশে এখনও ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেনি যাদের মধ্যে বাংলাদেশ ও ইরান রয়েছে। ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।
আল-কুদ্স হলো মুসলিম বিশ্বের জন্য রেড লাইন। কারণ, এটি অনেক নবি-রাসূলের জন্মভূমি, মহানবির মেরাজ যাত্রার সূচনা ও মুসলমানদের প্রথম কিবলা যেটি যায়নবাদীরা দখল করে আছে। ইমাম খোমেইনী (রহ.) কর্তৃক আল-কুদ্স দিবস ঘোষণা ইসরাইলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে একটি প্রতীক।
ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের অপরিবর্তনীয় ও অফিসিয়াল সুস্পষ্ট অবস্থান হলো দখলদার যায়নবাদীদের বিরুদ্ধে। ইরান ফিলিস্তিনিদের সর্বব্যাপী স্বাধীনতার সমর্থক। ফিলিস্তিনিদের মুক্তির একমাত্র পথই হলো যায়নবাদীদের বিরুদ্ধে অব্যাহত প্রতিরোধ। ফিলিস্তিনিদের পরিপূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে, বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেয়া ফিলিস্তিনিদেরকে নিজ দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে, জেরুজালেমকে রাজধানী করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ঘোষণা করতে হবে।
পরিশেষে তিনি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর কথার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন যে, মহান আল্লাহর অনুগ্রহে আগামী ২০ বছর পরে ইসরাইল নামক কোন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব এ অঞ্চলে থাকবে না।
ওয়েবিনারের সভাপতি ড. কাওসার মুস্তাফা আবুলউলায়ী সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ফিলিস্তিনের জনগণ দীর্ঘদিন যাবৎ অত্যাচার, নির্যাতনের মধ্যে অতিবাহিত করছে। অনেকে শহীদ হয়েছেন। শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। শিশুহত্যা, দেশ থেকে বিতাড়ন, নির্যাতন সবকিছুরই শেষ রয়েছে।
তিনি বলেন, ইরানের ইসলামি বিপ্লবের নেতা ইমাম খোমেইনী মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য আল-কুদ্্স দিবস ঘোষণা করেন যাতে মাজহাব নির্বিশেষ সকলে ফিলিস্তিন ইস্যুতে একত্র হতে পারে।
ফিলিস্তিনিদের প্রতি অন্যায় করা হয়েছে। কিন্তু কতিপয় আরব দেশ ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক তৈরি করেছে, সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের চেষ্টা করছে যেটি ঠিক নয়। আমাদেরকে শত্রু-মিত্র চিনতে হবে। নিজেদের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য থাকলেও অভিন্ন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা বিভক্ত হয়ে পড়লে সেটি ইসলাম ও মানবতার দুশমনদের জন্য ভাল হবে যেটি কাম্য নয়। তাই আমাদের ইমানকে সমুন্নত করতে হবে, জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নতি সাধন করতে হবে, নৈতিকতাকে উন্নত করতে হবে, সর্বোপরি ঐক্যবদ্ধভাবে ফিলিস্তিন মুক্তি সংগ্রামে অংশগ্রহণ করতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে জনাব মোহাম্মাদ শওকাত হোসেন বলেন, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ঘটনা ছিল ইরানের ইসলামি বিপ্লব। বিপ্লবের বিজয়ের কিছুদিন পরেই ইমাম খোমেইনী (রহ.) ফিলিস্তিনিদের প্রতি ঐক্য ও সহমর্মিতা ঘোষণা করে আল-কুদ্স দিবস ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, ফিলিস্তিনে হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর বংশধর হযরত ইয়াকুব (আ.) বাইতুল মুকাদ্দাস নির্মাণ করেন। পরে হযরত সোলায়মান (আ.) এর পুনঃনির্মাণ করেন। এ স্থান হযরত ইবরাহীম (আ.), মূসা (আ.) সহ অনেক নবীর সমাধিক্ষেত্র।
ব্রিটেন-আমেরিকার ষড়যন্ত্রে এ অঞ্চলে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে। ফিলিস্তিনিরা নিজ দেশে পরবাসী হয়ে গেছে। তারা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। ১৯৬৭ সালে ইসরাইল বায়তুল মুকাদ্দাস দখল করে নেয়। ফিলিস্তিনিদের সাথে একাত্মতা প্রকাশের জন্যই আমাদের এই ওয়েবিনারের আয়োজন।
আমাদের জন্য আনন্দের বিষয় যে, এ বছর ফিলিস্তিনিরা বায়তুল মুকাদ্দাসে তারাবি নামায পড়তে পেরেছে। আমরা আশা করি আমরা ইসলামের শত্রুদের পরাজিত করে সেখানে আবার নামায পড়তে পারব, সুন্দরভাবে যিয়ারত করতে পারব। সেই দিনটির অপেক্ষায় আমরা রয়েছি।
এই দিনে ইমাম খোমেইনীকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি যে, তিনি ফিলিস্তিন ইস্যুতে মুসলমানদেরকে ঐক্যের দিকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। আমরা আশাবাদী একারণে যে, লেবাননে হিজবুল্লাহ সৃষ্টি হয়েছে, ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রামের জন্য সৃষ্টি হয়েছে হামাস। সকলের মধ্যে সংগ্রামী চেতনা আরো শাণিত হয়েছে। সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হবেই।
ড. এ. কে. এম. মাহবুবুর রহমান বলেন, ১৯৮১ সাল থেকে আমরা বাংলাদেশে আল-কুদ্স দিবস পালন করে আসছি। কিন্তু কেন বাংলাদেশের মুসলমানদেরকে ফিলিস্তিন নিয়ে কথা বলতে হবে? আসলে আল-কুদ্স আমাদের ইমানের সাথে জড়িত। এই মসজিদের দিকে ফিরে রাসূলুল্লাহ (সা.) ১৬ মাসের অধিক সময় নামায আদায় করেছে। এই মসজিদে মিরাজের রাতে ১ লক্ষ নবির ইমামতি করেছেন। এই মসজিদে হযরত উমর ইমানের ঝা-া উড়িয়েছেন ও ইমামতি করেছেন। সালাউদ্দিন আইয়ুবী মুসলমানদের একত্র করেছেন ও ইমামতি করেছেন। হাদিসে যে তিনটি মসজিদের দিকে সফর করতে বলা হয়েছে তার অন্যতম বায়তুল মুকাদ্দাস।
ইহুদি জাতিকে সবসময় অপমান ও অসহায়ত্ব বরণ করতে হয়েছিল তাদের জুলুমের কারণে। এরা একটি উচ্ছৃঙ্খল জাতি, এরা মানবতা বোঝে না। তারা মুসলমানদের হাত থেকে পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিন জোর করে নিয়ে যায়। যদি আমরা কেবল ইসরাইলকে দায়ী করি, কিন্তু মূল হোতা হলো ব্রিটেন, আমেরিকা, এরপর রাশিয়া। ব্রিটেন শুরু করে আর আমেরিকা এর সাথে যোগ দেয়। তারা মুসলমানদের কলিজার মধ্যে ইসরাইল নামক ক্যান্সারটিকে বসিয়ে দেয়। তারা এটি পারত না। কিন্তু পেরেছে এজন্য যে, মুসলমানদের মধ্যে আজকে কোনো ঐক্য নেই। আরেকটি হলো ইমানি জোশ নেই। ইমানি জোশ না থাকার কারণে মুসলমানরা পিছিয়ে পড়ছে। ইমাম খোমেইনী (রহ.) বুঝলেন মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ করার বড় হাতিয়ার হলো আল-কুদ্স। তিনি রমযানের এই দিনটিকে আল-কুদ্স দিবস ঘোষণা করলেন।
১৯৪৮ সালে ১৪ মে যখন বেন গুরিয়ান ইসরাইল রাষ্ট্রের ঘোষণা দেয় তার ১০ মিনিটের মাথায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়। এই দখলের পর ধীরে ধীরে ইসরাইলিরা ফিলিস্তিনের ৭৮ ভাগ এলাকা দখল নিয়ে নেয়। তারপরও ইহুদিদের নির্যাতন অব্যাহতভাবে চলে আসছে।
১৯৬৪ সালে ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে পিএলও গঠিত হলে মুসলমানরা মনে করে এর মাধ্যমে ফিলিস্তিন মুক্ত হবে। ১৯৯৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রবিন-আরাফাত চুক্তির পর ফিলিস্তিনিরা জিহাদী চেতনা হারিয়ে ফেলে। এরপর শেখ ইয়াসিন (রহ.)-এর ডাকে হামাস গঠিত হলে আবার সেই জিহাদী চেতনা প্রাণ ফিরে পায়। ইন্তিফাদা আন্দোলন গড়ে ওঠে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন দিবস পালন করা হলেও আল-কুদ্স দিবস যা আমাদের ইমানের সাথে জড়িত সে দিবসটিকে যথাযথভাবে পালন করা হচ্ছে না। রাষ্ট্রীয়ভাবে এটি পালন করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের ৪ লক্ষ মসজিদে আল-কুদ্স বিষয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। কিন্তু তা হচ্ছে না। এটি দুঃখজনক। অথচ মুসলমানদেরকে জানানো উচিত যে, আমাদের অপর মুসলিম ভাইবোনরা কোন্্ অবস্থায় রয়েছে।
তিনি বলেন, ইরান, তুরস্ক আর আরব বিশ্বের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ফিলিস্তিনকে মুক্ত করতে হবে।
জনাব জামাল উদ্দীন বারী বলেন, মুসলমানদের ঐক্যের সাথে যে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সেই প্রেক্ষাপটের সাথে কিছু অস্বচ্ছতা রয়েছে যেগুলো আমরা জানি, কিন্তু বলি না। এখন সময় এসেছে সেই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটগুলো মুসলিম উম্মাহর কাছে যথাযথভাবে তুলে ধরা। যেমন ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইসরাইল রাষ্ট্র গঠনের একটি পটভূমি হিসেবে নির্ধারণ করি কিন্তু এর প্রেক্ষাপট আরো ৫০০ বছর আগের। অটোমান সা¤্রাজ্যকে পরভূত করার যে নীল নকশা সেটির সাথে মুসলমানদের যে অংশগ্রহণ এবং প্রথম মহাযুদ্ধের যে পটভূমি সেটির ফলাফল বিবেচনা করলে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, সংকটটা কোথায়। মুসলমানদের বিভাজন ও বায়তুল মুকাদ্দাস দখল একই সূত্রে গাঁথা।
প্রথম মহাযুদ্ধ ছিল ইউরোপের সা¤্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর মধ্যকার দ্বন্দ্ব। এই সময়েই ফ্রান্স ও ব্রিটেন অটোমান সা¤্রাজ্যকে ভাগাভাগি করার ক্ষেত্রে একটি চুক্তি করে। ভার্সাই চুক্তিতে হেজাযের রাজাবাদশারা অংশ নেয় অন্য কোন মুসলিম প্রতিনিধিত্ব নেই। অটোমানদের কোনো প্রতিনিধিত্ব আমরা দেখি না। হেজাযের রাজা ও মক্কার শরীফ হোসনদের ভূমিকা আমরা সেভাবে জানি না। আমাদেরকে ইতিহাসের এই দিকগুলো জানতে হবে। মুসলমানদের বিভাজনের ইতিহাস জানতে হবে।
২০০১ সালে টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর আমেরিকার পক্ষ থেকে ক্রুসেড কথাটি উচ্চারিত হয়েছিল। অর্থাৎ তারা ক্রুসেডকে ভুলে যায় নি। এভাবে তারাা যায়নবাদী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে চলেছে। তারা আরো ২০০ বছর মুসলমানদেরকে পদানত করে রাখার নীল নকশা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।
আরব রাজা-বাদশারা ডিল অব সেঞ্চুরিকে সমর্থন করছে এবং এটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের উচিত এ বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা।
জনাব এ কে এম বদরুদ্দোজা বলেন, অনেকে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের পাশাপাশি অবস্থানকে মেনে নিয়েছেন। এটি খুবই বিপজ্জনক। ১৯১৭ সালে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন যে, মধ্যপ্রাচ্যে একটি ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করব। এটি প্রতিষ্ঠা করা হলো বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা ইহুদিদেরকে এনে। তারা ফিলিস্তিনের ভূমিপুত্র নয়। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরে ভূমিপুত্র মুসলমানরা নিজেদের দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছে। তারা ছড়িয়ে পড়েছে জর্ডান, লেবানন, তিউনিসিয়া পর্যন্ত। গায়ের জোরে যে কৃত্রিম রাষ্ট্র গঠিত হয়েছে তাকে কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তারা প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা দখলে নিচ্ছে।
গত শতাব্দীতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অস্তিত্বের ব্যাপারটি ছিল একটি তামাশা। যে রাষ্ট্রের নিজস্ব কোন সেনাবাহিনী পর্যন্ত ছিল না। এমন রাষ্ট্রের বিষয়টি মেনে নেয়াটিই ভুল ছিল। আর বর্তমানে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের পাশাপাশি অবস্থানের কথা উচ্চারিত হচ্ছে।
আমরা অনেক সময়ই বিশ্বাস করতে চাই নি যে, গোপনের ইসরাইলের সাথে মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোর সমঝোতার প্রচেষ্টা চলছে। কিন্তু পরবর্তীকালে সেটি স্পষ্ট হয়ে গেছে।
ফিলিস্তিনের সবচেয়ে বড় ভরসা ছিল মুসলিম বিশ্ব। তারা জানত যে, মুসলিম উম্মাহ তার পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু এখন আরব দেশগুলো ইসরাইলকে সমর্থন দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের সংকট গভীরতর হয়েছে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়ায় এবং তার সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে নেয়ায়।
১৯৮৫ সালে ইসরাইল পরাজিত হয়েছিল হিজবুল্লাহর কাছে। ২০০৬ সালেও তারা পরাজিত হয়েছে।
আমাদেরকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রাম পরিচালনা করতে হবে। ফিলিস্তিন ইস্যুকে সবসময় আলোচনার মধ্যে রাখতে হবে। সবাইকে জাগ্রত করতে হবে। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
ড. মোহাম্মাদ সিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে কৃত্রিম ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি বিনষ্ট করা হয়েছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সহায়তা দানের বিনিময়ে ফিলিস্তিন ভূখ-ে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার ঘোষণা দেয়া হয়। পরবর্তীকালে এটি ক্রমশ সম্প্রসারিত হয়েছে। তারা ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমি দখল করেছে। প্রতিনিয়ত অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। ফিলিস্তিনের মুক্তি নিশ্চিতকরণে ইমাম খোমেইনী আল-কুদ্স দিবসের ডাক দিয়েছিলেন।
ইসরাইলকে পশ্চিমা শক্তি সহায়তা দিয়ে আসছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ডিল অব সেঞ্চুরি ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী ভাইদের জন্য একটি বড় আঘাত।
মুসলিম বিশ্বের দুর্ভাগ্য আরব বিশ্বের দ্বিধাবিভক্তি। যেসব আরব রাষ্ট্র ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়েছে তারা ভুল করেছে। রাজতান্ত্রিক দেশগুলোর শাসকরা তাদের ক্ষমতা হারানোর চিন্তায় আতঙ্কগ্রস্ত। এজন্যই তারা ফিলিস্তিনের স্বার্থের কথা চিন্তা না করে নিজেদের স্বার্থ চিন্তা করছে।
ইরান সম্পর্কে ভীতি সৃষ্টি করা হচ্ছে। আর পশ্চিমা শক্তি এ ভয়কে তাদের মধ্যে গেঁথে দিয়েছে। কিন্তু আরবদের জন্যও এর ফলাফল ইতিবাচক হবে না। তাদেরকে ভুলের মাশুল দিতে হবে। জালিমদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো রমযানেরও শিক্ষা।
বক্তারা আরো বলেন, যায়নবাদী ইহুদিদের কবল থেকে ফিলিস্তিন ও বাইতুল মুকাদ্দাস মুক্তকরণে বিশ^বাসীকে সচেতন করা ও মুসলমানদেরকে জাগিয়ে তোলাই এ দিবস পালনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য।
উল্লেখ্য, প্রতি বছর রমযান মাসের শেষ শুক্রবারÑ জুমআতুল বিদাকে আন্তর্জাতিক আল-কুদ্স দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের পর বিপ্লবের নেতা ইমাম খোমেইনী (রহ.) জুমআতুল বিদাকে আন্তর্জাতিক কুদ্স দিবস হিসেবে ঘোষণা দেন এবং ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মুসলমানদের প্রতি সহমর্মিতা ও তাদের সাথে সংহতি প্রকাশের জন্য এ দিবসটি পালনের জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তারপর থেকে বিশ^ব্যাপী এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।