মঙ্গলবার, ৪ঠা মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

আত্মগঠন ও মানবীয় গুণাবলি অর্জনে ইমাম হাসান (আ.)-এর কর্মপন্থা

পোস্ট হয়েছে: জানুয়ারি ৯, ২০২১ 

আব্দুল কুদ্দুস বাদশা –
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হাসান ইবনে আলী (আ.) হলেন আহলে বাইতের সিলসিলায় মুসলমানদের দ্বিতীয় ইমাম। নবীদুহিতা মা ফাতেমা আর শেরে খোদা হযরত আলী (আ.)- এর পবিত্র দাম্পত্য জীবনের সর্বপ্রথম ফল। বেহেশতের বাদশা এ মহান ইমামের জন্ম পবিত্র মদিনা মুনাওয়ারায়, তৃতীয় হিজরি সনের মধ্য রমজানে। নানা হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ইন্তেকালের সময় তিনি ছিলেন সাত বছরের বালক। অতঃপর দীর্ঘ ত্রিশ বছর স্বীয় পিতা হযরত আলী ইবনে আবি তালিবের সাহচর্যে অতিবাহিত করেন। ৪০ হিজরিতে স্বীয় পিতার শাহাদাতের পর তিনি ইমামতের মাকামে অধিষ্ঠিত হন। কিন্তু আমীর মুয়াবিয়ার নিরন্তর চক্রান্তের মধ্যে তিনি মাত্র ১০ বছর ইমামতি দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হন। হিজরি পঞ্চাশ সনের ২৮শে সফর তারিখে (প্রসিদ্ধ মতানুসারে) মাত্র ৪৮ বছর বয়সে তাঁকে বিষ প্রয়োগে শহীদ করা হয়। মদীনার ‘জান্নাতুল বাকী’ গোরস্থানে তাঁর পবিত্র সমাধি অবস্থিত। (বিহারুল আনওয়ার, ৪৪ : ১৩৪) আল্লামা সুয়ূতী লিখেছেন : ‘হাসান (রা.) অশেষ চারিত্রিক ও মানবীয় গুণাবলির অধিকারী ছিলেন। তিনি একজন মহৎপ্রাণ, অধ্যবসায়ী, স্থিরচিত্ত, ব্যক্তিত্ববান, উদার এবং প্রশংসনীয় ব্যক্তি।’ (তারিখুল খুলাফা : ১৮৯)। অবশ্য এটাই স্বাভাবিক যে বিশ্বনবীর জ্যেষ্ঠ দৌহিত্র এমনই গুণের অধিকারী হবেন।
মুসলমানদের মধ্যে একটি চিরায়ত নিয়ম হচ্ছে কোন ব্যক্তির শান-মানকে পরিমাপ করা হয় রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট তার স্থান কী ছিল তার উপর বিচার করে। এদিক থেকে বলা যায় যে, নিঃসন্দেহে ইমাম হাসান রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট প্রাণাধিক প্রিয় ছিলেন। তিনি প্রকাশ্যে শত-সহ¯্রবার ইমাম হাসানের প্রতি তাঁর সে গভীর ভালবাসার প্রমাণ রেখেছেন। ইমাম বুখারী হযরত আবু বকর (রা.) হতে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেন, ‘আমি নবীজীকে মিম্বারের উপরে বসা অবস্থায় দেখেছি যখন হাসান ইবনে আলী তাঁর সাথে ছিলেন। তিনি একবার সমাগত লোকদের দিকে মুখ ফেরাচ্ছিলেন এবং আরেকবার তার দিকে তাকাচ্ছিলেন আর বলছিলেন : আমার এই পুত্র হচ্ছে সাইয়্যেদ তথা নেতা। (সহীহ্ বুখারী, বৈরুত প্রিন্ট, ৩ : ৩১) তিনি আরও বলছিলেন : ‘যে হাসান ও হোসাইনকে ভালবাসলো সে আমাকে ভালবাসলো। আর যে এ দুজনকে রাগন্বিত করলো সে আমাকে রাগন্বিত করলো।’ (বিহারুল আনওয়ার, ৪৩ : ২৬৪)। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আপন হাতে প্রতিপালিত ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন তাই নিঃসন্দেহে প্রতিটি মুসলমান ঘরের সন্তানদের প্রতিপালন পন্থার ক্ষেত্রে উত্তম আদর্শ। এ প্রবন্ধে ইমাম হাসান মুজতবা (আ.)-এর জীবনচরিত থেকে মুসলমানদের ব্যক্তি চরিত্র গড়ার সেই রীতিপন্থাকেই তুলে ধরার চেষ্টা করা হল।
মানব সন্তান এক তার জাগতিক ও আধ্যাত্মিক জীবনে এক অমিয় সম্ভাবনা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে থাকে। তার মধ্যে নিহিত শক্তি ও সম্ভাবনাসমূহ বাস্তবরূপ লাভ করে সঠিক প্রতিপালনের মাধ্যমে। যোগ্যতম প্রতিপালকের তত্ত্বাবধানে মানবের অন্তর্নিহিত সুপ্ত প্রতিভাসমূহ বিকশিত হয় যা তাকে পূর্ণতার পাণে পরিচালিত করে, মানবিক গুণাবলির অধিকারী করে তোলে এবং আত্মিক পরিশুদ্ধি দান করে। মহাপুরুষদের সীরাত তথা জীবনচরিত এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। এখানে সীরাত বলতে মাসুমগণের সেই জীবনাচারকে বুঝানো হয়েছে যা অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল, নিয়মানুবর্তী এবং রীতি তথা পদ্ধতিগত। ইমাম হাসান (আ.)-এর জীবনাচারে এ বৈশিষ্ট্যগুলো এতটাই উজ্জ্বল হয়ে আলো ছড়িয়েছে যে, প্রতিটি মুসলমানের ব্যক্তি চরিত্র গঠনে তা অনুকরণীয় আদর্শ হতে পারে।
ইমাম হাসান (আ.) মানবের সঠিক প্রতিপালনের জন্য তার বিচক্ষণতা ও অন্তর্দৃষ্টির (بصیرت) সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতি বিশেষ জোরারোপ করেছেন। এটা মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তি যা হাকিকতকে জানার ক্ষেত্রে অস্তিত্বসত্তার গভীর থেকে আরও গভীরে অনুপ্রবেশ করতে পারে। তখন অন্তর্দৃষ্টিবান ব্যক্তি বস্তুনিচয়ের প্রকৃত স্বরূপকে অনুধাবন করতে সক্ষম হয়। ইমাম হাসান (আ.) মানুষের মধ্যে অন্য সবকিছুর আগে এ অর্থটিকেই শক্তিশালী করার প্রয়াস  চালাতেন। যাতে তারা আপাতঃদৃষ্টির পথ পরিহার করে এবং সত্যে উপনীত হতে সক্ষম হয়। কেননা, অন্তর্দৃষ্টিই হচ্ছে সঠিক কর্মকাণ্ডের ভিত্তি। পক্ষান্তরে আপাতঃদৃষ্টির উপর নির্ভর করে চললে ভ্রান্তির সম্ভাবনা যেমন বৃদ্ধি পায়, তদ্রুপ পদে পদে বিপথগামী হওয়ার ঝুঁকিও থাকে অনেক বেশি। মাসুম ইমামগণের বিশেষ করে ইমাম আলী ইবনে আবি তালিব (আ.) এবং ইমাম হাসান মুজতবা (আ.) তৎকালীন জনগণের এই অর্ন্তদৃষ্টির অভাবহেতু সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কেননা, এমনকি তাঁদের সমর্থনকারীরও শত্রুর প্রচারণার প্রভাবে প্রতারণার কবলে পড়ে। ধুরন্ধর মুয়াবিয়ার কুটচালের মোকাবিলায় তারা অবিচল থাকতে পারে নি। ফলশ্রুতিতে আমিরুল মুমিনীন আলী (আ.) সিফফীনের ময়দানে সালিশ মানতে বাধ্য হন এবং ইমাম হাসান মুয়াবিয়ার সাথে সন্ধি করতে বাধ্য হন। (দ্র: শেইখ মুফিদ, আল-জামাল : ৬৯)
একারণে ইমাম হাসান (আ.) স্বীয় কথা ও কর্মের মাধ্যমে জনগণকে বিচক্ষণ করে গড়ে তোলা ও সচেতন করার যথাসাধ্য প্রয়াস চালান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন : ‘সর্বাপেক্ষা দৃষ্টিবান চক্ষু হচ্ছে সেই চক্ষু যা কল্যাণের পথে অনুপ্রবেশ করে, আর সর্বাপেক্ষা শ্রবণশক্তিসম্পন্ন কান হচ্ছে সেই কান যা নিজের মধ্যে উপদেশকে শিক্ষা করে এবং তা থেকে উপকার গ্রহণ করে। আর সর্বাপেক্ষা সুস্থতম অন্তর হচ্ছে সেই অন্তর যা সংশয়-সন্দেহ থেকে মুক্ত থাকে।’ (তুহাফুল উকুল আন আলে রাসূল : ১৭০) মানুষ যদি এই তিনটি উপকরণ ও মাধ্যমকে যথাযথভাবে কাজে লাগায় তাহলে নির্দ্ধিধায় বলা যায় যে, সে প্রকৃত অন্তর্দৃষ্টি অর্জন করতে সক্ষম হবে। দৃষ্টিশক্তি এবং শ্রবণশক্তি হচ্ছে এমন দুটি মাধ্যম যা তথ্যাবালকে চিন্তা ও বুদ্ধির কেন্দ্রস্থল অর্থাৎ অন্তরে প্রবেশ করায়। যদি এই আমদানিকৃত কাঁচামালসমূহ পরিশোধনকৃত হয়ে থাকে, আর অন্তরও যদি সংশয় ও সন্দেহের দোলাচল থেকে মুক্ত থাকতে পারে, তাহলে নিখাঁদ তথ্যাবলি প্রবেশের মাধ্যমে অন্তর সুচি ও স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে অন্তদৃষ্টির কেন্দ্রে পরিণত হয়।
ইমাম হাসান অন্তর্দৃষ্টি অর্জনের উপায় হিসাবে মানুষের আত্মপরিচিতি এবং আত্মগঠনের দিকে মনোযোগী হওয়ার উপদেশ দেন। স্বীয় পুত্রের উদ্দেশ্যে এক অসিয়তে ইমাম বলেন : ‘পুত্র আমার! কারও সাথে ভ্রাতৃত্বের (বন্ধুত্বের) বন্ধনে আবদ্ধ হয়ো না, যতক্ষণ না তাকে সর্বদিক থেকে চিনবে এবং নিশ্চিত হতে পারবে! অতঃপর যখন এরূপ ব্যক্তিকে খুঁজে পাবে তখন সর্ববিষয়ে তার সাথে থাকবে।’ (তুহাফুল উকুল আন আলে রাসূল : ১৬৮) অর্থাৎ ইমাম বন্ধুত্ব স্থাপনের পূর্বে ঐ ব্যক্তির সম্পর্কে বিচক্ষণতার পন্থা অবলম্বন করার উপদেশ দিয়েছেন। যদি সর্বদিক দিয়ে তাকে চেনা হয় এবং আস্থা আসে কেবল তখনই তার সহচর হওয়া যাবে। কারণ, মানুষের প্রতিপালনে এবং ব্যক্তিত্ব ও পরিচয়সত্তা গঠনে বন্ধুর ভূমিকা অত্যধিক। একারণেই যারা ইমাম হাসানকে যথাযথভাবে চিনতো না তাদের নিকট নিজের পরিচয় তুলে ধরতেন এবং বলতেন : ‘আমি হলাম হাসান, রাসূলুল্লাহর পুত্র, আমি হলাম সুসংবাদ দানকারী ও সতর্ককারীর পুত্র, আমি তাঁর পুত্র যিনি রিসালাতের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন…।’ (তুহাফুল উকুল আন আলে রাসূল : ১৬৭) এ বাক্যগুলোর মধ্যে ইমাম প্রকৃতপক্ষে শ্রোতাদের কাছে নিজের পরিচয় তুলে ধরেছেন। যাতে কেউ যদি তাকে না চিনে, সে যেন তাঁর পরিচয় জানতে পারে এবং জেনেশুনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। তাই তো তিনি বক্তব্য শুরুই করেছেন এভাবে : ‘যে আমাকে চিনে সে তো চিনেই। আর যে আমাকে চিনে না তার জন্য আমি আমার পরিচয় বলছি…।’
এরপর মানুষের আত্মগঠনের বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, মানুষ তাকওয়া ও নফসের তাহযীব তথা পরিশীলনের ক্ষেত্রে যতটা এগিয়ে যেতে পারবে, তদনুপাতে তার অন্তর্দৃষ্টির শক্তিও বৃদ্ধি লাভ করবে। এ প্রসঙ্গে ইমাম হাসান এক উপদেশবাণীতে সকল আত্মগঠনে ব্রতী মুসলমানদের উদ্দেশে বলেন : ‘আমি তোমাদেরকে আল্লাহর প্রতি তাকওয়া বজায় রাখার এবং নিরন্তর চিন্তা-অনুধ্যাানের আহ্বান জানাচ্ছি। কেননা, চিন্তা-অনুধ্যান হচ্ছে সকল কল্যাণের জনক এবং তার জননী।’ (মাজমুআতু ওয়ারাম, ১ : ৫৩) ইমামের এ উপদেশ বাণী থেকে প্রতিপন্ন হয় যে, সঠিক চিন্তা-অনুধ্যান এবং অন্তর্দৃষ্টি অর্জন হচ্ছে তাকওয়া ও আত্মশুদ্ধির ফসলস্বরূপ। ইমামের অপর এক উপদেশ বাণীতে এসেছে যে, তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে তাকওয়ার প্রতি উপদেশ দিয়েছেন। এ তাকওয়াকে তিনি নিজের পরম সন্তষ্টির কারণ হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। তাকওয়া হচ্ছে সকল তওবার দরজাস্বরূপ এবং সকল প্রজ্ঞাশীলতার মূল। মুত্তাকীদের মধ্যে যাঁরা সফলকাম হয়েছেন তাঁরা এ তাকওয়ার মাধ্যমেই সফলকাম হয়েছেন।’ (তুহাফুল উকুল : ১৬৭)
সুতরাং ইমাম হাসান (আ.)-এর দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষের বিচক্ষণতা ও অন্তর্দৃষ্টি অর্জনে তার আত্মপরিচিতির জ্ঞানের ভূমিকা যেমন গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন, অনুরূপভাবে তার তাকওয়া এবং আত্মশুদ্ধির ভূমিকাও অতীব গুরুত্বপূর্ণ বলে গণ্য করেন। এ অন্তর্দৃষ্টিকে কোরআনে ‘ফুরকান’ তথা সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যকারী নামে অভিহিত করা হয়েছে। ইমাম হাসান (আ.) জীবনের সর্ব অঙ্গনে এ বিষয়টির প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি মুয়াবিয়ার সাথে সম্পাদিত সন্ধিচুক্তির প্রভাব এবং মুসলমানদের জন্য এর সুফল ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন : ‘যে অধিকার নিতান্তই ছিল আমার প্রাপ্য, মুয়াবিয়া তা নিয়ে আমার সাথে বিবাদে লিপ্ত হল। আর আমি উম্মতের মঙ্গলার্থে এবং তাদের রক্তপাত এড়াবার লক্ষ্যে সে অধিকার তার হাতে তুলে দিলাম।’ (বিহারুল আনওয়ার, ৪৪ : ২৩) অন্যত্র ইমাম বলেন, ‘আমি এ কাজ করেছি ¯্রফে রক্তপাত এড়াবার জন্য এবং নিজের, পরিবারের এবং একনিষ্ঠ সহচরবৃন্দের প্রাণভয়ে।’ (প্রাগুক্ত : ৫৫) যারা উগ্রতা প্রদর্শন করতো এবং ইমামের প্রতি অসৌজন্যমূলক আচরণ করতো তারা আসলে অজ্ঞ ছিল এবং সন্ধিচুক্তির দর্শন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিল না। মুয়াবিয়া ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে এবং বনি হাশিমের প্রতি চরম বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে যেভাবে হত্যা ও ধ্বংসলীলায় মেতে উঠেছিল এবং ইসলামে সীমাহীন বিকৃতি ও কু-সংস্কৃতির প্রচলন ঘটিয়ে চলেছিল তার বিপরীতে যুগের নিষ্পাপ ইমাম হিসাবে একদিকে দ্বীনকে সুরক্ষা এবং অপরদিকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকে নিধনের হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখার গুরুদায়িত্ব অনুভব করেন। আর তখনই তিনি মুয়াবিয়ার অন্যায্য সন্ধির প্রস্তাবে সাড়া দেন। ইমাম যখন স্বীয় সহচরবৃন্দের কাছে এই নির্মম বাস্তবতার ব্যাখ্যা তুলে ধরেন তখন তাদের অনেকেই এ সত্যকে অনুধাবন করতে সক্ষম হয় এবং সরল সিরাতুল মুস্তাকীমের উপর অটল থাকে।
অন্তর্দৃষ্টি ও বিচক্ষণতা অর্জনের পর একজন মুসলমানের জন্য তার দ্বীনি বিশ্বাসসমূহকে লালন করা একান্তভাবে আবশ্যক। কেননা, অন্তর্দৃষ্টির সাথে সঠিক আকিদা-বিশ্বাসের সংযোগ থাকলেই কেবল মানুষ সন্দেহ-সংশয় ও ভ্রষ্ট চিন্তাধারার বিপরীতে অটল থাকতে পারে। জীবনের উৎপত্তি এবং এর পরিসমাপ্তি, যা কোরআনের ‘নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁরই নিকট প্রত্যাবর্তন করব’- এ আয়াতের মধ্যে প্রতিধ্বনিত হয়েছে, এ বিশ্বাস একজন মুমিনকে সঠিক পরিচয়সত্তা দান করে। এ বিশ্বাস যতই যুক্তিসিদ্ধ ও প্রমাণসাপেক্ষ হবে, জীবনে তার প্রভাব ততই অধিক হবে। সত্য ও সঠিক বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে যে ব্যক্তিত্ব ও পরিচয়সত্তা জন্ম লাভ করবে তা ব্যক্তির জন্য ততই মর্যাদা ও সম্মান বয়ে আনবে। এ মর্মে মহামহিম আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘যারা শাশ্বত বাণীতে বিশ্বাসী, তাদের ইহজীবনে ও পরজীবনে আল্লাহ্ সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন।’ (ইবরাহীম : ২৭)
ইমাম হাসান (আ.) মুয়াবিয়া কর্তৃক সৃষ্ট চরম রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যেও কীভাবে দ্বীনি বিশ্বাস ও মূল্যবোধসমূহের উপর সুদৃঢ় থাকতে হয় তা জনগণকে দেখিয়ে গেছেন। পরম ধৈর্য, অবিচল অধ্যাবসায় এবং পরম তিতিক্ষার মাধ্যমে তিনি শান্তভাবে সেসব সংকট ও সমস্যার মোকাবিলা করেন। যদিও তাঁর অজ্ঞ ও অসহিষ্ণু সহচরবৃন্দ এপথে তাঁকে কোন সহযোগিতা তো করেইনি, বরং মুয়াবিয়ার প্ররোচনায় নিজেরাই একাধিকবার ইমামের বিরুদ্ধে ঘাতকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, তাঁর তাঁবুতে আক্রমণ চালায় এবং তাঁর মাল-সামান লুট করে নিয়ে যায়। এমনকি তারা ইমামের পবিত্র শরীরে আঘাত করে জখম করে ছাড়ে। আহত দেহ নিয়ে তিনি কিছুদিন মাদায়েনে অবস্থান করেন। এহেন অবস্থায়ও তিনি ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শনে কুণ্ঠিত হননি এবং লোকদের দ্বীনি বিশ্বাসকে মজবুত করণের প্রচেষ্টা থেকে বিমুখ হননি। একত্ববাদী দীক্ষার বিকাশ সাধনে তিনি নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যান। এপ্রসঙ্গে এক ভাষণে ইমাম বলেন : ‘মহান আল্লাহ তোমরাÑ মানুষদেরকে অযথা এবং বিনা উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেননি। তিনি তোমাদেরকে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেননি। তোমাদের আয়ুষ্কালের নির্ধারিত সময় তিনি লিখে দিয়েছেন। তোমাদের মাঝে তোমাদের জীবিকাকে তিনি বণ্ট করে দিয়েছেন। যাতে প্রত্যেক ধীসম্পন্ন ব্যক্তি তার অবস্থানকে জানতে পারে এবং যা তার জন্য নির্ধারিত হয়েছে তা সে পেয়েছে আর যা তার থেকে ফিরিয়ে রাখা হয়েছে তা সে কখনও পাবে না।’ (তুহাফুল উকুল : ২৩২)
অনেক মানুষ রয়েছে যারা নিজেদের মূল্য ও মর্যাদাকে উপলব্ধি করে না। আর একারণেই অনায়াসে অপমান ও হীনতাকে বরণ করে নেয়। কিন্তু যদি সে তার মূল্য ও মর্যাদায় বিশ্বাস করতো তাহলে স্বীয় জাগতিক ও আধ্যাত্মিক জীবনকে সুশৃঙ্খলাবদ্ধ করে ফেলতো। সে কখনও চিন্তা ও আচরণগত সমস্যার সম্মুখীন হতো না, পথভ্রষ্টতার কবলেও পড়তো না। তাই দ্বীনি বিশ্বাসসমূহকে মজবুত করা মানুষের প্রতিপালন ব্যবস্থায় এবং তার আচরণের সংশোধনে একটি কার্যকরী পদ্ধতি যার উপর ইমাম হাসান (আ.) কথা ও কর্মের মাধ্যমে তাগিদ দিয়েছেন আজীবন।
অন্তর্দৃষ্টি অর্জন এবং দ্বীনি বিশ্বাসসমূহ লালনের পর যে গুণটি মানব জীবনকে আলোকিত করে তোলে সেটা হল বন্দেগি। ইসলাম ও কোরআনের দৃষ্টিতে ইবাদত-বন্দেগি হচ্ছে মানব জীবনের স্পন্দনস্বরূপ। ইবাদতের উদ্দেশ্যেই তার সৃষ্টি। সময়মত ও সঠিক পন্থায় ইবাদত-বন্দেগি সম্পাদনের মাধ্যমে মানুষ তার চলার পথে অত্যাবশ্যকীয় ক্ষেত্রসমূহ যেমন সুশৃঙ্খলা, সুপরিকল্পনা, অপরের অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, আত্মিক পরিতৃপ্তি ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। ইমাম হাসান মুজতবা (আ.) সর্বদা ইবাদতকে তার পূর্ণাঙ্গ ও পরিপূর্ণরূপেই আঞ্জাম দিতেন। বর্ণিত হয়েছে যে তিনি জীবদ্দশায় ২৫ বার পায়ে হেঁটে হজ্জব্রত পালন করেন। (বিহারুল আনওয়ার, ৪৩ : ৩৩১) অনুরূপভাবে তাঁর নামায আদায় সম্পর্কেও বর্ণিত হয়েছে যে, যখন নামাযের সময় সমাগত হতো এবং তিনি ওযু করতেন, তখন তাঁর হাঁড়ের জোড়াগুলো কেঁপে কেঁপে উঠতো এবং মুখম-ল ফ্যাকাশে হয়ে যেত। এর কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তর দেন, ‘যে কেউ মহান প্রতিপালকের সম্মুখে দ-ায়মান হয়, তার এমনটাই হওয়া উচিত।’ (সিবতে আকবার : ৪১) তিনি যখন মসজিদের দরজায় পৌঁছতেন, মাথা আকাশের দিকে উঠিয়ে বলতেন, ‘হে আল্লাহ! তোমার অতিথি তোমার দরজায় উপস্থিত। হে মহীয়ান! অধম এসেছে তোমার ঘরের দরজায়। অতএব, আমার নিকট যে মন্দ রয়েছে তা তোমার নিকট যে সুন্দরতম জিনিস রয়েছে তা দিয়ে ক্ষমা করে দাও, হে দয়াময়।’ (মানাকিব-ই আলে আবি তালিব, ৪ : ৭)
তিনি মুসলমানদেরকে মসজিদে গিয়ে জামাআত সহকারে নামায আদায়ে উৎসাহী করার নিমিত্তে বলতেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত মসজিদে যাতায়াত করবে সে আটটি জিনিসের যে কোন একটি লাভ করবে : (১) শক্তিশালী খোদায়ী নিদর্শন (২) উপকারী বন্ধুত্ব (৩) নতুন জ্ঞান (৪) প্রতীক্ষিত করুণা (৫) বক্তব্য, যা তাকে সত্য পথে টেনে আনবে (৬) বক্তব্য, যা তাকে হীনতা থেকে রক্ষা করবে (৭) আল্লাহর থেকে লজ্জাবশত পাপ বর্জন অথবা (৮) আল্লাহর ভয়বশত পাপ বর্জন। (তুহাফুল উকুল : ১৬৯) ইমাম মসজিদে গমনাগমনের এই যে সুফলগুলো উল্লেখ করেছেন তা ব্যবহারিক জীবনে উপকারী বটে। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদত করে, আল্লাহ সবকিছুকে তার প্রতি আনুগত্যশীল করে দেন।’ (মুস্তাদরাক আল-ওসায়িল, ৩ : ৩৫৯, হাদিস ৩৭৭৮) তিনি ইবাদতকে আত্মশুদ্ধির উপায় হিসাবে গণ্য করেছেন এবং বলেছেন, ‘নিশ্চয় যে ব্যক্তি ইবাদতকে ইবাদতের জন্যই অন্বেষণ করবে তার আত্মশুদ্ধি অর্জিত হবে।’ (তুহাফুল উকুল : ১৭০) ইমাম স্বয়ং যেমন ইবাদতের আশেক ছিলেন এবং আল্লাহর আনুগত্যকে মানুষের আত্মবিকাশ ও পূর্ণতা লাভের কারণ বলে মনে করতেন, তদ্রƒপ অন্যদেরকেও এ ব্যাপারে আহ্বান জানাতেন। এভাবে তিনি তাদের মাঝে বন্দেগির প্রাণশক্তি লালন করতেন।
মায়া-মমতা এবং ভালবাসা হচ্ছে আরেকটি অন্যতম মানবীয় গুণ যা ইমাম হাসান (আ.)-এর কর্মপন্থায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে ছিল। কেননা, অন্যদের প্রতি সদয় হওয়া এবং সম্মান প্রদর্শন করা মানব প্রকৃতির একটি স্বভাবজাত চাহিদা, যা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দরকার হয়। মানুষের এই সহজাত চাহিদাটি তার ব্যবহার ও অন্যদের সাথে তার আচরণে প্রকাশ পায়। মহান আল্লাহ হযরত মূসা (আ.)-কে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমি আমার নিকট হতে মানুষের মনে তোমার প্রতি ভালবাসা সঞ্চারিত করেছিলাম, যাতে তুমি আমার তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হও।’ (ত্বা-হা : ৩৯) এ খোদায়ী বাণী থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, মানবের আত্মগঠন তথা সঠিক প্রতিপালনে তার ভাবাবেগ ও ভালবাসার মনোবৃত্তিকে বিশেষভাবে পরিচর্যা করার আবশ্যকতা রয়েছে। কেননা, এই মানবিক গুণটি তার জীবনের মহৎ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে পৌঁছতে অত্যধিক প্রভাব রাখে। মহানবী (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো যে, পুরুষ ও নারিগণের মধ্য থেকে কারা আপনার নিকট অধিকতর প্রিয়? তিনি উত্তর দিলেন, ‘ফাতেমা ও তার স্বামী।’ তদ্রুপ হযরত আয়েশা থেকে বর্ণিত হয়েছে যে ইমাম আলী (আ.) রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-কে প্রশ্ন করেন, ‘আমাদের মধ্যে কে আপনার অধিক প্রিয়, আমি নাকি সে?’ তিনি (সা.) উত্তর দিলেন, ‘সে আমার অধিকতর প্রিয় আর তুমি আমার নিকট অধিকতর সম্মানিত।’ (বিহারুল আনওয়ার, ৪৩ : ৩৮) রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর দুই দৌহিত্র হাসান ও হোসাইনের প্রতিও একইরূপ ভালবাসা পোষণ করতেন এবং অন্যদেরকেও তাঁদের প্রতি ভালবাসা রাখার আহ্বান জানাতেন। তিনি বলতেন, ‘যে কেউ হাসান ও হোসাইনকে ভালবাসবে সে আমাকে ভালবাসলো আর যে তাদের প্রতি শত্রুতা করবে সে আমার সাথে শত্রুতা করলো।’ (বিহারুল আনওয়ার, ৪৩ : ৩০৪) গুরুজনদের মমতা ও ভালবাসা সন্তানদের সঠিক প্রতিপালনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে। একারণে মাসুমগণের জীবনচরিতে এ মানবীয় গুণটি সবকিছুকে ছাড়িয়ে যেতে দেখা যায়। তাঁরা এমনকি শত্রুদেরকেও আকৃষ্ট করতে এবং তাদেরকে সঠিক পথে দীক্ষা প্রদানের জন্য এটাকে কাজে লাগাতেন। ইমাম হাসান (আ.) নানা রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং পিতা আলী (আ.)-এর জীবন থেকে এ গুণটি উত্তমভাবেই রপ্ত করেছিলেন এবং অন্যদের প্রতিপালনে তা যথাযথভাবে কাজে লাগিয়েছিলেন। হযরত আনাস ইবনে মালেক বলেন, ইমাম হাসান (আ.)-এর জনৈকা কানিজ তাঁকে একটি ফুল উপহার দিল। ইমাম সাগ্রহে ফুলটি গ্রহণ করলেন এবং তাকে বললেন, ‘তোমাকে আমি আল্লাহর রাহে মুক্ত করে দিলাম।’ তখন আমি প্রতিবাদের স্বরে বলে উঠলাম, ‘একটি মাত্র ফুলের বিনিময়ে তাকে আপনি মুক্ত করে দিলেন?’ ইমাম বললেন, ‘আল্লাহ্ কোরআনের মধ্যে আমাদেরকে এমনটাই শিক্ষা দিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে, ‘আর যখন তোমাদের কোন সৌজন্যতার মাধ্যমে অভিবাদন করা হয় তখন তোমরাও তা অপেক্ষা উত্তম অভিবাদন করবে।’ ( নিসা : ৮৫) অতঃপর তিনি বললেন, ‘এক্ষেত্রে তাকে মুক্ত করে দেওয়াই হচ্ছে অপেক্ষকৃত উত্তম অভিবাদন। ’ (জালওয়াহায়ি আয নূরে কোরআন : ২৭)
একদিন ইমাম হাসান (আ.) এক যুবককে দেখলেন তার সামনে একটি খাবারের পাত্র। আর সে তা থেকে এক লোকমা নিজে খাচ্ছে এবং আরেক লোকমা একটি কুকুরকে খেতে দিচ্ছে। ইমাম যুবককে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এরূপ করছো কেন?’ যুবকটি বলল, ‘আমার শরম হচ্ছে যে, নিজে খাবার খাব অথচ এ কুকুরটি ক্ষুধার্ত থাকবে।’ ইমাম হাসান যুবকের এ বদান্যতায় মুগ্ধ হয়ে তাকে পুরস্কৃত করতে চাইলেন। তার ভাল কাজের জন্য ইমাম তাকে তার মনিবের নিকট থেকে খরিদ করে মুক্ত করে দিলেন। আর যে বাগিচায় সে কাজ করছিল, সে বাগিচাটি খরিদ করে তাকে দান করলেন। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৮ : ৩৮) এভাবেই বিশেষ করে কিশোর ও যুবকদের সঠিক প্রতিপালনে ইমাম হাসান (আ.) মানুষের প্রতি দয়া ও ভালবাসাকে অন্যতম উপকরণ হিসাবে কাজে লাগান। তিনি বলতেন, ‘আপন হচ্ছে সেই ব্যক্তি বন্ধুত্ব ও ভালবাসা যাকে নিকটবর্তী করেছে, যদিও বংশের দিক থেকে সে দূরের হয়ও। আর পর হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে বন্ধুত্ব ও ভালবাসা বিবর্জিত, যদিও বংশের দিক থেকে সে কাছের হয়ও।’ (তুহাফুল উকুল : ১৬৮)
পরিশেষে বলা যায়, অধুনা যুগের যান্ত্রিক জীবন থেকে যে জিনিসটি হারিয়ে যেতে বসেছে সেটা হচ্ছে মানুষের আত্মগঠনের চিন্তা আর মানবীয় গুণাবলির প্রতি মনোযোগ। আজ জীবন হয়ে উঠেছে নিরস আর বিষময়। নতুন নতুন আবিষ্কার আর গগণচুম্বী অট্টালিকা গড়া এ যুগের মানুষের জন্য যতটা না সহজ তার চেয়ে ঢের বেশি কঠিন হচ্ছে তার আত্মগঠন। ইসলাম মানুষের সঠিক প্রতিপালন ও তার মানবিক গুণাবলিকে বিকশিত করার উপর জোর দেয় সবচেয়ে বেশি। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.) হচ্ছেন মুসলমানদের জন্য উত্তম আদর্শ। সেই রাসূলের ক্রোড়ে লালিতপালিত হয়েছেন ইমাম হাসান (আ.)। কিশোর ও যুবকদের আত্মগঠনে তিনি যে কর্মপন্থা নিজ জীবনে রেখে গেছেন তা এই ইট পাথরের নগর জীবনের মানুষকেও সোনার মানুষে পরিণত করতে সক্ষম। মানুষকে তার আত্মসত্তায় ফিরতেই হবে। তাকে তার জৈবিক খোলস ভেদ করে আত্মায় পৌঁছতে হবে। আত্মার চাহিদাগুলোকে মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করে আত্মগঠনে ব্রতী হতেই হবে। নতুবা বৃথা পর্যবসিত হবে তার এ জীবন। ইমাম হাসান (আ.) দুনিয়াবি বাদশাহীকে নির্দ্ধিধায় ত্যাগ করে বেহেশতের সর্দার হয়ে প্রমাণ করেছেন যে, পার্থিব জগৎ আর দেহবিলাসই মানুষের প্রকৃত মর্যাদা নয়। তার স্থান পরাপ্রাকৃতিক, ঊর্ধ্বজাগতিক। তাই তাকে সেভাবেই গড়ে তুলতে হবে নিজেকে। চলতে হবে মানবিক পথে, মানবীয় গুণাবলির শক্তিতে।