বৃহস্পতিবার, ২০শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষের আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য ইরানের ‘মেসর গ্রাম’

পোস্ট হয়েছে: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২০ 

news-image

মেসর বালুর সমুদ্রবেষ্টিত একটি ছোট পল্লি গ্রাম। ইরানের ইসফাহান প্রদেশে বিশালায়তনের লবণ মরুভূমি ‘দাশত-ই কাভির’ এর প্রাণকেন্দ্রে গ্রামটির অবস্থান। অন্তহীন বালিয়াড়ির আকর্ষণে প্রতিবছর অঞ্চলটিতে ছুটে আসেন হাজার হাজার ভ্রমণপ্রিয় উৎসাহী মানুষ।

মেসর গ্রাম যারা মরুভূমির বুকে প্রশান্তি ও নির্জনতা উপভোগ করতে চান তাদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে। সেই সাথে যারা জ্যোতিষ শাস্ত্রীয় ও দুঃসাহসিক মজা উপভোগ করতে চান তাদের কাছেও পল্লি অঞ্চলটি আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।

অন্তহীন হলুদ পাহাড় আর মরুভূমির বুকে পায়ে হেঁটে চলা আর চারপাশের দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য উপভোগে মন যেন হারিয়ে যায় অজানায়। এছাড়াও মেসর মরুভূমিতে রাতের বেলা ভ্রমণে রয়েছে আরেক ভিন্ন স্বাদ। তারকারাজি যখন হীরার মতো মিটমিট করে জ্বলতে থাকে তখন যেন গ্রামটিতে পৃথিবীর সেরা এক রহস্যময় ও আকর্ষণীয় দৃশ্য গড়ে উঠে।

 

এছাড়া যারা আরও বেশি অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় তারা উটের পিঠে চড়ে ভ্রমণ করতে পারেন। অথবা স্যান্ড স্লাইডিং ও স্যান্ডবোর্ডিং উপভোগ করতে পারেন। যা মরুভূমির বুকে এনে দেবে অন্যরকম তৃপ্তি।

বাইক ও গাড়ি ভ্রমণেও মেসর গ্রামের আদিম প্রকৃতি অবলোকন করা যায়। সেখানে ঘুরতে যাওয়া দর্শনার্থীরা এই মজার ও উচ্ছ্বসিত গাড়িভ্রমণ উপভোগ করেন না; এমনটা হতে পারে না।

অঞ্চলটির আরেকটি ব্যাপক সুপরিচিত আকর্ষণ হচ্ছে খুর সল্ট লেক। এটি লবণ দ্বারা গঠিত মৌচাকের মতো আকৃতি দিয়ে মোড়ানো একটি লবণাক্ত লেক। অ্যাডভেঞ্চার ভ্রমণ উপভোগে আগ্রহী যে কারো কাছে মেসর ভ্রমণে অবশ্যই অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা লাভ হবে।

সবকিছু মিলিয়ে মেসর ভ্রমণ প্রত্যেক ভ্রমণকারীর কাছে যে অপরাজেয় এবং অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

মেসরে যেভাবে যাওয়া যায়

মেসর গ্রাম রাজধানী তেহরান শহর থেকে ৭০০কিলোমিটার দূরে এবং খুর শহর থেকে ৫৫ কিলোমিটার উত্তরে ইরানের কেন্দ্রীয় মরুভূমির বুকে অবস্থিত। গ্রামটিতে পৌঁছতে তেমন কষ্ট করতে হবে না। পর্যটকরা খুব সহজেই নাইয়েন-তাবাস সড়ক ধরে ফারোখি ও নাসরাবাদ গ্রাম পেরিয়ে সেখানে পৌঁছতে পারবেন। চলতি পথে তারা সড়কের পাশে থাকা মেসর যাওয়ার পথনির্দেশিকাও দেখে নিতে পারবেন। স্থানটি পৌঁছতে রাজধানী শহর থেকে ৫০কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে। বিদেশি পর্যটকদের বেশিরভাগ ভাড়া গাড়ি অথবা কাফেলার সাথে মেসর ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন।

সঙ্গে যা যা নিতে হবে

আপনি একাকী কিংবা গ্রুপ ট্যুরে যান সেটা কোনো বিষয় না। তবে গ্রামটি ভ্রমণে গুরুত্বপূর্ণ কিছু যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম সঙ্গে নিয়ে যেতে কখনও ভুল করা যাবে না। যেমন সান ক্রিম, সানগ্লাস, একদিনের ছোট একটি ব্যাকপ্যাক, প্রকৃতির অনুকূলীয় পোশাক-আশাক ও জুতা, একটি পানির বোতল, একটি ফ্ল্যাশলাইট ও একটি ক্যাপ সঙ্গে নেয়া খুবই জরুরি।

ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে এলাকাটির আবহাওয়া গরম থাকে। এ দুই মৌসুমে ভ্রমণে গেলে সূর্যের আলো সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই মেসর ভ্রমণের সর্বোত্তম সময় হলো ডিসেম্বর। শরৎ এবং শীতকালের ভ্রমণে অঞ্চলটিতে নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু উপভোগ করা যাবে।

ইতিহাস

মনোমুগ্ধকর প্রকৃতির সাথে মিল রেখে গ্রামটির নামকরণ করা হয়েছে। ‘মেসর শব্দটি আরবি অথবা মিসরীয় ভাষার। বলা হয়ে থাকে, গ্রামটিতে প্রথম ঘুরতে আসা পর্যটকরা মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে খুবই মুগ্ধ হন। তারা এখানকার বালিয়াড়ি ও বালুর মিসরের বালিয়াড়ির ব্যাপক মিল খুঁজে পান। এসব পর্যটক এখানকার বাসিন্দাদের জীবন পরিবর্তনে বিশাল অবদান রাখেন। মেসরের বাসিন্দারা মূলত কৃষক, অনেকে গবাদি পশুপালন করেন। জাফরান ও গম চাষ তাদের প্রধান কৃষি কাজ। বর্তমানে এখানকার মানুষের বেশির ভাগই পর্যটকদের সেবা ও আবাসন ব্যবসায় জড়িত রয়েছেন।

মেসর গ্রামের পাশাপাশি মরুভূমিতে বায়েজেহ ও জারমেহর মতো ছোট ছোট আরও অনেক গ্রাম রয়েছে। সুন্দর তালগাছ, গাছের ঝোপঝাড় ও বালির স্তূপ এসব গ্রামে অসাধারণ দৃশ্য গড়ে তুলেছে। গারমেহ একটি আকর্ষণীয় গ্রাম। এখানকার গরম পানির ঝরনা ও ভেষজ মাছ মরুময় গ্রামটিতে বেশি বেশি পর্যটক আকৃষ্ট করে থাকে।

বইপুস্তকে থাকা মানববসতির ইতিহাস থেকে জানা যায়, অঞ্চলটিতে ৪ হাজার বছর আগে বসতি গড়ে ওঠে। তবে কিছু কিছু নির্ভরযোগ্য ইতিহাস থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, অঞ্চলটিতে ৭ হাজার বছর আগে প্রথম মানববসতি গড়ে ওঠে। সূত্র: মেহর নিউজ এজেন্সি।