অনৈক্যই মুসলিম বিশ্বের বর্তমান সংকটের প্রধান কারণ: আয়াতুল্লাহ আরাফি
পোস্ট হয়েছে: মার্চ ২৮, ২০১৮
ঢাকা সফররত ইরানের আল- মোস্তফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর এবং জাতীয় মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান আয়াতুল্লাহ আলি রেজা আরাফি বলেছেন,অনৈক্য, অসচেতনা ও জ্ঞনচর্চার অভাব ইসলামি বিশ্বের বর্তমান সংকটের প্রধান। গত ২৭ মার্চ মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকায় বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন। ইরানের এই শিক্ষাবিদ বলেন, মুসলমানরা দীর্ঘদিন ইসলামের ছায়াতলে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করলেও এই মুসলিম সভ্যতা আজ ধ্বংসের পথে।তিনি এজন্য অভ্যন্তরিণ সমস্যার পাশাপাশি বিদেশী শক্তির চক্রান্তকেও দায়ী করেন।
আয়াতুল্লাহ আরাফি বলেন, বিশ্বের ৫৪টি মুসলিম দেশের হাতে ৬০ শতাংশেরও বেশি খনিজ সম্পদ থাকা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক ভাবে মুসলমানরা আজ দুর্বল এবং শক্তিশালী অর্থনীতি পশ্চিমাদের হাতে। তারা সুকৌশলে নৈতিকতা ও চিন্তগত বিভিন্ন বিষয় মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে আর আমরা অজ্ঞতার কারণে তাদের এসব চিন্তাচেতনার ফাঁদে পা দিয়ে অনৈক্যের বেড়াজালে আটকা পড়েছি। তাদের অব্যাহত অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে মুসলমানরা আজ দিশেহারা। মুসলিম বিশ্বের এই সংকট নিরসনে আমাদের শিক্ষিত সমাজকে আরো বেশি করে জ্ঞান চর্চায় মনোনিবেস করতে হবে এবং পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন মোকাবেলায় আমাদের আরো বেশি সচেতন হতে হবে।
তিনি বাংলাদেশ ও ইরানের মধ্যে শিক্ষা, সংস্কৃতি, শিল্পকলা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার পরিধি আরও বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ইরান এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।
আল- মোস্তফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ১৩০টি দেশের ৩৫ হাজার ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করছে এবং এ পর্যন্ত ৪৫ হাজার ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন স্তরে ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ১০০টি বিষয়ে পাঠ দান করা হয়। ইরান ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশ্ববিদ্যালয়টির শাখা থাকার পাশাপাশি বিশ্বের অনেক স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে এর এমওইউ রয়েছে। যার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে জ্ঞানের আদান প্রদান করে থাকে।
সভায় আল- মোস্তফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশ প্রতিনিধি হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন শাহাবুদ্দীন মাশায়খেী রাদ মুসলমানদের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে জ্ঞান চর্চার বিকল্প নেই উল্লেখ করে বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ইন্সটিটিউটের সাথে জ্ঞান চর্চা ও গবেষনামূলক যেকোন ধরনের সহযোগিতায় তাদের প্রস্তুতির কথা ঘোষণা করেন।
সভায় ঢাকাস্থ ইরানের রাষ্ট্রদূত ড. আব্বাস ভায়েজি দেহনাভী বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবসে দেশটির জনগণকে শুভেচ্ছা এবং স্বাধীনতার জন্য যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন,বাংলাদেশের মানুষের মাথে ইরানের জনগণের আত্মার সম্পর্ক রয়েছে এবং দুদেশের সরকার ও জনগণের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক আরো জোরদার হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ড. ভায়েজি বলেন, পশ্চিমাদের মতে ধর্মে সমাজ গঠনের কোন স্থান নেই। অথচ ইরানের ইসলামি বিপ্লব প্রমাণ করেছে ইসলামই হলো পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান।
সভায় ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রধান সাইয়্যেদ মুসা হুসাইনি আলমোস্তফা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যাঞ্ছেলর আলী রেজা আরাফিসহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত সম্মানিত অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন আয়াতুল্লাহ আরাফির বাংলাদেশে আগমনের প্রত্যাশায় ছিলাম। আবশেষ তার আগমন আমাদেরকে ধন্যকরেছে। জনাব আরাফির সৌজন্যে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে আজকের এই মতবিনিময় সভা জ্ঞানের আদান প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। তিনি এসময় ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ও ইরানের মধ্যে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরো জোরদারের উপর গুরুত্বারোপ করে এক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিয়াজি বলেন, ইরান ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ একটি দেশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের পাঠ্যক্রমে ইরানের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি অন্তর্ভূক্ত রয়েছে এবং আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে ছাত্রছাত্রিদের পড়িয়ে থাকি। তিনি ইরান সম্পর্কে আরো বেশি অধ্যয়ন ও গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ইরান স্টাডিস নামে একটি গবেষণা কেন্দ্র চালু করারও দাবী জানান।