অজ্ঞতার খেসারত দিলো সাপুড়ে
পোস্ট হয়েছে: জুলাই ২০, ২০২৩

বহুকাল আগে এক সাপুড়ে ছিল। সাপ ধরার জন্য ওই সাপুড়ে কখনও পাহাড়-পর্বতে, কখনও ডাঙায়-জঙ্গলে, কখনও মরু-প্রান্তরে যেতে হতো। এসব এলাকায় গিয়ে সাপুড়ে সাপ ধরতো এবং সেইসব সাপ নিয়ে শহরের বাজারে গিয়ে চিকিৎসকদের কাছে বিক্রি করতো। চিকিৎসক সেসব সাপের বিষ বের করে ওষুধ বানাতো।
কখনও আবার সাপুড়ে তার ধরে আনা সাপ দিয়ে বাজারের শশব্যস্ত মানুষের ভীড়ে খেলা দেখাতো। সাপের খেলা দেখাতে সাপুড়ে কেবল এক শহরেই ঘুরে বেড়াতো না বরং এক শহর থেকে আরেক শহরে, এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে ঘুরে ঘুরে বেড়াতো। মানুষ সাপের খেলা দেখে মজা পেতো, খুব আনন্দিত হতো তারা। সাপের খেলা দেখানো শেষ হলে মানুষ সাপুড়েকে খুশি হয়ে টাকা-পয়সা উপহার দিতো। ওই টাকা-পয়সা দিয়ে সাপুড়ে তার জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতো।
সাপুড়ের জীবন-জীবিকার আধার হলো সাপ বিক্রি করা এবং সাপের খেলা দেখানো। তো একদিনের ঘটনা বলি। সময়টা ছিল শীতকাল। চারদিক ছিল সাদা বরফে আচ্ছাদিত। আমাদের আজকের গল্পের সাপুড়ে ওই বরফ ঢাকা পাহাড়ের দিকেই পা বাড়ালো সাপ ধরার উদ্দেশে। পিচ্ছিল পার্বত্য পথ ধরে যেতে যেতে সাপুড়ের নজরে পড়লো বিরাট একটা অজগর সাপ। এতো বড় সাপ দেখে সাপুড়ে নিজেই খানিকটা ভড়কে গেল। কিন্তু সাপটা নড়াচড়া করছিল না। তাই সাপুড়ে ভাবছিল অজগরটা হয়তো ঘুমোচ্ছে। কিন্তু যখন খুব ভালো করে দেখলো তখন বুঝে ফেললো-না, ঘুমোচ্ছে না। অজগর সাপটি আসলে মরে পড়ে আছে।
মরা অজগর সাপ দেখতে দেখতে সাপুড়ের মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। মনে মনে ভাবলো: ভালোই হলো! এই অজগর সাপটা নিয়ে মানুষের ভীড়ে দেখাতে পারলে ভালোই জমবে। আরও ভাবলো: অজগর সাপটা নিয়ে গিয়ে মানুষের ভীড় জমিয়ে গর্বের সঙ্গে বলবে-আমি নিজ হাতে এই অজগরটা মেরেছি। মানুষ তখন ওই মৃত অজগর সাপটা দেখে নিশ্চয়ই আমার কথা বিশ্বাস করবে। বিশ্বাস না করে তো কোনো উপায় নেই, করতেই হবে। তখন মানুষ আমার দিকে সম্মানের দৃষ্টিতে তাকাবে। বলবে-বাহ। বাহ্! আজব দু:সাহসী সাপুড়ে। কতোটা অভিজ্ঞ, শক্তিশালী এবং পটু হলে এতো বিশাল একটা অজগর সাপ ধরে মেরে ফেলতে পারে! এরকম বীর সাপুড়ের সামনে বিশাল কোনো দৈত্য এসে দাঁড়ালেও সে একটুও ভয় পাবে না। উল্টাপাল্টা ভেবে ভেবে সাপুড়ে মূলত নিজেকেই বোকা বানাচ্ছিল। সাপুড়ে অজগরটাকে ধরে এমন সব কাজ করছিল যা অন্য কেউ সাহস করার কথা ভাবতেও পারে না। সাধারণত সাপ ধরার যে কৌশল সে ব্যবহার করতো সেইসব কৌশলও ভুলে গেল। বিরাট কাজ করে ফেলেছে যেস-এরকম ভেবে ভেবে মনে মনে খুব খুশি হলো সে। সাপুড়ে কিন্তু ঠিকই জানতো যে সাপ ধরা সহজ কাজ নয়। কিন্তু মরা সাপ মারা তো আর কোনো ব্যাপারই না। শেষ পর্যন্ত ওই মরা অজগর সাপ নিয়ে সে শহরে গেল। শহরটা ছিল বাগদাদ। ওই শহরের অলিতে গলিতে সাপ নিয়ে প্রচার চালালো এবং সবাইকে ওই বিশাল সাপ দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানালো।
এভাবে ঘুরে ঘুরে জনগণকে জানান দিয়ে সাপুড়ে একটা বড়োসড়ো আর খোলামেলা জায়গায় গিয়ে সাপ দেখানোর জন্য সমাবেশের আয়োজন করলো। সাধারণত সাপের খেলা দেখানোর জন্য যেরকম বেসাতি সাজানো হয় সেভাবেই সাজালো সাপুড়ে। মানুষজনও ধীরে ধীরে এসে ভীড় জমালো। আরও বেশি মানুষ আসার অপেক্ষা করছিল সাপুড়ে। যত বেশি মানুষ তত বেশি আয়। মানুষ অবশ্য অপেক্ষা করতে চাচ্ছিলো না। তাড়াতাড়ি অজগর সাপ দেখার জন্য উৎসুক হয়ে পড়লো তারা। সাপুড়ে অজগরের মুখটা একটা কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখেছিল। সময়মতো খুলবে-এরকমই চিন্তা ছিল তার। খুব গভীরভাবে সে খেয়াল করলো ঢেকে রাখা কাপড় যেন নড়ছে। ভালো করে দেখলো-হ্যাঁ, সত্যিই অজগর সাপ নড়াচড়া করছে।
সাপের নড়াচড়ার বিষয়টা ভীড় জমানো লোকজনও খেয়াল করলো। স্বাভাবিকভাবেই একটা গুঞ্জন তৈরি হলো। সাপুড়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে অজগরটাকে দেখছিল। হঠাৎ দেখলো অজগর গিঁটগুলো ছিঁড়ে ফেলেছে এবং কাপড়ের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছে। বিশাল অজগর দেখে লোকজন উঠিপড়ি করে পালাতে লাগলো। দু:খজনকভাবে এলোমেলো অবস্থায় পালাতে গিয়ে পদতলে পিষ্ট হয়ে অনেক মানুষ মারাও গেল। সাপুড়েও ভয়ে যেন পাথর হয়ে গেল। কিন্তু সে তো ঘোষণা করেছে ওই অজগরটাকে সে নিজে মেরেছে। সে কারণে পিছু হটে যেতে ইতস্তত করলো। কেননা যেরকম বীরত্বের কথা সে প্রচার করেছে এখন সেই বীরত্ব তো দেখাতে হবে তাকে। তাই সাপুড়ে না পালিয়ে উল্টো অজগরের দিকে এগিয়ে গেল পুনরায় তাকে মেরে দু:সাহস দেখানোর জন্য।
কিন্তু ফল হলো উল্টো। অজগর সাপই সাপুড়েকে খেয়ে ফেললো এবং আরও বহু মানুষকে মেরে ফেললো। সাপুড়ে বেচারা আসলে জানতো না বরফের আচ্ছাদনে সাপ ঠাণ্ডায় জমে গিয়েছিল। শহরে নিয়ে যাওয়ার পর সূর্যের আলোর তাপে আবার জেগে উঠেছিল। সুতরাং না জানার খেসারত দিতে হলো তাকে। জীবন দিয়ে সাপুড়েগিরির অবসান ঘটাতে হলো। /পার্সটুডে/