মঙ্গলবার, ৪ঠা মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

হযরত আলী (আ.)-এর প্রতি ভালবাসার কারণ

পোস্ট হয়েছে: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৬ 

news-image

শহীদ মুর্তাজা মোতাহারী : জনগণের অন্তরে হযরত আলী (আ.)-এর প্রতি ভালবাসা রয়েছে, জনগণ তাঁকে বন্ধু মনে করে। এর কারণ কি? এখন পর্যন্ত এর গুপ্ত রহস্য কেউ উদ্ঘাটন করেননি। অর্থাৎ কেউই একটা নির্দিষ্ট রূপ দিয়ে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেননি।

হযরত আলী (আ.)-এর প্রতি মানুষের ভালবাসার পেছনে গুপ্ত রহস্য রয়েছে। এ ভালবাসা মানুষের হৃদয়কে আলোকিত করে এবং মানুষকে হযরত আলীর দিকে আরো আকৃষ্ট করে তোলে। এ ভালবাসা ও আকর্ষণ হচ্ছে সর্বোত্তম। হযরত আলী (আ.) এমন এক ব্যক্তি যার জন্য জনগণের অন্তরে রয়েছে ভক্তি ও শ্রদ্ধা, যাঁকে ভালবাসে মানুষ। তাঁর মধ্যে এমন বিস্ময়কর কী রয়েছে যা ভালবাসাকে উদ্দীপ্ত করে, অন্তরকে আকৃষ্ট করে এবং অন্তরে শাশ্বত ও চিরস্থায়ী জীবনের সুর বেজে উঠে? কেন সকল লোক তাঁর মাধ্যমেই তাদের অন্তর খুঁজে পায় এবং তাকে মৃত না ভেবে অমর মনে করে?

নিশ্চয়ই হযরত আলী (আ.)-এর প্রতি এ ভালবাসার ভিত্তি তাঁর দেহ নয়। কারণ, তাঁর দেহ আজ আর আমাদের মধ্যে নেই এবং ইন্দ্রিয়শক্তি দিয়েও তা আমরা উপলব্ধি করতে পারি না। হযরত আলী (আ.)-এর প্রতি ভালবাসা অন্যান্য জাতির মতো বীরপূজাও নয়। এ কথা বলাও ঠিক নয় যে, উন্নত মানবিক গুণাবলির কারণেই তাঁকে ভালবাসা হয় এবং তাঁর প্রতি ভালবাসা মানবিক ভালবাসা। একথা সত্য যে, তিনি একজন খাঁটি মানুষ এবং একথাও ঠিক যে, মানুষ মহৎ ব্যক্তিদের ভালবাসে। হযরত আলী (আ.)-এর প্রজ্ঞা ও জ্ঞান, আত্মত্যাগ ও পরার্থতা, বিনয় ও নম্রতা, সৌজন্য ও ভদ্রতা, দয়া ও ক্ষমা, দুর্বলকে রক্ষা করার মানসিকতা, সদাশয়তা, স্বাধীনতার প্রতি ভালবাসা, মানবতার প্রতি শ্রদ্ধা, বদান্যতা, সাহসিকতা, মহানুভবতা, শত্রুর প্রতি ক্ষমা প্রভৃতির কোন তুলনা হয় না। মাওলানা রুমীর ভাষায় :

‘সাহসিকতায় খোদার সিংহ তুমি

বদান্যতায় তুমি কিরূপ ছিলে ক’জনই বা জানে তা?’

হযরত আলী (আ.)-এর মধ্যে বদান্যতা, পরোপকার, অপরের কল্যাণ কামনা প্রভৃতি গুণাবলি থাকলেও আল্লাহর সাথে যদি তাঁর সম্পর্ক না থাকত তাহলে এটা নিশ্চিত যে, তাঁর প্রতি জনগণের বর্তমান আবেগমিশ্রিত ভালবাসা ও সচেতনতা থাকত না। তাঁকে ভালবাসার মূলে রয়েছে আল্লাহর সাথে তাঁর সম্পর্ক। আমাদের অন্তর অজ্ঞাতসারেই সত্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। হযরত আলী (আ.) সত্যের এক মহান নিদর্শন এবং মহৎ গুণাবলির প্রতীক। তাঁর প্রতি ভালবাসার ভিত্তি হচ্ছে সত্যের সাথে আমাদের অন্তরের সম্পর্ক যা আমাদের মৌলিক সত্তায় শুরু থেকে বিদ্যমান। যেহেতু আমাদের মৌলিক সত্তা চিরন্তন, তাই হযরত আলী (আ.)-এর প্রতি আমাদের ভালবাসাও চিরন্তন।

হযরত আলী (আ.)-এর মধ্যে অনেক উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কিন্তু যে বৈশিষ্ট্য তাঁকে চিরস্থায়ী ঔজ্জ্বল্য দান করেছে তা হচ্ছে তাঁর ঈমান ও নৈতিকতা। ঈমান ও নৈতিকতাই তাঁকে রুহানী শক্তি দান করেছে।

(নিউজলেটার, জানুয়ারি ১৯৯১)