শুক্রবার, ৩১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

সম্পাদকীয়

পোস্ট হয়েছে: মে ১৪, ২০১৮ 

হযরত ফাতেমা (সা. আ.)-এর জন্মবার্ষিকী ও বিশ্ব নারী দিবস

২০শে জমাদিউস সানী- এ বছর যা ছিল ১০ই মার্চে – খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমা (সালামুল্লাহি আলাইহা)-এর জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান এ দিনটিকে ‘বিশ্ব নারী দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। ইরানি জনগণ, বিদেশস্থ ইরানি কূটনৈতিক মিশনসমূহ এবং বিশ্বের বহু ইসলামি মহল ও সংগঠন বরাবরের ন্যায় এ বছরও এ দিনটিকে যথাযথ দ্বীনী মার্যাদা সহকারে উদ্যাপন করেছে।
যে কোনো আদর্শের জন্যই কেবল তাত্ত্বিক ভিত্তি, নৈতিক শিক্ষা ও বিধি-বিধানই যথেষ্ট নয়; বরং তার অনুসরণযোগ্যতার মূর্ত প্রতীক অপরিহার্য। একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ঐশী আদর্শ ইসলামের মূর্ত প্রতীক রাসূলে আকরাম হযরত মুহাম্মাদ (সা.), আর বিশেষভাবে নারীদের জন্য মূর্ত প্রতীক তাঁর কন্যা বেহেশতে নারীকূলনেত্রী হযরত ফাতেমা (সা. আ.)- যিনি ‘ইবাদত-বন্দেগি, পারিবারিক ব্যবস্থাপনা, সন্তান লালন-পালন, জ্ঞানার্জন ও জ্ঞান বিতরণ, শালীনতা, সামাজিক কর্মতৎপরতা ও রাজনৈতিক ভূমিকাসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের জন্য কর্মতৎপরতার অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত রেখে গিয়েছেন। তাই নিঃসন্দেহে তাঁরই জন্মদিন ‘বিশ্ব নারী দিবস’ হিসেবে উদ্যাপিত হবার জন্য সর্বাধিক উপযোগী।
আমরা হযরত ফাতেমা (সা. আ.)-এর জন্মবার্ষিকী ও বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে সমগ্র বিশ্ববাসীকে, বিশেষত মুসলিম উম্মাহ্কে এবং আরো বিশেষভাবে নিউজলেটারের পাঠক-পাঠিকাদেরকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি।

ইরানের ইসলামি প্রজাতন্ত্র দিবস

পয়লা এপ্রিল ইরানের ইসলামি প্রজাতন্ত্র দিবস। ইরানি জনগণের অবিসংবাদিত নেতা হযরত ইমাম খোমেইনী (র.)-এর নেতৃত্বে ১৯৭৯ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি ইসলামি বিপ্লবের বিজয় এবং স্বৈরাচারী রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার পতন ঘটে। এরপর ইরানের ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা নির্ধারণের লক্ষ্যে হযরত ইমামের নির্দেশে ৩০ ও ৩১শে মার্চ গণভোট অনুষ্ঠিত হয় এবং ইরানি জনগণ তাদের বিপ্লবকালীন স্লোগান ‘এস্তেক্বলাল, আযাদী, জোম্হুরিয়ে এস্লামী’ (স্বাধীনতা, মুক্তি, ইসলামি প্রজাতন্ত্র) সহকারে এতে অংশগ্রহণ করে ও শতকরা ৯৮ ভাগের বেশি ভোটার দেশকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র করার সপক্ষে রায় দেয়। এর ভিত্তিতে পয়লা এপ্রিল গণভোটের রায় ঘোষণার দিনেই হযরত ইমাম খোমেইনী (র.) ইরানকে ‘ইসলামি প্রজাতন্ত্র’ ঘোষণা করেন। এর পর পরই আইন বিভাগ, প্রশাসন ও বিচার বিভাগের শতকরা একশ’ ভাগ পৃথক্করণসহ সংবিধান প্রণীত ও অনুমোদিত হয় এবং তারই ভিত্তিতে ইরানে ইসলামি প্রজাতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত আছে। তখন থেকে প্রতি বছর ইরানি জনগণ বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা সহকারে এ দিনটি উদ্যাপন করে আসছে।
আমরা ইরানের ৩৯তম ইসলামি প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে বিশেষভাবে নিউজলেটারের পাঠক-পাঠিকাগণসহ ইরান ও বাংলাদেশের জনগণকে এবং সাধারণভাবে বিশ্ববাসীকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি।

নওরোয ও বাংলা নববর্ষ : প্রাকৃতিক জাগরণের উৎসব

২১শে মার্চ ‘নওরোয’ সারা বিশ্বে পরিচিত ইরানি বর্ষপঞ্জির প্রথম দিন- যা একই সাথে প্রকৃতিতে নতুন প্রাণ সঞ্চারকারী বসন্তের প্রথম দিন। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে ইরানি জনগণ ও মধ্য এশিয়ার দেশসমূহের জনগণ অত্যন্ত ধুমধামের সাথে এদিনে উৎসব পালন করে আসছে। প্রাগৈতিহাসিক কালে এ দিনে এক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তৎকালীন পারস্যে (বর্তমানে যা ইরান) একজন স্বৈারাচারী যালেম বাদশাহকে উৎখাত করে সুবিচারের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এ উপলক্ষেই নওরোয উৎসব প্রবর্তিত হয়। আর এ নওরোযেরই তিন সপ্তাহ পরে ১৪ই এপ্রিল বাংলা সনের প্রথম দিন- যা ‘নববর্ষ’ হিসেবে সুপরিচিত – যে দিনটিকে বাংলাদেশের জনগণ অত্যন্ত ধুমধামের সাথে পালন করে থাকে।
নওরোয উৎসব প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে চলে এলেও বর্তমান ইরানি বর্ষপঞ্জি একটি হিজরি সৌর বর্ষপঞ্জি। ইরানি জনগণ নওরোযের সূচনায় কোরআন তেলাওয়াত করে ও বর্ষবরণের বিশেষ দো‘আ পাঠসহ দু’হাত তুলে মহান আল্লাহ্র কাছে সাধারণভাবে বিশ্ব মানবতার জন্য ও বিশেষভাবে নিজেদের, জাতির ও মুসলিম উম্মাহ্র জন্য শান্তি, সুস্থতা ও সমৃদ্ধিপূর্ণ একটি সুন্দর নতুন বছর কামনা করে। এভাবে নওরোয উৎসব ইরানি সমাজের জন্য নৈতিক ও সামগ্রিক শিক্ষার সহায়ক হিসেবে ভূমিকা পালন করছে।
একইভাবে বাংলা বর্ষপঞ্জি ইরানি বর্ষপঞ্জির ন্যায় একটি হিজরি সৌর বর্ষপঞ্জি। ফসল তোলা সমাপ্ত হওয়ার পর পরই নতুন বছরের শুরু হিসেবে এক সময় বাংলা সনকে ‘ফসলী সন’ও বলা হতো। সরকারের পক্ষ থেকে খাজানা আদায় ছাড়াও এ সময় ব্যবসায়ীরা তাদের গ্রাহকদের কাছ থেকে বকেয়া পাওনা আদায় করতো এবং উৎসবের মধ্য দিয়ে নতুন বছর শুরু করতো। এভাবে বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম দিন – বাংলা নববর্ষ একটি উৎসবের দিনে পরিণত হয় এবং সেই শুরু থেকেই মিলাদ-অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা সহকারে এ দিনটি উৎসব হিসেবে পালন করা হয়ে আসছে।
ইরানি বর্ষপঞ্জির নওরোয ও বাংলা বর্ষপঞ্জির নববর্ষ উপলক্ষে আমরা নিউজলেটারের পাঠক-পাঠিকাগণসহ সবাইকে জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
এছাড়া ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আমরা বাংলাদেশের গণমানুষের কল্যাণ, সমৃদ্ধি ও সুস্বাস্থ্য এবং উন্নততর ভবিষ্যৎ কামনা করছি।