সমকালীন ফারসি সাহিত্য
পোস্ট হয়েছে: জুন ১৩, ২০২০
ইরানে বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে সংঘটিত সাংবিধানিক বিপ্লবের পর ফারসি সাহিত্যের সমকালীন যুগের সূচনা। এ বিপ্লব ইরানিদের চিন্তা-চেতনায় এবং এর ফলশ্রুতিতে সাহিত্যশৈলীর মধ্যে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছিল। এভাবেই বিষয়বস্তু ও গঠনের দিক বিবেচনায় ফারসি সাহিত্যকে ক্লাসিক ও আধুনিক এ দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। এ যুগেই ফারসি সাহিত্য প্রথম বারের মতো সাধারণ মানুষের সাহিত্যে পরিণত হয়।
আধুনিক ফারসি কবিতার পাঠকরা হচ্ছেন সাধারণ জনগণ এবং বেশিরভাগ কবিই ব্যক্তিজীবনের সমস্যাবলি এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যাবলি নিয়ে আলোচনা করেছেন। আধুনিক ফারসি কবিতার ভাষা জনগণের কাছাকাছি ভাষায় পরিণত হয়। আজকের ফার্সী ভাষার গঠন এবং শব্দাবলি এতে ব্যাবহার করা হয় এবং দুর্বোধ্য শব্দসমূহ বাদ দেয়া হয়। এ যুগের কবিগণ সাহিত্য অলঙ্কারের দিকে তেমন একটা দৃষ্টিপাত করেন নি।
এ যুগের ফার্সী কবিতাকে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয় :
আধুনিক কবিতা (নিমায়ী)
ফারসি ভাষায় এ ধরনের কবিতার শৈলী প্রথম বারের মতো আবু এসফান্দিয়ারী আবৃত করেন যিনি ‘নিমা ইউশিজ’ নামে বিখ্যাত। নিমা তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্য ‘আধুনিক’ বিশেষণ ব্যবহার করেন। এ জাতীয় কবিতায় সমজাতীয় শ্লোক বিদ্যমান ছিল না। অনুরূপভাবে, শ্লোকগুলো কখনও ছোট আবার কখনও ছিল বড়। এ ধরনের কবিতা সাহিত্যের শিক্ষকদের বিরোধিতার সম্মুখীন হয়। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এর ব্যাপক প্রচলন লক্ষ্য করা যায়। সমকালীন কবি ও সমালোচকরা নিমা ইউশিজের কবিতার ধাঁচকে মডেল হিসেবে গণ্য করেন এবং তাঁকে পৃথিবীর খ্যাতিমান অনুসরণীয় কবিদের দলভুক্ত হিসেবে বিবেচনা করেন। এ ধরনের শৈলী যে সব কবি ব্যবহার করেন তাঁদের মধ্যে নিমা ইউশিজ, মাহদী এখওয়ানুস সালেস, সোহরাব সেপেহ্রি এবং কায়সার আমিনপুর অন্যতম।
সেপিদ বা গদ্য কবিতা
এ ধরনের কবিতা সংক্ষিপ্তÑ যা গদ্যের আকারে লিখা হয়; এতে অন্ত্যমিল থাকে না, তবে কাব্যিক উপাদান থাকে। হুশাঙ্গ ইরানি এমন একজন কবি যিনি প্রথম এ ধরনের কাব্যশৈলীতে ব্যবহার করেন। কিন্তু সেপিদ কবিতার সার্থকতা পায় বিংশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে আহমদ শামলুর মাধ্যমে। এজন্য তাঁকে সেপিদ কবিতার উদ্ভাবক বলা হয়।
আধুনিক প্রবহমান কবিতা
এ ধরনের কবিতা প্রথম বারের মতো বিযান এলাহী এবং আহমদ রেযা আহমাদী শুরু করেন। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে নিমায়ী পদ্ধতির কবিদের একটি দল একটি বিশেষ ধরনের কবিতা রচনার প্রক্রিয়া শুরু করেনÑ যা পরবর্তীকালে আধুনিক প্রবহমান কবিতা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে। আধুনিক প্রবহমান কবিতায় অতিরঞ্জন প্রবাহ লক্ষ্য করা যায়। এ প্রবাহের উদ্দেশ্য ছিল সকল বাহ্যিক নিয়মনীতির পরিবর্তন ও বিবর্তন এবং প্রচলিত কবিতার অর্থগত ও গঠনগত দিকের, এমনকি আধুনিক কবিতার আঙ্গিকে পরিবর্তন সাধন করা।
অনুবাদ : বাদল মিয়া