সংবাদ বিচিত্রা (বিদেশী সংবাদ)
পোস্ট হয়েছে: নভেম্বর ৮, ২০১৬
‘ইরানীরা কখনোই ইসলাম থেকে সরে যাওয়ার শর্ত মেনে নেবে না’-রাহবার
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, ইরানীরা কখনোই ইসলাম ধর্ম, স্বাধীনতা ও বৈজ্ঞানিক উন্নয়নের পথ থেকে সরে আসার শর্ত মেনে নেবে না।
তিনি বলেন, পাশ্চাত্যের নিষেধাজ্ঞা আমাদের জন্য কিছু সমস্যা সৃষ্টি করেছে ঠিকই, কিন্তু তাই বলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য ইসলাম, স্বাধীনতা ও বৈজ্ঞানিক উন্নয়নের মতো মৌলিক ইস্যুগুলো থেকে সরে আসার শর্ত ইরানের জনগণ ও কর্মকর্তারা কখনোই মেনে নেবে না। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞার মোকাবেলায় নিজেদেরকে সুরক্ষিত করতে হবে। এটিই একমাত্র পথ। গত ৭ জানুয়ারি রাজধানী তেহরানে হাজার হাজার মানুষের এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
সর্বোচ্চ নেতা বলেন, আমাদের এমন প্রস্তুতি থাকতে হবে যে, শত্রুরা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করলেও যাতে আমাদের উন্নয়ন-অগ্রগতি, কল্যাণ ও সমৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত না হয়। ইরানের পরমাণু ইস্যু এবং নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক কিছু বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন সর্বোচ্চ নেতা। তবে তিনি চলমান পরমাণু আলোচনার বিরোধী নন বলেও ঘোষণা করেন। সম্প্রতি কয়েক জন মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ইরান পরমাণু ক্ষেত্রে ছাড় দিলেও সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে না।
নিউ ইয়র্কে রাহ্বারের প্রবন্ধ ও ভাষণের সংকলন গ্রন্থ প্রকাশ
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ দ্বীনী ও রাজনৈতিক নেতা হযরত আয়াতুল্লাহ্ উয্মা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীর ভাষণ ও তাঁর লেখা প্রবন্ধসমূহের সংকলন গ্রন্থাকারে নিউ ইয়র্ক থেকে ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। অুধঃড়ষষধয অষর কযধসবহবর’ং ঠরংরড়হ ড়ভ ওংষধসরপ চযরষড়ংড়ঢ়যরপধষ ঞযবড়ষড়মু ধহফ চৎধীরং ড়ভ এষড়নধষ চবধপব শিরোনামের ২০৪ পৃষ্ঠা আয়তনের এ গ্রন্থটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের আমেরিকাস্থ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং নিউ ইয়র্কের অন্যতম গবেষণা ও প্রকাশনা সংস্থা এষড়নধষ ঝপযড়ষধৎষু চঁনষরপধঃরড়হং কর্তৃক যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত হয়েছে।
নিউ ইয়র্কের ওল্ড্ ওয়েস্ট্বারী ইউনিভার্সিটিতে দর্শনশাস্ত্রের সার্বক্ষণিক শিক্ষক প্রফেসর পারভীয মোরাভেযী এ গ্রন্থটি সম্পাদনা করেন। উল্লেখ্য, প্রফেসর মোরাভেযী নিজে একজন সুপ্রতিষ্ঠিত গ্রন্থকার এবং তিনি ‘দর্শন ও ইসলাম’ ও পাশ্চাত্য দর্শন বিষয়ে অনেকগুলো গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি বিগত প্রায় ছয় দশক যাবৎ শিক্ষকতার পেশায় নিয়োজিত আছেন।
উল্লেখ্য, এষড়নধষ ঝপযড়ষধৎষু চঁনষরপধঃরড়হং একটি অলাভজনক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং এ প্রতিষ্ঠানটি সাধারণত বিরল ধরনের গ্রন্থাবলি প্রকাশ করে থাকে।
গ্রন্থটি সম্বন্ধে প্রফেসর পারভীয মোরাভেযী বলেন, এ গ্রন্থটি এমন এক সময় প্রকাশিত হচ্ছে যখন বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী নেতা আয়াতুল্লাহ্ উযমা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীর দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাধারা সম্বন্ধে পাশ্চাত্য জগতে যথাযথ ধারণার অভাব রয়েছে। তাই পাশ্চাত্যের সাধারণ লোকদেরকে এ সম্বন্ধে জানানো প-িত ব্যক্তিদের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দায়িত্ব।
প্রফেসর মোরাভেযী আশা প্রকাশ করেন যে, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরী সহ মার্কিন প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ এ গ্রন্থটি অধ্যয়নের জন্য সময় ব্যয় করবেন। তিনি বলেন, বিশেষ করে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যখন আলোচনা চলছে এমন এক সংবেদনশীল সময়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার চিন্তা-চেতনার সাথে তাঁদের পরিচিত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
‘শত্রুর আঁচলের নিচে আশ্রয় নেবেন না’- হুজ্জাতুল ইসলাম কাজিম সিদ্দিকি
ইরানের বিশিষ্ট আলেম হুজ্জাতুল ইসলাম কাজিম সিদ্দিকি বাহরাইনের জমিয়ত আল-ওয়াফাক দলের নেতাকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তাঁকে গ্রেফতারের ঘটনা অবৈধ ও অনৈতিক। গত ২ জানুয়ারি তেহরানের জুমআ নামাযের খুতবায় তিনি এই মন্তব্য করেন। সম্প্রতি বাহরাইনের স্বৈরতান্ত্রিক সরকার ওয়াফাক দলের মহাসচিব শেখ আলী সালমানকে গ্রেফতার করায় সেদেশে গণ-অসন্তোষ আগের চেয়েও জোরদার হয়েছে।
হুজ্জাতুল ইসলাম কাজিম সিদ্দিকি বলেন, এটা বলা যাবে না যে, বাহরাইনের সংখ্যালঘু সুন্নি মুসলিম সম্প্রদায় দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া মুসলমানদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, কারণ, দেশটির সরকার শিয়াও নয়, সুন্নিও নয়; বরং এরা হলো পরাশক্তির দালাল। এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে ও মসজিদ ধ্বংস করে বাহরাইনের জনগণের বিপ্লবকে থামানো যাবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
কাজিম সিদ্দিকি ‘মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ’ শীর্ষক ইরানের সাম্প্রতিক সামরিক মহড়া প্রসঙ্গে বলেন, এ মহড়ায় শত্রুদের মোকাবেলায় ইরানের বিধ্বংসী ক্ষমতার নমুনা প্রদর্শিত হয়েছে এবং এর মাধ্যমে আমাদের প্রতিবেশীদের এ বার্তা দেয়া হয়েছে যে, এতো ব্যাপক মাত্রায় বিজাতীয় শক্তিগুলোর আঁচলের নিচে আশ্রয় নেয়া ঠিক নয়; এ অঞ্চলেরই যথেষ্ট শক্তি রয়েছে; ইসলামী ইরানের সশস্ত্র বাহিনী এ অঞ্চলে যে কোনো অশুভ তৎপরতাকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করতে সক্ষম।
ইসলামের নামে সন্ত্রাসবাদ; নিন্দা করলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট
গত ১০ জানুয়ারি ২০১৫ ইসলামের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নিন্দা জানান ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের যেকোন অংশে ইসলামের নামে সন্ত্রাসবাদ চলুক না কেন তার বিরুদ্ধে আমরা নিন্দা জানাই- তা হোক ফিলিস্তিন, লেবানন, সিরিয়া অথবা ফ্রান্স কিংবা আমেরিকা।’
‘ইসলামী ঐক্য সপ্তাহ’ উপলক্ষে রাজধানী তেহরানে আয়োজিত এক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিনিধিদল এ সম্মেলনে অংশ নেন।
প্রেসিডেন্ট রুহানি আরো বলেন, যারা অন্যায়ভাবে ধর্ম, জিহাদ কিংবা ইসলামের নামে মানুষ হত্যা করে এবং চরমপন্থা ও সহিংসতার মতো ভুল পথে পরিচালিত হয় তারা মূলত ইসলামভীতি ছড়িয়ে দিচ্ছে; পাশাপাশি ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। এ সময় তিনি সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ইরানের অবস্থানের কথা ঘোষণা করে বলেন, যেসব দেশ সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা করছে ইরান তাদের পাশে থাকবে।
ড. রুহানি বলেন, ইরাক, সিরিয়া, লেবাবন, ফিলিস্তিন, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের জনগণ সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা করছে। তবে সুখের বিষয় হলো প্রতিদিন তারা এর বিরুদ্ধে সফলতা লাভ করছে।
ইরানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলামী বিপ্লবের ৩৬তম বার্ষিকী উদ্যাপন
১১ ফেব্রয়ারি ছিল ইরানের ইসলামী বিপ্লবের ৩৬তম বার্ষিকী। ১৯৭৯ সালের এই দিনে মরহুম ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর নেতৃত্বে অর্জিত হয়েছিল ইসলামী বিপ্লবের ঐতিহাসিক বিজয়। অপরদিকে অবসান ঘটেছিল আমেরিকার মদদপুষ্ট পাহলভি শাসকদের আড়াই হাজার বছরের শাহী স্বৈরশাসনের। ইসলামী মূল্যবোধ এবং গণতান্ত্রিক নীতিমালার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল নতুন এক শাসনব্যবস্থার। ইরানের মুক্তিকামী জনগণ প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের দুই পরাশক্তিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রাণ বাজি রেখে ছিনিয়ে এনেছিল নিজেদের স্বাধীনতা ও মুক্তি।
প্রতি বছর এই বিপ্লব বার্ষিকীতে সমগ্র ইরানজুড়ে কোটি কোটি মানুষ বিপ্লবের সমর্থনে রাস্তায় নেমে আসে। ইরান ছাড়াও বিশ্বের আরো অনেক দেশে ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর নেতৃত্বাধীন এ বিপ্লবের বার্ষিকী পালিত হয়। এবার ৩৬তম বিপ্লব বার্ষিকীতেও তার ব্যতিক্রম হয় নি। তেহরানের বৃষ্টিঝরা আবহাওয়া উপেক্ষা করে বর্ণাঢ্য র্যালিতে অংশ নিতে রাস্তায় নেমে আসে বিপ্লবপ্রিয় দেশপ্রেমিক লক্ষ লক্ষ জনতা। রাজধানীর আজাদি স্কয়ার পরিণত হয়েছে জনতার মহাসমুদ্রে। বিপ্লবের দীর্ঘায়ু কামনা করে এবং ইসরাইল-আমেরিকার পতন চেয়ে দেওয়া বিপ্লবী জনতার মুহুর্মুহু স্লোগানে স্লোগানে তেহরানসহ সমগ্র ইরানে সৃষ্টি হয় উৎসবের আমেজ। সমবেত জনতার কণ্ঠে ধ্বনিত হয় নানা স্লোগান : ‘আমেরিকা ধ্বংস হোক, ইসরাইল নিপাত যাক’, ‘ইসলামী বিপ্লব জিন্দাবাদ, সর্বোচ্চ নেতা জিন্দাবাদ’- এ ধরনের আরও নানা স্লোগান। অনেকের হাতেই ছিল আমেরিকা ও ইসরাইলবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান লেখা ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড।
বিপ্লব বার্ষিকীতে দেশের সর্বস্তরের জনগণ বিজয় র্যালিতে যোগ দিয়ে বারবার প্রমাণ করেছে তারা বলদর্পী শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। যেমনটি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন : ‘ঐক্যবদ্ধ ইরানী জাতি তাদের বিরুদ্ধে যেকোনো ষড়যন্ত্রের যথাযোগ্য জবাব দেবে এবং এই মিছিলে শত্রুদের জন্য রয়েছে সুস্পষ্ট বার্তা।’ ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি বলেন, ‘এক সময় আমরা যুদ্ধের ময়দানে স্বাধীনতা রক্ষা করেছি এবং এখন আলোচনার টেবিলে একই কাজ করছি।’ ড. রুহানি বলেন, ইসলামী বিপ্লবের আদর্শ ও মূলনীতি অপরিবর্তিত থাকবে, যদি বাহ্যিক কর্মকাণ্ডে পরিবর্তন আনতে হয় তা হতে হবে ইসলামী শাসনব্যবস্থার আওতায় এবং নির্বাচনী কাঠামোর মধ্যে। তিনি আরো বলেন, ৩৬ বছর আগে বিপ্লবের মাধ্যমে আমাদের জনগণ স্বাধীনতা, মুক্তি ও ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল যা আজ পর্যন্ত অপরিবর্তিত রয়েছে।
ইরানে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্রদের জন্য আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
ইরানের রাজধানী তেহরানের মিলাদ টাওয়ারের আন্তর্জাতিক সম্মেলন কক্ষে গত ১-৪ জানুয়ারি ২০১৫ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্রদের জন্য পঞ্চম আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতার বিষয় ছিল পবিত্র কুরআনের তেলাওয়াত ও হেফ্য। ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। বিশ্বের ৪৭টি দেশের ৬৬ জন প্রতিযোগী এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণ করেন কারী শহীদুল ইসলাম ও হাফেয মোরশেদ আলম।
উভয় বিভাগ থেকে পাঁচজন প্রতিযোগীকে চূড়ান্ত পর্বের জন্য নির্বাচন করা হয়। প্রতি বিভাগে প্রথম স্থান অধিকারীকে ৩০টি স্বর্ণ মুদ্রা অথবা তার সমপরিমাণ অর্থ পুরস্কার হিসেবে দেয়া হয়।
হেফ্য প্রতিযোগিতায় মিশরের হাফেয মোহাম্মদ আবদুল আযীয নিয়াজী প্রথম স্থান অধিকার করেন। ইরানের হাফেয মোহাম্মাদ জাওয়াদ মোহাম্মাদী মায্দ দ্বিতীয় এবং লেবাননের মাহমুদ আল-কোফরী তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। বাংলাদেশের হাফেয জনাব মোরশেদ আলম চতুর্থ স্থান অধিকার করেন।
তেলাওয়াত প্রতিযোগিতায় ইরানের কারী ওয়াহিদ খাযায়ী প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং মিশর ও ইরাকের কারী যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেন।
উল্লেখ্য, এই প্রতিযোগিতা প্রতি দুই বছরে একবার করে অনুষ্ঠিত হয়।
ইরানে শিয়া ও সুন্নি মাযহাবের যৌথ হাদিসের সমন্বয়ে এনসাইক্লোপিডিয়া প্রকাশ
গত ৭ জানুয়ারি ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানে ইসলামী ঐক্য সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত ২৮তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে শিয়া ও সুন্নি মাযহাবের যৌথ হাদিসের সমন্বয়ে এনসাইক্লোপিডিয়ার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। উক্ত সম্মেলন ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি উপস্থিত ছিলেন।
‘মুউসুয়াতুল আহাদিসুল মুশতারাকাতু বাইনাস সুন্নাতি ওয়াশ শিয়াতি’ নামের এনসাইক্লোপিডিয়াটি মুসলিম উম্মাহর বিশ্ব পরিষদের সাথে সংশ্লিষ্ট ইসলামিক স্টাডিজ ইন্সটিটিউটে দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে সংকলন করা হয়। উক্ত এনসাইক্লোপিডিয়ায় ৫০টিও অধিক তাফসীর এবং অন্যান্য বিষয়, যেমন আকায়েদ, ফিকাহ, রাজনীতি, অর্থনীকি, আখলাক, ইতিহাস সংক্রান্ত বিষয় সংকলিত হয়েছে যা মোট ৬২ খ-ে মুদ্রিত হয়েছে।
ইরানে মুসলিম-বৌদ্ধ সংলাপে মিয়ানমারের শীর্ষ ধর্মগুরু
বিশ্বে সহিংসতা ও যুদ্ধ-বিগ্রহ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ তেহরানে অনুষ্ঠিত হয় ইসলাম ও বৌদ্ধ ধর্ম বিষয়ক একটি সংলাপ। এ বৈঠকে যোগ দেন মিয়ানমারের প্রধান বৌদ্ধ ধর্মগুরু অশিন নিয়ানসারা। তিনি বলেন, বিশ্বের সমস্ত সমস্যা ও সহিংসতার উৎস হলো মানুষের অজ্ঞতা। মানুষ যদি অন্য ধর্মগুলোর গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোর সঙ্গে পরিচিত হয় তাহলে তারা সুযোগসন্ধানিদের হাতের পুতুল হিসেবে ব্যবহৃত হবে না এবং এর ফলে ধর্মগুলোর মধ্যে সহিংসতাও কমে যাবে।
মিয়ানমারে মুসলমানদের ওপর বৌদ্ধদের পরিকল্পিত গণহত্যার প্রেক্ষাপটে ইসলাম ও বৌদ্ধ ধর্মের মধ্যে বহুপাক্ষিক সংলাপের এই আয়োজনকে স্বাগত জানান মিয়ানমারের প্রধান বৌদ্ধ-ভিক্ষু। এ ধরনের সংলাপ ধর্মগুলোর মধ্যে পারস্পরিক পরিচিতি জোরদার এবং উগ্রবাদীদের হাতে ধর্মের অপব্যবহারও রোধ করবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তেহরানে ইসলাম ও বৌদ্ধ ধর্ম বিষয়ক সংলাপের আয়োজন করে ইরানের ইসলামী সংস্কৃতি ও দিকনির্দেশনা বিষয়ক সংস্থা। বৌদ্ধ ও মুসলমানদের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার এবং সহিংসতা ও উগ্রবাদ ঠেকানো ছিল এই সংলাপের লক্ষ্য। ইরানের এই সংস্থা ধর্মগুলোর শিক্ষার আলোকে বিশ্বকে সন্ত্রাস ও সহিংসতামুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে আসছে।
তেহরানে অনুষ্ঠিত এই সংলাপে যোগ দেন মিয়ানমার, শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ডের সিনিয়র বৌদ্ধ নেতৃবৃন্দ এবং ইরানের মুসলিম চিন্তাবিদরা।
ইরানের ইসলামী সংস্কৃতি ও দিকনির্দেশনা বিষয়ক সংস্থার প্রধান মিয়ানমার ছাড়াও ইরাক ও সিরিয়ায় মুসলমানদের ওপর তাকফিরি-ওয়াহাবীদের সহিংসতার কথাও তুলে ধরেন। তাঁর মতে ধর্ম সম্পর্কে ভ্রান্ত বিশ্বাসই বিশ্বে সহিংসতা ও উগ্রবাদ ছড়িয়ে দিচ্ছে। আর ধর্মের নামে এইসব সহিংসতা চালানো হচ্ছে। আর এই পরিস্থিতি ঠেকাতে বিশ্বের ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে চিন্তাগত ঐক্য প্রতিষ্ঠা জরুরি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মানুষ যখন শান্তি বিস্তারের আশায় ধর্মগুলোর দিকে ঝুঁকে পড়ছিল তখন বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী চক্রগুলো ধর্মের অপব্যবহার শুরু করে। তারা ধর্মগুলোর মধ্যে বিচ্যুতি ঘটিয়ে ধর্মীয় ফেরকাবাজির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ নানা স্থানে নিজ স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে।
বৌদ্ধ ও ইসলাম ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা বিশ্বে অত্যন্ত বেশি। তাই এ দু’টি ধর্মের প্রভাব কমানোর জন্য জোর তৎপরতা শুরু করেছে সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব। ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টি আমেরিকা ও ব্রিটেনের একটি পুরনো কৌশল। এ ধরনের বিভেদ সৃষ্টির মাধ্যমে গত কয়েক বছরে মিয়ানমারে বহু সংখ্যক মুসলমানকে হত্যা এবং অনেককে শরণার্থিতে পরিণত করা হয়েছে। মিয়ানমারের মুসলমানদেরকে সেদেশের নাগরিকত্ব দিচ্ছে না মিয়ানমার সরকার। এর বিরুদ্ধে মুসলিম দেশগুলোতে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য দেশ মিয়ানমারের মুসলমানদেরকে সেদেশের নাগরিকত্ব দেয়ার আহ্বান জানায়। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে মুসলমানদেরকে বৌদ্ধদের সমান সুযোগ-সুবিধা দেয়ারও দাবি জানান তাঁরা।
উগ্র বৌদ্ধদের দ্বারা পশ্চিম মিয়ানমারে গত দুই বছরে বহু রোহিঙ্গা মুসলমান নিহত হয়। এই দেশটিতে পশ্চিমা পুঁজিবাদী কোম্পানিগুলোর প্রবেশের পরই এসব হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। এসব ঘটনার সঙ্গে মিয়ানমারের পুঁজি লুটেরা চক্রের গোপন হাত রয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন।
শার্লি হেবদো সন্ত্রাসবাদের উস্কানি দিচ্ছে : ইরান
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান বলেছে, ফ্রান্সের ব্যঙ্গ ম্যাগাজিন শার্লি হেবদো সন্ত্রাসবাদের সমর্থনে কাজ করছে এবং তাদের তৎপরতা নিতান্তই সন্ত্রাসবাদ উস্কে দিচ্ছে। ম্যাগাজিনটিতে নতুন করে মহানবী (সা.)-এর কার্টুন ছাপানোর প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারজিয়েহ আফখাম এ কথা বলেন।
গত ১৪ জানুয়ারি সাপ্তাহিক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ম্যাগাজিনটি বার বার মহানবীর কার্টুন ও ইসলামবিরোধী তৎপরতা চালিয়ে বিশ্বের মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে চলেছে। এ ধরনের কার্যকলাপ বন্ধ করতে এবং ইসলাম ধর্মের প্রতি সম্মান দেখাতে তিনি ইউরোপের দেশগুলোর প্রতি জোরালো আহ্বান জানান।
মারজিয়েহ আফখাম বলেন, ‘ফ্রান্সে যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে তার নিন্দা জানিয়েছে তেহরান; একইসঙ্গে ম্যাগাজিনটির বার বার উস্কানিমূলক কাজও বন্ধ করতে হবে বলে আমরা মনে করি।’ তিনি আরো বলেন, ঐশী ধর্মগুলোর প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা এবং নবী-রাসূলদের প্রতি সম্মান দেখানো হচ্ছে মৌলনীতি; ইউরোপের সরকারগুলো এসব বিষয়ে বিশেষ নজর রাখবে বলে ইসলামী ইরান আশা করে। সে কারণে সন্ত্রাসবাদ উস্কে দেয় এমন নীতি সমর্থন করা থেকে সরে এসে ইউরোপীয় সরকারগুলোর উচিত ঐশী ধর্মগুলোর পবিত্রতা রক্ষা করার নীতি গ্রহণ করা। মারজিয়েহ আফখাম বলেন, ইউরোপীয় সরকারগুলোর ভুল নীতির জন্য বিশ্বের বহু দেশকে খেসারত দিতে হচ্ছে এবং ইউরোপীয় কর্মকর্তারা তা স্বীকারও করেন।
বার্লিনে ইসলাম-ভীতি সম্পর্কে সম্মেলন অনুষ্ঠিত
জার্মানির রাজধানী বার্লিনে গত ৬ ফেব্রুয়ারি (২০১৫) তারিখে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে ইসলাম-ভীতি সম্পর্কে এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ইরানী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও জার্মানির ইসলামিক স্টাডিজ ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে ‘ইসলাম, ইসলামোফোবিয়া ও চরম পন্থা’ শীর্ষক এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সম্মেলনে জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও ইরানের বেশ কয়েক জন মনীষী ও বিশ্লেষক এবং একদল জার্মান ছাত্র ও বুদ্ধিজীবী অংশগ্রহণ করেন। বার্লিনের হোটেল স্টেগ্লিয্ ইন্টারন্যাশনাল-এ অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে ‘চরমপন্থার সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণসমূহ এবং এর ফলাফল’, ‘প্রচারমাধ্যম ও তার একদেশদর্শী নীতি’, ‘পাশ্চাত্যসমাজের ইসলাম-ভীতি ও ফ্যান্টাসি’, ‘ইসলাম ও তার সঠিক অনুধাবন’ প্রভৃতি বিষয়কে কেন্দ্র করে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সম্মেলনে বার্লিনের ইসলামিক স্টাডিজ ফাউন্ডেশনের সভাপতি মেহ্দী ঈমানীপুর বলেন যে, প্যারিসে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের পর লিবারাল এলিটদের মধ্যে ইসলামবিরোধী মনোভাব বিশেষভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এই যে, বেশির ভাগ অমুসলিমেরই ইসলাম ও মুসলিমসমাজ সম্পর্কে খুব সামান্যই ধারণা আছে বা আদৌ কোনো ধারণা নেই। এ কারণেই ইসলামী বিপ্লবের রাহ্বার ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার যুবসমাজের উদ্দেশে লিখিত তাঁর খোলা চিঠিতে ইসলামবিরোধী অপপ্রচারের গুরুত্বের পরিপ্রেক্ষিতে ইসলাম সম্পর্কে ইসলামের মূল তথ্যসূত্র থেকে জানার জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
জনাব ঈমানীপুর বলেন, যেসব লোক ইসলামের পবিত্র সূত্রের বক্তব্যের অযৌক্তিক ও অমানবিক ব্যাখ্যা করে থাকে তারা সমগ্র মুসলিম জনগণের মধ্যকার অত্যন্ত ক্ষুদ্র কয়েকটি গোষ্ঠী এবং অনেক ক্ষেত্রেই এসব গোষ্ঠী কোনো কোনো দেশের গোয়েন্দা সংস্থার তত্ত্বাবধানে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে থাকে।
এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন যে, গত জানুয়ারি মাসে হাজার হাজার জার্মান নাগরিক ও ধর্মীয় নেতা ইসলাম-ভীতিবিরোধী এক র্যালিতে অংশগ্রহণ করেন; এদের মধ্যে ছিলেন জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল ও প্রেসিডেন্ট জোয়াচিম্ গাউক্। এ র্যালিতে প্রদত্ত বক্তব্যে চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল জার্মানিতে ইসলামবিরোধী তৎপরতার নিন্দা করেন এবং মুসলমানদেরকে বা অন্য কোনো সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে কোণঠাসা করার অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকার জন্য জার্মানদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বিশেষভাবে চরমপন্থি পেগিডা (চঊএওউঅ) গ্রুপের ইসলামবিরোধী তৎপরতার নিন্দা করেন।
উল্লেখ্য, পেগিডা গ্রুপ, গ্রুপটির নিজের ভাষায়, পাশ্চাত্যের ইসলামীকরণের বিরুদ্ধে মোকাবিলা করছে। পেগিডা হচ্ছে এ গোষ্ঠীটির জার্মান নামের সংক্ষেপণÑ যার ইংরেজি অনুবাদ হচ্ছে চধঃৎরড়ঃরপ ঊঁৎড়ঢ়বধহং ধমধরহংঃ ঃযব ওংষধসরুধঃরড়হ ড়ভ ঃযব ডবংঃ.
ডি-৮ সদস্যদেশগুলোর মধ্যে শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে সম্পর্ক বৃদ্ধির প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করার জন্য ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের আহ্বান
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সরকার ডি-৮ গ্রুপের সদস্যদেশগুলোর মধ্যে শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
সম্প্রতি তেহরানে অনুষ্ঠিত ডি-৮ শিল্পমন্ত্রীদের চতুর্থ সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সরকারের শিল্প, খনিজ সম্পদ ও বাণিজ্যমন্ত্রী মোহাম্মাদ রেযা নে‘আমত্যাদেহ্ এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ডি-৮ সদস্যদেশগুলোর মধ্যকার শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পর্কের স্তর আরো উন্নীত করার লক্ষ্যে পরস্পরের মধ্যে নিহিত সম্ভাবনাকে চিহ্নিত করা ও তা কাজে লাগানো এক অপরিহার্য প্রয়োজন।
জনাব নে‘আমত্যাদেহ্ স্মরণ করিয়ে দেন যে, ডি-৮ গ্রুপের সদস্য দেশসমূহের সরকারগুলো পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও ঐক্যের ভিত্তিতে আট দেশের এ গ্রুপটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
জনাব নে‘আমত্যাদেহ্ আরো বলেন, টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের অধিকারী হওয়া ও তা ধরে রাখার বিষয়টি হচ্ছে একটি বহুমুখী বিষয়Ñ কেবল শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমেই যাতে উপনীত হওয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা (ইসিও) ও জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এ ক্ষেত্রে একটি বিরাট ভূমিকা পালন করে থাকে। তিনি আরো বলেন, এ প্রেক্ষাপটে ডি-৮ সদস্যদেশগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও শিল্পক্ষেত্রে উন্নয়নে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিই হচ্ছে সদস্যেেদশগুলোর মধ্যকার বৈঠক ও সম্মেলন সমূহের লক্ষ্য।
এ প্রসঙ্গে তিনি ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের ভূমিকার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, ইসলামী ইরান বিগত কয়েক বছরে পাশ্চাত্যের চাপিয়ে দেয়া নিষেধাজ্ঞাসহ বহু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও দেশের বিশেষজ্ঞগণ, গবেষকগণ ও ইঞ্জিনিয়ারদের অক্লান্ত প্রচেষ্টা এবং আকর্ষণীয় পুঁজি বিনিয়োগের কারণে দেশ পেট্রো-রসায়ন উৎপাদন বৃদ্ধি, আধুনিক প্রযুক্তি স্থানান্তর, যন্ত্রপাতির উৎপাদন বৃদ্ধি ও নির্মাণ খাতের উন্নয়ন সহ সকল ক্ষেত্রেই বিরাট সাফল্যের অধিকারী হয়েছে।
উল্লেখ্য, ডি-৮ গ্রুপ হচ্ছে বিরাট জনসংখ্যা অধ্যুষিত আটটি মুসলিমপ্রধান উন্নয়নশীল দেশকে নিয়ে গঠিত একটি অর্থনৈতিক উন্নয়নবিষয়ক সহযোগিতা সংস্থা। বাংলাদেশ, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও তুরস্ক এ সংস্থার সদস্য। অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা ডি-৮-এর লক্ষ্য হচ্ছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এর সদস্যদেশগুলোর অবস্থানের উন্নয়ন, বাণিজ্যিক সম্পর্কের বহুমুখীকরণ ও এ জন্য নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কাজে অংশগ্রহণের দ্রুতায়ন ও জীবন মানের উন্নয়ন। বস্তুত ডি-৮ গ্রুপ যেসব দেশকে নিয়ে গঠিত সেদিকে দৃষ্টি দিলে এটা সুস্পষ্ট যে, এটি কোনো আঞ্চলিক সংগঠন নয়, বরং একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। এ সম্মেলনে বাংলাদেশের শিল্পমন্ত্রী জনাব আমির হোসেন আমু বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।
বিনা ভিসায় প্রতিবেশী দেশগুলোর নাগরিকদের ভ্রমণের সুযোগ দেবে ইরান
ইরান বলেছে, প্রতিবেশী দেশগুলোর নাগরিকদের বিনা ভিসায় ইরান ভ্রমণ করতে দেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে তেহরান। প্রতিবেশী দেশগুলো ভ্রমণে ইরানী নাগরিকদের ভিসার প্রয়োজনীয়তা প্রত্যাহার করা হলেই একই পদক্ষেপ গ্রহণ করবে ইরান।
ইরানের কনস্যুলার, সংসদ এবং প্রবাসী ইরানী নাগরিক বিষয়ক উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান কাশকাভি এ ঘোষণা দেন। গত ৯ জানুয়ারি স্বাস্থ্য, পর্যটন বা চিকিৎসার জন্য ইরানে সফর সংক্রান্ত এক সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে কুয়েতের উদাহরণ তুলে ধরেন ইরানের শীর্ষস্থানীয় এই কর্মকর্তা। কুয়েত সফরের জন্য ইরানী নাগরিকদের ভিসার আর প্রয়োজন হয় না; এ প্রেক্ষাপটে কুয়েতি নাগরিকদের বিনা ভিসায় ইরান সফরের সুযোগ করে দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
কাশকাভি আরো জানান, সাধারণ ভিসার জন্য যে পরিমাণ ফি দিতে হয়, স্বাস্থ্য ও পর্যটন ভিসার ফি’র পরিমাণ তার প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে ইরান। আর এর মধ্য দিয়ে বিদেশীদের তেহরান সফরে ইরানের সহযোগিতার মনোভাবের বিষয়টি ফুটে উঠেছে বলে তিনি জানান।
ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লেবাননের পাশে থাকবে ইরান : ইরানী পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ইহুদিবাদী ইসরাইলের আগ্রাসন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইরান সবসময় লেবাননের পাশে থাকবে বলে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফ ঘোষণা করেছেন। গত ৮ জানুয়ারি ইরানের রাজধানী তেহরানে লেবাননের ধর্মীয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ ঘোষণা দেন। জাওয়াদ জারিফ বলেন, ইহুদিবাদী ইসরাইলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতি সমর্থনের পাশাপাশি লেবাননের অভ্যন্তরে ঐক্য ও সংহতি জোরদারের প্রতি ইরান সমর্থন দিয়ে আসছে।
তিনি আরো বলেন, ইরানের পররাষ্ট্রনীতির মূলনীতি হলো প্রকৃত ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করা এবং সাম্প্রদায়িক বিভক্তির ঊর্ধ্বে উঠে ফিলিস্তিনীদের পাশে থাকা। এ সময় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকা শেখ আহমাদ আল-জেইন বলেন, লেবাননের ধর্মীয় নেতা ও বুদ্ধিজীবীরা সব সময় মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং ফিলিস্তিনীদের অধিকার আদায়ের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আসছে।
লেবাননের প্রতিনিধি দলে ছিলেন ইসলামিক অ্যাকশন ফ্রন্টের মহাসচিব শেখ জাহির আল-জায়িদ। লেবানন ও ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন দেয়ার জন্য ইরানের প্রশংসা করেন তিনি।
‘ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে চাপের মুখে পশ্চিমারা’- হেইন্জ গার্টনার
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার বিষয়ে চাপের মুখে পড়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো ইরানের সঙ্গে কাজ করতে চায়। সে কারণে পশ্চিমাদের ওপর এই চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
অস্ট্রিয়ার ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের চেয়ারম্যান অধ্যাপক হেইন্জ গার্টনার এ কথা বলেন। গত ৪ জানুয়ারি ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা ইরনাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে গার্টনার বলেন, বহু পশ্চিমা কোম্পানি ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে এসব কোম্পানি অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে লাভবান হতে পারবে।
অধ্যাপক গার্টনার সম্প্রতি তেহরানে অনুষ্ঠিত উগ্রপন্থা ও সন্ত্রাসবাদ বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেন। ইরানের উন্নয়নশীল অর্থনীতির কথা উল্লেখ করে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, তেহরানের সামনে বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে উঠে আসার।
‘ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষায় ইরাককে সাধ্যমতো সহায়তা করবে ইরান’- ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হোসেইন সালামি
ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি’র সেকেন্ড ইন কমান্ড ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হোসেইন সালামি বলেন, ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষায় ইরাককে সাধ্যমতো সহায়তা করবে ইরান। গত ১ জানুয়ারি ইরাকের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খালেদ আল-ওবেদির সঙ্গে তেহরানে বৈঠকের সময় এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, সংহতি, জাতীয় নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং সামাজিক ভারসাম্য রক্ষায় ইরাকের কেন্দ্রীয় সরকারকে সহায়তার অংশ হিসেবে বাগদাদকে প্রশিক্ষণ এবং উপদেষ্টামূলক সহযোগিতা করা হবে। এ কাজে ইরান সাধ্যমতো সবই করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একই সঙ্গে জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতাও হস্তান্তর করবে তেহরান।
তাকফিরি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ইরাকের সেনাবাহিনী ও জনগণের সাম্প্রতিক বিজয় অর্জনকে প্রতিশ্রুতিশীল বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ইরাকের অগ্রগতি এবং প্রবৃদ্ধির বৃহৎ সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুসলিম বিশ্বে ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব থাকায় আঞ্চলিক এবং বহিঃশক্তিগুলো দেশটির ওপর নজর রাখছে।
এ সময়ে ইরাকের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খালেদ আল-ওবেদি বলেন, মুসলিম বিশ্বের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে আইএসআইএল। মুসলিম বিশ্বের পক্ষ হয়ে ইরাক এসব সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে লড়ছে বলেও জানান তিনি। এ ছাড়া আইএসআইএল’র বিরুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন কথিত জোটের দুর্বল ভূমিকা এবং তৎপরতারও নিন্দা করেন ওবেদি।
সন্ত্রাস নির্মূলে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার আহ্বান জানালো ইরান ও ইরাক
ইরান ও ইরাক সবক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো বিস্তারের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে এবং গোলযোগপূর্ণ মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাসের হুমকি মোকাবেলায় ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে। ১৩ জানুয়ারি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন তেহরান সফরে আসা ইরাকি তেলমন্ত্রী আদিল আবদুল মাহদি আল-মুনতাফিকি। রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রসহ দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক সম্পর্ক আরো জোরদারের বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য এ বৈঠক হয়।
বৈঠকে সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ে সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করে দু’পক্ষ বলেছে, মধ্যপ্রাচ্য থেকে সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে এ অঞ্চলের সব দেশকে একযোগে কাজ করা জরুরি হয়ে উঠেছে।
ইরানের সঙ্গে হামাসের সম্পর্ক কখনই ছিন্ন হয় নি : মারজুক
ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের পলিট ব্যুরোর সদস্য আবু মারজুক বলেন, ইরানের সঙ্গে তাঁর সংগঠনের সম্পর্ক কখনই চ্ছিন্ন হয় নি। ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪ তুরস্কের সরকারি বার্তা সংস্থা আনাতোলিয়াকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি ইরানের সঙ্গে হামাসের সম্পর্ক, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সন্ত্রাসী তালিকা থেকে হামাসের নাম বাদ দেয়া, গাযা উপত্যকার পুনর্গঠন এবং ইহুদিবাদী ইসরাইলের অমানবিক আগ্রাসনের বিষয়ে কথা বলেন।
আবু মারজুক জানান, হামাসের প্রতিনিধিদল সবসময় ইরান সফর করে থাকে এবং ইরানের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক কখনই ছিন্ন হয় নি। ফিলিস্তিনী আদর্শের প্রতি ইরানের সবসময়ের সমর্থনের কথা উল্লেখ করে হামাস নেতা বলেন, তেহরান সবসময় ফিলিস্তিনী জনগণকে সমর্থন করে এসেছে এবং সবসময় মনে করে ফিলিস্তিনীদের হারিয়ে যাওয়া অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।
আবু মারজুক বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায় ফেলে মূলত হত্যাযজ্ঞ চালানোর জন্য ইহুদিবাদী ইসরাইলকে সবুজ সংকেত দিয়েছিল। যাহোক, এখন যে তারা হামাসকে কালো তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে তাদের এ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। আমেরিকারও উচিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের এ আদর্শ অনুসরণ করা।’
গাযার পুনর্গঠন সম্পর্কে হামাসের এ নেতা বলেন, খুবই সীমিত সংখ্যক ঘরবাড়ি ঠিক করা সম্ভব হয়েছে। ফিলিস্তিনী অন্তর্বর্তী জাতীয় সরকারের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস গাযাকে তাঁদের কাঁধে বিরাট বোঝা বলে মনে করেন।
পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যায় ইসরাইলি চেষ্টা ব্যর্থ করেছে ইরান
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের একজন পরমাণু বিজ্ঞানীকে গুপ্ত হত্যার বিষয়ে ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দিয়েছে ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি। গত ৩ জানুয়ারি এ কথা জানান আইআরজিসি’র প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল বাকেরি।
তিনি জানান, ইহুদিবাদী ইসরাইল গত দুই বছরের মধ্যে একজন পরমাণু বিজ্ঞানীকে গোপনে হত্যার চেষ্টা চালায়, কিন্তু আইআরজিসি’র নিরাপত্তা কর্মীরা সময়মতো উপস্থিত হওয়ায় সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
এর আগে ইরানের যেসব পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করা হয়েছে তাঁদের সবাই ইহুদিবাদী ইসরাইলের নিয়োগ করা গুপ্তঘাতকের হাতে নিহত হয়েছেন বলে জানা যায়। ২০১২ সালে প্রকাশিত একটি বইয়ে সিবিএস নিউজের ড্যান রাভিব এবং ইসরাইলের সাংবাদিক ইয়োসি মেলম্যান বলেন, ইসরাইলের গুপ্তচরেরা ইরানের অন্তত চারজন পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে।
আইএইএ’র সব প্রশ্নের জবাব দিয়েছে ইরান : আলী আকবর সালেহি
গত ১১ জানুয়ারি ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থা বা এইওআই’এর প্রধান আলী আকবর সালেহি বলেছেন, তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ’র সব প্রশ্নের জবাব দিয়েছে ইরান।
তিনি বলেন, আইএইএ’র কারিগরি ১৮টি প্রশ্নের জবাব দিয়েছে ইরান, কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলো ইরানের পরমাণু ইস্যুর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসকে যুক্ত করেছে।
পরমাণু ইস্যুকে রাজনীতিকরণের কারণে ছয় জাতিগোষ্ঠী এখনো এ সংক্রান্ত ইরানের জবাবের প্রত্যাশা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছয় জাতিগোষ্ঠী বলেছে, দু’টি প্রশ্ন নিয়ে আলোচনার অবকাশ এখনো আছে, কিন্তু আইএইএ ইরানের প্রায় সব জবাব গ্রহণ করেছে।
আলী আকবর সালেহি বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছার মধ্য দিয়েই কেবল ইরানের পরমাণু ইস্যুর সুরাহা হতে পারে। তিনি বলেন, ইরানের পরমাণু ইস্যু মোটেও কারিগরি কোনো বিষয় নয়। কেবল রাজনৈতিক সদিচ্ছার মধ্য দিয়ে তা নিষ্পন্ন হতে পারে।
জার্মানি এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য চীন, রাশিয়া, আমেরিকা, ফ্রান্স ও ব্রিটেনকে নিয়ে ছয় জাতিগোষ্ঠী গঠিত।
আরো ২টি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করবে ইরান : রুহানি
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেন, তাঁর দেশ আরো দু’টি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করবে। পরমাণু প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের লক্ষ্যে দক্ষিণাঞ্চলীয় নগরী বুশেহরে এ দুই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে বলে ঘোষণা করেন তিনি। গত ১৪ জানুয়ারি বুশেহর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শনকালে এ ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট রুহানি।
ড. হাসান রুহানি বলেন, অন্যান্য দেশের পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের থেকে বুশেহর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পার্থক্য রয়েছে। কারণ, এটি হলো ইরানী জনগণের প্রতিরোধের প্রতীক। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ ও চালু করার মধ্য দিয়ে প্রমাণ করা হয়েছে যে, কোনো লক্ষ্য অর্জনে যদি জাতির ইচ্ছা থাকে, তবে জাতি সে অনুযায়ী কাজ করবে এবং তার অধিকার রক্ষা ও লক্ষ্য অর্জনে রুখে দাঁড়াবে।
প্রেসিডেন্ট রুহানি আরো বলেন, ইরান পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার এবং পরমাণু শক্তি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায় তারই উদাহরণ হয়ে উঠেছে এ কেন্দ্র।
বুশেহর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বর্তমানে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে এবং বাড়তি আরো ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা এ কেন্দ্রের রয়েছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উৎপাদনে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষে
বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অঙ্গনে উৎপাদনের ক্ষেত্রে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহের মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছে। ইরান সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আবদুল হোসাইন ফেরেইদুন্ ‘প্রতিরোধমূলক অর্থনীতিতে বিজ্ঞানভিত্তিক কোম্পানিসমূহের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণে এ তথ্য জানান।
তেহরানের ফার্স বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পার্কে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে ড. আবদুল হোসাইন ফেরেইদুন্ উল্লেখ করেন যে, বর্তমানে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে চল্লিশ লাখ ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকা অধ্যয়ন ও শিক্ষাদানে ব্যস্ত রয়েছেন। তিনি বলেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সরকার দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মানগত ও সংখ্যাগত উভয় ধরনের উন্নয়নের লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
নতুন নতুন আইডিয়া উদ্ভাবনে সক্ষম ছাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষণ প্রদানে ও বিনিয়োগ উদ্যোগ সৃষ্টিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভূমিকার ওপর আলোকপাত করে ড. ফেরেইদুন্ উল্লেখ করেন যে, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করেছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজ নিজ পলিসিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাধন করে এ অগ্রাধিকার বাস্তবায়নের পলিসি গ্রহণের জন্য পরামর্শ দেন।
তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের বৈজ্ঞানিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অবশ্যই যুগের চাহিদার প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে। তিনি বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বর্তমান চাহিদার প্রতি দৃষ্টি রেখে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের প্রধান অ্যাকাডেমিক বিষয় সমূহ, অভিসন্দর্ভ সমূহ ও গবেষণা প্রকল্প সমূহের অবশ্যই মানোন্নয়ন করতে হবে।
বিপ্লব-পরবর্তীকালে ইরানে সাক্ষরতার হার বেড়েছে শতভাগ
ইরানের সাক্ষরতা আন্দোলনের প্রধান আলি বাকেরযাদে বলেছেন, ইসলামী বিপ্লব পরবর্তীকালে দেশে সাক্ষরতার হার শতকরা একশ’ ভাগ বেড়েছে। গত ২ জানুয়ারি রেডিও তেহরানের সংবাদদাতার সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ইরানে সাক্ষরতার উন্নয়নের গতি উন্নত দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি।
ইরানে ‘জাতীয় সাক্ষরতা সপ্তাহ’ উপলক্ষে আলি বাকেরযাদে আরও বলেন, নিরক্ষরদেরকে সাক্ষর করে তোলার লক্ষ্যে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণামূলক বিচিত্র কর্মকৌশল গ্রহণ করা হয়েছে।
বিদেশী ৪০ কোম্পানি ইরানের গ্যাস শিল্পে বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের গ্যাস শিল্প খাতে অন্তত ৪০টি বিদেশী কোম্পানি পুঁজি বিনিয়োগ করার জন্য প্রস্তুত বলে ঘোষণা করেছে। গত ৭ জানুয়ারি এ কথা জানান ইরানের জাতীয় গ্যাস কোম্পানির প্রধান আসগার সোহেলিপুরি।
ইরানের এ কর্মকর্তা জানান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, চীন ও রাশিয়ার এসব কোম্পানি ইরানে বিনিয়োগের বিষয়ে ব্যাপক আগ্রহী। তিনি আরো জানান, ইরানের গ্যাস খাতে বিনিয়োগের বিষয়ে এসব কোম্পানি ইরানী কর্মকর্তাদের সঙ্গে ৫০টিরও বেশি বৈঠক করেছে।
আসগার সোহেলিপুরি বলেন, এসব কোম্পানি মূলত পাইপ তৈরি এবং শোধনাগারের উন্নয়ন ও গ্যাস প্রেসার বুস্টার স্টেশন তৈরি করে থাকে। তিনি জানান, ইরান অন্তত চারটি গ্যাস ট্রাংকলাইনে বিনিয়োগ আনার চিন্তা করছে।
উল্লেখ্য, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাসের অধিকারী দেশ।
ইরানে পাওয়া গেল নতুন সোনার খনি
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মাশহাদ প্রদেশে আবিষ্কৃত হয়েছে নতুন সোনার খনি। ইরানের শিল্প, খনি ও বাণিজ্য সংস্থার প্রাদেশিক প্রধান রাজিয়েহ আলী রেযায়ি গত ৬ জানুয়ারি এ তথ্য জানান। এটি হচ্ছে এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত পঞ্চম সোনার খনি।
নতুন এ সোনার খনির অবস্থান হচ্ছে মাশহাদ প্রদেশের রাজধানী থেকে ২১৭ কিলোমিটার দক্ষিণে কাশমার শহরের কাছে। সরকারি কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী নতুন এ খনিতে ৮৮৯ হাজার টন স্বর্ণপাথর রয়েছে।
খনিটি আবিষ্কারের জন্য ইরান স্থানীয় মুদ্রায় ১৪০ কোটি রিয়াল খরচ করেছে। শিগগিরি সেখান থেকে উৎপাদনের কাজ শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পারস্য উপসাগরে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বিপ্লবী রক্ষী বাহিনীর নতুন র্পামিডা ক্রু-বোটের যাত্রা শুরু
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বিপ্লবী রক্ষী বাহিনী পারস্য উপসাগরে তার নতুন র্পামিডা ক্রু-বোট নামিয়েছে। নতুন মডেলে দেশের অভ্যন্তরে নির্মিত এ বোটটি গত ২৯ জানুয়ারি (২০১৫) তারিখে পারস্য উপসাগরে যাত্রা শুরু করে। ইসলামী বিপ্লবের রক্ষী বাহিনী (আইআরজিসি)-এর নৌবাহিনীর অধিনায়ক রিয়ার অ্যাডমিরাল আলী ফাদাভী-র উপস্থিতিতে দক্ষিণ ইরানের বন্দর নগরী বুশেহ্র থেকে এটিকে পারস্য উপসাগরের পানিতে নামানো হয়।
বার্তা সংস্থা সেপাহ্ নিউজ পরিবেশিত সংবাদ অনুযায়ী র্পামিডা-৬ নামক এ হাল্কা নৌযানটি যাত্রী ও সরঞ্জাম পরিবহণের উপযোগী করে তৈরি একটি বিশেষ ধরনের নৌযান। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫ নটিক্যাল মাইল গতির অধিকারী এ নৌযানটি একবারে ৭৩ জন যাত্রী ও আট জন ক্রু বহনে সক্ষম।
উল্লেখ্য, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান র্পামিডা সিরিজের প্রথম নৌযান র্পামিডা-১ নির্মাণ করে ২০১০ সালে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসলামী ইরান দেশের অভ্যন্তরে নির্মিত বেশ কয়েকটি সাবমেরিন, জাহায ও ‘জামারান’ নামক ডেস্ট্রয়ার সহ কয়েকটি যুদ্ধজাহায চালু করে। উল্লেখ্য, জামারান ডেস্ট্রয়ার হচ্ছে তরঙ্গবিক্ষুব্ধ সমুদ্রে চলতে সক্ষম একটি য্দ্ধুজাহায। ইরানী বিশেষজ্ঞগণ এ যুদ্ধ জাহাযটির ডিজাইন তৈরি করেন ও এটি নির্মাণ করেন এবং এটি হচ্ছে স্টেট্ অব্ দি আর্ট নেভিগেশন যন্ত্রপাতি ও জটিল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা সুসজ্জিত একটি যুদ্ধজাহায।
উল্লেখ্য, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান এ পর্যন্ত ফাতেহ্, গার্দী, কায়েম, নহাঙ্গ, তারেক ও সীনা নামক সাবমেরিনসহ দেশের অভ্যন্তরে নির্মিত বিভিন্ন শ্রেণির বহু উন্নত মানের সাবমেরিন সমুদ্রে নামিয়েছে।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান কর্তৃক ‘সায়েকা’ জঙ্গী জেট বিমানের ব্যাপক উৎপাদন শুরু
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বিমান বাহিনী দেশের অভ্যন্তরে ডিজাইনকৃত ও নির্মিত ‘সায়েকা’ নামক জঙ্গী জেট বিমানের ব্যাপক উৎপাদন শুরু করেছে। ইরানী বিমান বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হোসাইন চিত্ফোরূশ গত ৪ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করেন যে, সায়েকা জঙ্গী জেট বিমানের ব্যাপক উৎপাদন ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, ইরানী বিমান বাহিনী স্বীয় বিবর্তন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক স্কোয়াড্রন সায়েকা জঙ্গী জেট বিমান উৎপাদন করেছে। তিনি জানান যে, এ বিমানগুলো ইতিমধ্যেই দেশের আকাশ সীমানায় অনবরত তথ্য সংগ্রহ মিশনের কাজ করে যাচ্ছে।
জেনারেল চিত্ফোরূশ বলেন, ইরানী বিমান বাহিনীতে এ নতুন জঙ্গী জেটগুলো যুক্ত হওয়ার ফলে এগুলো ইরানকে এ ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতার পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। তিনি আরো বলেন, দেশের সশস্ত্র বাহিনীর প্রয়োজনে ভবিষ্যতে পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে ইরানী বিমান বাহিনী এ বোম্বার বিমানের আরো মানোন্নয়ন করবে।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে একান্তই প্রাথমিক পর্যায়ের এক ধরনের জঙ্গী বিমান হিসেবে সায়েকা বিমান নির্মাণের তথ্য প্রকাশ করা হয়। পরে ২০০৬ সাল নাগাদ এটি অভিযানে ব্যবহারযোগ্য পর্যায়ে উন্নীত হয়। সায়েকা হচ্ছে ইরানের অভ্যন্তরে নির্মিত জঙ্গী বিমানগুলোর মধ্যকার দ্বিতীয় ধরনের জঙ্গী বিমানÑ যাকে অনেকে ইরানী এফ-১৮ জঙ্গী বিমান বলেও উল্লেখ করে থাকেন।
এ বোম্বার বিমানটি আকাশে শত্রু পক্ষের বিমান ও ভূমিতে অবস্থিত লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করতে এবং প্রচুর পরিমাণে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারূদ বহন করতে সক্ষম।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে অনেকগুলো বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে এবং দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় সামরিক সরঞ্জামাদি উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতার অধিকারী হয়েছে। তবে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সরকার বহু বার ঘোষণা করেছে যে, তার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার লক্ষ্য অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে হুমকি সৃষ্টি করা নয়, বরং পুরোপুরি নিরোধমূলক।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের রেকর্ড পরিমাণ গ্যাস উৎপাদন
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সরকার ঘোষণা করেছে যে, গত ২০১৩ সালের জুন থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ইরান তার দক্ষিণ র্পাস্ গ্যাস উৎপাদন এলাকার পাঁচটি অগ্রাধিকারভিত্তিক গ্যাস প্রকল্প থেকে গড়ে দৈনিক মোট দশ কোটি পঞ্চাশ লাখ ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করেছে।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের জাতীয় তেল কোম্পানি (এনআইওসি)-এর পক্ষ থেকে গত ৭ ফেব্রুয়ারি (২০১৫) তারিখে এ তথ্য ঘোষণা করা হয়। এনআইওসির ঘোষণায় আরো উল্লেখ করা হয় যে, উক্ত প্রকল্পসমূহের ১২, ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ নং ফেস্-এর উৎপাদন আগামী এপ্রিল (২০১৫)-এর আগেই শুরু হবে এবং এর ফলে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের দৈনিক গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণ আরো দেড় কোটি ঘনফুট বৃদ্ধি পাবে। এনআইওসি-র এক বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানিয়ে একে ইরানের তেলশিল্পের ইতিহাসের এক নযিরবিহীন ঘটনা বলে অভিহিত করা হয়।
কোম্পানি আরো জানায় যে, গত বছর শীতকালে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান প্রায় ১৬ কোটি ঘনমিটার গ্যাস ঘাটতির সম্মুখীন হয়। দক্ষিণ র্পাস্-এর পাঁচটি অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পে অতিরিক্ত গ্যাস উৎপাদিত হওয়ার ফলে চলতি শীত মওসূমে ইরানে গ্যাসের কোনো ঘাটতি দেখা দেবে না।
এনআইওসি-র বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয় যে, এ কোম্পানি আগামী এপ্রিল (২০১৫)-এর আগেই আরো সাতটি নতুন তেল-গ্যাস প্লাটফর্ম চালু করবে; এগুলোর মধ্যে তিনটি হবে ১২ নং ফেস-এর প্লাটফর্ম ও বাকি চারটি হবে ১৫ ও ১৮ নং ফেস্-এর প্লাটফর্ম।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয় যে, আগামী তিন মাসের মধ্যে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের মোট প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক ১০ কোটি ঘনমিটার বৃদ্ধি পাবে। এরপর ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসের আগে দৈনিক গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণ আরো ১০ কোটি ঘনমিটার বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, পারস্য উপসাগরে অবস্থিত দক্ষিণ র্পাস্ গ্যাসক্ষেত্রের আয়তন ৯ হাজার ৭০০ বর্গ কিলোমিটার এবং এর মধ্যে ৩ হাজার ৭০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের উপকূলীয় পানিসীমায় এবং বাকি ৬ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা কাতারের উপকূলীয় পানিসীমায় অবস্থিত। প্রাক্কলিত হয়েছে যে, এ গ্যাসক্ষেত্রটিতে বিপুল পরিমাণ প্রকৃতিক গ্যাস মওজূদ রয়েছে যা বিশ্বের মোট গ্যাস মওজূদের শতকরা আট ভাগ এবং আনুমানিক এক হাজার আটশ’ কোটি ব্যারেল কন্ডেন্সেট্।
লাইট্ থার্মাল্ ইন্স্যুলেটর উৎপাদনে ন্যানোফাইবার ব্যবহারে ইরানী বিজ্ঞানীদের সাফল্য
তেহরানের আমীর কাবীর প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ইরানী বিজ্ঞানিগণ থার্মাল্ ইন্স্যুলেটরের কার্য ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং এর উৎপাদন ব্যয় ও চূড়ান্ত মূল্য হ্রাসের লক্ষ্যে এর কাঠামোতে ন্যানোফাইবার ব্যবহারের গবেষণায় সাফল্যের অধিকারী হয়েছেন।
ইরানী বিজ্ঞানীদের এ গবেষণার ফলে একদিকে যেমন এ ধরনের ইন্স্যুলেটরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে অন্যদিকে এর ঘনত্ব ও ওজন হ্রাস পেয়েছে। ফলে এ দ্রব্যটি নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা যাবে।
উল্লেখ্য, সাধারণভাবে যেসব থার্মাল্ ইন্স্যুলেটর ব্যবহার করা হয় সেগুলোতে নিম্ন কার্য ক্ষমতা, বেশি ওজন ও পুরুত্ব, বড় আকার ও উচ্চ উৎপাদন ব্যয় সহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ও দুর্বল দিক রয়েছে। এ সব সমস্যা ও দুর্বল দিকের কথা বিবেচনা করে ইরানী গবেষকগণ এতে ন্যানো দ্রব্যাদি ব্যবহার করে এর মধ্য থেকে অন্তত কতগুলো সমস্যা ও দুর্বল দিকের নিরসনের জন্য চেষ্টা চালান এবং তাতে সাফল্যের অধিকারী হন।
এ দ্রব্যটি প্রধানত ভবন নির্মাণ শিল্পে মেঝেতে থার্মাল্ ইন্স্যুলেটর হিসেবে, বিশেষ করে বিল্ডিং ভাল্বে ও এনার্জি লস্ হ্রাস করণে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে এটি হাসপাতালে ব্যবহার্য স্থানান্তরযোগ্য টেম্পারেচার কন্ট্রোলিং বক্সেও ব্যবহার করা যাবে।
পূর্ব থেকে প্রচলিত একই ধরনের গবেষণাসমূহে সাধারণত ন্যানো-ক্লে ও এয়ারোজেল্ ন্যানো-কম্পোজিট্স্ সমৃদ্ধ থার্মাল্ ইন্স্যুলেটর ব্যবহার করা হয়। এ সব দ্রব্য ব্যবহার করে যথাযথ থার্মাল্ ইন্স্যুলেটর উৎপাদন করা হয়। কিন্তু এ সব ক্ষেত্রে ইন্স্যুলেটরের ওজন ও পুরুত্ব হ্রাসের বিষয়টি চিন্তা করা হয় নি। এ কারণে এ পণ্যটির পক্ষে বাজারে বিদ্যমান থার্মাল ইন্স্যুলেটরের সাথে প্রতিযোগিতা করা সম্ভবপর হয় নি। কিন্তু আবিষ্কৃত এ সর্বশেষ ধরনের ইন্স্যুলেটরের পক্ষে খুব সহজেই বাজারে প্রতিযোগিতা করা সম্ভব হবে।
যদিও এ গবেষণার ফলে উৎপাদিত নমুনাসমূহের কার্যক্ষমতা প্রচলিত থার্মাল্ ইন্স্যুলেটরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি এবং এর মূল্যও কম তথাপি সংশ্লিষ্ট গবেষকগণ এখানেই থেমে যেতে প্রস্তুত নন, বরং তাঁরা এটির কার্য ক্ষমতা আরো বৃদ্ধি এবং এটির উৎপাদন ব্যয় ও চূড়ান্ত মূল্য আরো হ্রাস করার জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
এ গবেষণার ফলাফল অফাধহপবং রহ চড়ষুসবৎ ঞবপযহড়ষড়মু-এর ৩৩তম ভলিউমের ২০১৪ ক্রমিক সংখ্যার ২১৪৪০-১ থেকে ২১৪৪০-৮ নং পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছে।
পেট্রো-রসায়নের কাঁচামাল হিসেবে শিল্পবর্জ্য ব্যবহারে ইরানী গবেষকদের সাফল্য
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের গবেষকগণ ক্ষতিকর ও বিষাক্ত শিল্পবর্জ্যকে পেট্রো-রসায়ন শিল্পে ব্যবহার্য অন্যতম মূল্যবান কাঁচামালে পরিণত করার ক্ষেত্রে বিরাট সাফল্যের অধিকারী হয়েছেন।
এতদসংক্রান্ত গবেষণা প্রকল্পের প্রধান হামীদরেযা বোযোর্গযাদেহ্ বলেন, ‘আমাদের গবেষকগণ শিল্পবর্জ্যরে জন্য একটি প্লাস্মা গ্যাসিফিকেশন প্রকল্প পরিচালনা করছিলেন এবং আমরা ইতিমধ্যেই একটি রিঅ্যাক্টরের সাহায্যে বিপজ্জনক বর্জ্য থেকে সিন্থেসিস্ গ্যাস উৎপাদনে সক্ষম হয়েছি। এ গ্যাস পেট্রো-রসায়ন শিল্পে ডিজেল ও পেট্রোল উৎপাদনের কাজে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হবে।’
তিনি বলেন, ইরানী গবেষকদের উদ্ভাবিত প্রক্রিয়ার সাহায্যে শহর এলাকার সব ধরনের কঠিন বর্জ্য এবং শিল্পবর্জ্য, চিকিৎসাবর্জ্য, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অন্য যে কোনো ধরনের বর্জ্য এবং ধাতব ও কাচের বর্জ্যকে পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করে কাজে লাগানো সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, গত ২২ সেপ্টেম্বর (২০১৪) তারিখে সমাপ্ত চলতি ইরানী বছরের প্রথম ছয় মাসে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ৫১০ কোটি ডলারেরও বেশি মূল্যের ৭৮ লাখ টন প্রেট্রো-রসায়ন সামগ্রী রফতানি করেছে। ২০ মার্চ ২০১৪ তারিখে সমাপ্ত বিগত ইরানী বছরে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান মোট চার কোটি টন প্রেট্রো-রসায়ন সামগ্রী উৎপাদন করে যা থেকে ৯০০ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি করা হয়।
উল্লেখ্য, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান বিশ্বের প্রধান তেল রফতানিকারক দেশসমূহের অন্যতম এবং চলতি ইরানী বছরে পেট্রো-রসায়ন সামগ্রী রফতানি আয় এক হাজার ২০০ কোটি ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। পাশ্চাত্যের চাপিয়ে দেয়া অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বিগত কয়েক বছরে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান স্বীয় প্রেট্রো-রসায়ন সামগ্রী রফতানির আওতা ও পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।
প্রোস্টেট ক্যান্সারের ওষুধ উৎপাদনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিপত্যের অবসান ঘটালো ইরান
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের গবেষকগণ প্রোস্টেট ক্যান্সারের ওষুধ উৎপাদন করে এ ময়দানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদিত ওষুধের একাধিপত্যের অবসান ঘটালো। ইরানের পলিমার অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যাল ইনস্টিটিউটের গবেষকগণ এ ওষুধ উদ্ভাবন করেন।
পলিমার অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যাল ইনস্টিটিউটের প্রধান মেহ্দী নিকুমানেশ লিউপ্রোলাইড্ এসিলেট্ প্রক্রিয়ার সংবাদ প্রকাশ করে বলেন, এটি হচ্ছে প্রোস্টেট ক্যান্সার চিকিৎসায় এক মাসের জন্য ইনজেক্ট্ করে ব্যবহারোপযোগী ওষুধÑ যার ব্যবহার এ রোগের জন্য ব্যবহার্য আমেরিকান ওষুধের অনুরূপ।
নিকুমানেশ আরো উল্লেখ করেন যে, ইরানে তৈরি এ ওষুধটি প্রোস্টেট ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহার ছাড়াও নারীদের ইউটেরাইন্ ফিব্রয়ড্ ও বন্ধ্যাত্ব সংশ্লিষ্ট রোগসমূহের চিকিৎসায়ও ব্যবহার করা যাবে।
তিনি বলেন, ‘এ ওষুধটি ইতিপূর্বে কেবল আমেরিকায় উৎপাদিত হতো এবং এটির দাম প্রায় চারশ’ ইউরো; এখন আমরা আমাদের দেশে তৈরি এ ওষুধ দ্বারা দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে ইয়েমেন ও সিরিয়ার ন্যায় অন্যান্য দেশেও রফতানি করতে পারব।’
তিনি বলেন, এ ধরনের ওষুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান হচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ এবং ইরানে নব উৎপাদিত এ ওষুধটি গুণ ও মানের দিক থেকে আমেরিকায় উৎপাদিত এ ধরনের ওষুধের অনুরূপ।
ইরানী বিজ্ঞানী কর্তৃক কম খরচে সোলার প্যানেলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রক্রিয়া উদ্ভাবন
ইরানী বিজ্ঞানী রেযা আসাদপুর তাঁর সহকর্মীদের সহযোগিতায় কম খরচে সোলার প্যানেলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কৌশল উদ্ভাবন করেছেন। এ প্রক্রিয়ায় পেরোভ্স্কাইট্ ক্রিস্ট্যাল্ থেকে উন্নত মানের সোলার সেল তৈরি করা সম্ভব হবে। আসাদপুর ও তাঁর সহকর্মিগণ লস্ আলামোস্ ন্যাশন্যাল ল্যাবোরেটরিতে গবেষণা চালিয়ে এ প্রক্রিয়াটি উদ্ভাবন করেন।
উক্ত গবেষকগণ এমন একটি নতুন সলিউশন্-বেস্ড্ হট্-কাস্টিং টেকনিক উদ্ভাবন করেছেন যার ফলে বড় আয়তনের পেরোভ্স্কাইট্ ক্রিস্ট্যাল্ থেকে উন্নত মানের পুনঃউৎপাদনকারী সোলার সেল তৈরি করা সম্ভব হবে।
লস্ আলামোস্-এর এ প্রকল্পের পরিচালক বিজ্ঞানী আদিত্য মোহিত্ বলেন, এ পেরোভ্স্কাইট্ ক্রিস্ট্যাল্সমূহ ভবিষ্যতে কম ব্যয়সম্পন্ন সোলার-বেস্ড্ ক্লিন গ্লোবাল এনার্জি উৎপাদনের জন্য আশা ব্যঞ্জক পথ তৈরি করে দেবে।
উল্লেখ্য, উন্নত মানের উচ্চ তাপমাত্রাবিশিষ্ট ক্রিস্ট্যাল্-গ্রোথ্ প্রক্রিয়া দ্বারা উৎপাদিত হাই-পিউরিটি, লার্জ-এরিয়া ওয়ার্ফে-স্কেল্ সিঙ্গল্ ক্রিস্ট্যালাইন্ সেমিকন্ডাক্টরের সাহায্যে স্টেট্-অব্-দি-আর্ট ফটোভোল্টাইক্স্-কে ভবিষ্যৎ কার্যকর সোলার প্রযুক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। জৈব ও অজৈব পেরোভ্স্কাইট্ দ্বারা তৈরি সোলার সেল সিলিকনের অনুরূপ এফিসিয়েন্সি প্রদান করবে, কিন্তু এতে কতক উল্লেখযোগ্য ঘাটতি আছেÑ যা বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক উৎপাদনের সুযোগকে সীমিত করে দেয়। লস্ আলামোসের আবিষ্কৃত টেকনিক এ ব্যর্থতাকে সাফল্যের সাথে দূরীভূত করে দিয়েছে।
উক্ত গবেষকগণ বড় আকারের ক্রিস্ট্যাল্ গ্রেইন্ সহ পেরোভ্স্কাইট্ উপাদান দ্বারা প্ল্যানার সোলার সেল তৈরি করেছেন যা পেরোভ্স্কাইট্-বেস্ড্ লাইট্-টু-এনার্জি কনভার্সন্ ডিভাইস্ সমূহের অঙ্গনে শতকরা ১৮ ভাগ কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবে।
ইরানী বিজ্ঞানিগণ প্রাণিদেহে ড্রাগ্ ডিস্ট্রিবিউশনের ইমেজ তৈরির থ্রি-ডি ডিভাইস্ তৈরি করেছেন
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের একদল বিজ্ঞানী প্রাণিদেহে ড্রাগ্ ডিস্ট্রিবিউশনের ইমেজ তৈরির থ্রি-ডি ডিভাইস্ উদ্ভাবন করেছেন। তাঁরা আশা করছেন যে, ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ড সার্টিফিকেট্ লাভ করার পর এ ডিভাইস্টি ব্যাপকভাবে উৎপাদন করা হবে।
উক্ত প্রকল্পের পরিচালক ড. সাদীকাহ্ হেজাযী বলেন, ফ্লুরেসেন্স্ মলিকুর্লা টোমোগ্রাফি কোড্-নাম বিশিষ্ট এ ডিভাইস্টি পাণিদেহে ড্রাগ্ ও মেডিসিন্ ডিস্ট্রিবিউশন সম্বন্ধে অনুসন্ধান চালানোর কাজে ব্যবহার করা হবে এবং এর ফলে প্রাণিদেহে ক্যান্সার অনুসন্ধানে দ্রুত ফল পাওয়া যাবে।
মিসেস সাদীক্বাহ্ হেজাযী জানান, বিভিন্ন ইলেক্ট্রিক্ ও মেক্যানিক্যাল্ পার্ট্স্ দ্বারা এ ডিভাইস্টি তৈরি করা হয়েছে। যে প্রাণির দেহে অনুসন্ধান চালানো হবে সেটির শরীরে অ্যানেস্থেসিয়া ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য ওষুধ প্রয়োগের পর সেটিকে এ ডিভাইস্টির মাঝে রাখা হবে। এরপর ডিভাইস্টির রোটেটিং ফির্ল্টা প্রাণিটির শরীরের চারদিকে ঘুরতে থাকবে এবং উক্ত প্রাণিদেহে বিদ্যমান ড্রাগ ডিস্ট্রিবিউশনের থ্রি-ডি চিত্র গ্রহণ করবে।
উল্লেখ্য, এ ডিভাইস্টির ইমেজিং সিস্টেম্টি ৪৭৩, ৫৩২ ও ৭৬৯ ন্যানোমিটার দীর্ঘ ডিওড্ লের্সা দ্বারা তৈরি করা হয়েছে এবং এর আউট্পুট্ হচ্ছে ২০ এম্এম্।
ডিভাইস্টি লেসার ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট প্রাণিদেহের প্রতিটি লেয়ারের স্ক্যান্ করবে ও ইমেজ তৈরি করবে। ফান্ডামেন্টাল্ সায়েন্স্, বায়োকেমিস্ট্রি ও ইমিউনোলোজি নিয়ে গবেষণারত গবেষকগণ তাঁদের গবেষণার ফলাফল পর্যালোচনার কাজে এ ডিভাইস্টি ব্যবহার করতে পারবেন।
ডিভাইস্টি কেবল ইঁদুর সহ ছোট প্রাণিদেহের ড্রাগ্ ডিস্ট্রিবিউশন নির্ণয়ের কাজে ব্যবহার করা যাবে এবং খরগোশ বা তার চেয়ে বড় প্রাণির জন্য ব্যবহার করা যাবে না। এটিকে ইউরোপীয় সার্টিফিকেট্ লাভের উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে।
ইরানী বিজ্ঞানীদের সম্ভাব্য ভূমিকম্পের ক্ষতি সম্ভাবনা চিহ্নিতকারী নিজস্ব শেকিং ট্যাব্ল্ উদ্ভাবন
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বিজ্ঞানিগণ সম্ভাব্য ভূমিকম্পের ক্ষতি সম্ভাবনা চিহ্নিতকারী নিজস্ব শেকিং ট্যাব্ল্ উদ্ভাবন করেছেন। সম্প্রতি তেহরানের আমীর কাবীর প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান গবেষকগণ এ যন্ত্রটি আবিষ্কার করেন। এ যন্ত্রটি ব্যবহার করে যে কোনো স্থানে কোনো ভবন নির্মাণের আগেই সেখানে সম্ভাব্য ভূমিকম্পে পরিকল্পিত ভবনটির সর্বোচ্চ ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা যাবে যার ফলে ভবনটিকে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ মাত্রায় ভূমিকম্প রোধক করে নির্মাণ করা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, ইরান হচ্ছে সেইস্মিক্ ফল্ট্ লাইনে অবস্থিত একটি দেশ যেখানে ভূমিকম্পের সম্ভাবনা অনেক বেশি এবং মাঝে মাঝে বড় ধরনের ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়া ছাড়াও দেশের কোথাও না কোথাও গড়ে প্রতিদিন কম পক্ষে একটি করে হাল্কা ধরনের ভূকম্পন সংঘটিত হয়ে থাকে।
সম্ভাব্য ভূমিকম্পের ক্ষতি-সম্ভাবনা চিহ্নিতকারী এ নিজস্ব শেকিং ট্যাব্ল্ উদ্ভাবনকারী গবেষক র্ফাযাদ্ হাতামী বলেন, এ যন্ত্রটি কোনো ভবন কার্যত নির্মাণের আগে ব্যবহার করা হয় এবং এর ফলে ভবনটির ডিজাইন্ খুব সূক্ষ্মভাবে মনিটর ও নিয়ন্ত্রণ করা যায়; এভাবে সংশ্লিষ্ট ভবনটিকে উঁচু মানের ভূমিকম্প রোধক ভবন হিসেবে নির্মাণ করা সম্ভবপর হয়।
আমীর কাবীর প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জনাব হাতামী জানান, বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, পর্তুগাল, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার হাতে শেকিং ট্যাব্ল্ প্রযুক্তি রয়েছে। বর্তমানে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানে শেকিং ট্যাব্ল্-এর তিনটি মডেল রয়েছে যেগুলো বিদেশে তৈরি। আর তিনি যে যন্ত্রটি আবিষ্কার করেছেন এটি হচ্ছে দেশের অভ্যন্তরে নির্মতব্য প্রথম শেকিং ট্যাব্ল্ মডেল।
তিনি বলেন, এ শেকিং ট্যাব্ল্-এর সাহায্যে কোনো এলাকায় পূর্ব থেকে বিদ্যমান ভবনসমূহের মধ্য থেকে যে কোনো পুরো ভবনকে সেইস্মিক্ ওয়েভের আওতায় এনে সম্ভাব্য প্রকৃত ভূমিকম্পে ভবনটির সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা যায় এবং এ তথ্য ব্যবহার করে সেখানে নির্মিতব্য নতুন ভবনসমূহকে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ মাত্রায় ভূমিকম্প রোধক করে নির্মাণ করা সম্ভব।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ‘টাইপ্-২ ডায়াবেটিস্’ চিকিৎসার ওষুধের ক্ষেত্রে জার্মানির একাধিপত্যের অবসান ঘটালো
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের একটি ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানি ‘টাইপ্-২ ডায়াবেটিস্’ রোগের চিকিৎসার জন্য ওষুধ উৎপাদনে সাফল্যের অধিকারী হয়ে এ ক্ষেত্রে জার্মানির এ পর্যন্তকার একাধিপত্যের অবসান ঘটালো। উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে বিশ্বের দেশসমূহের মধ্যে একমাত্র জার্মানিতেই এ রোগের চিকিৎসার ওষুধ উৎপাদিত হতো।
ওষুধটির আবিষ্কারক ও উৎপাদনকারী আবীদী ফার্মাসিউটিক্যাল্ কোম্পানির সেল্স্ ম্যানেজার মিসেস্ রেইহানেহ্ রূহানী টাইপ্-২ ডায়াবেটিস চিকিৎসার জন্য উদ্ভাবিত তরঢ়ঃরহ ব্রান্ডনেম্-এর এ ওষুধটির উৎপাদনের কথা জানাতে গিয়ে বলেন যে, বর্তমানে তরঢ়ঃরহ ওষুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে একটি জার্মান কোম্পানির যে একাধিপত্য রয়েছে এ ওষুধটি উদ্ভাবন ও উৎপাদনের ফলে অচিরেই ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান জার্মানির সে একাধিপত্যের অবসান ঘটাতে সক্ষম হবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, বর্তমানে জার্মানিতে উৎপাদিত প্রতি প্যাকেট তরঢ়ঃরহ ৭৭ ডলারে বিক্রি হয়ে থাকে। অবশ্য এ ওষুধটি কোনো সুনির্দিষ্ট কোম্পানির মাধ্যমে ইরানে আমদানি করা হয় না। অন্যদিকে ইরানে উৎপাদিত এ ওষুধটি বর্তমানে প্রতি প্যাকেট মাত্র ৮ ডলারে বিক্রি হচ্ছে।
মিসেস্ রেইহানেহ্ রূহানী বলেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের অভ্যন্তরে তরঢ়ঃরহ উৎপাদিত হওয়ার ফলে দেশের বিরাট অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। তিনি আরো বলেন, দেশে এ ওষুধটির প্রকৃত চাহিদা নিরূপণ করে তার ভিত্তিতে আপাতত অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের লক্ষ্যে দেশী বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় এ ওষুধটি উৎপাদিত হবে।
ইরানী কুস্তিগীর হামীদ সুরীয়ান কুস্তিতে পুনরায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলেন
কুস্তিতে সর্বশেষ বিশ্বর্যাঙ্কিং-এ ইরানী কুস্তিগীর হামীদ সুরীয়ান পুনরায় প্রথম স্থানের অধিকারী হয়েছেন। তিনি গ্রেকো-রোমান সম্মিলিত বৈশ্বিক কুস্তির র্যাঙ্কিং তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করেছেন। গ্রেকো-রোমান কুস্তি প্রতিযোগিতায় তিনি এবারও ৫৯ কেজি ওজনের গ্রুপে শ্রেষ্ঠতম কুস্তিগীরের পদ ধরে রাখতে সক্ষম হলেন। একই গ্রুপে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেন যথাক্রমে রাশিয়ান কুস্তিগীর মিঙ্গিয়ান সেমেনোভ্ ও উয্বেকিস্তানের কুস্তিগীর এল্-মুরাদ্ তাস্মুরাদোভ্। আরেক জন ইরানী কুস্তিগীর উমিদ নওরোযী ৬৬ কেজি গ্রুপে আগের বারের মতোই দ্বিতীয় স্থানের অধিকারী হয়েছেন।
এছাড়াও এবারের প্রতিযোগিতায় আরো কয়েক জন ইরানী কুস্তিগীর প্রতিটি গ্রুপের ২০ জন শীর্ষ কুস্তিগীরের তালিকায় স্থানলাভ করেছেন। তাঁরা হলেন ; ফ্রিস্টাইল্ কুস্তিগীর হাসান রাহীমী, মাসুদ ইসমাঈলপুর, ঈমান্ সাদেকী, মোস্তাফা হোসাইনখানী, হাসান ইয়ায্দানী, সাইয়্যেদ দাদাশ্পুর, ইয্যাতুল্লাহ্ আকবারী, মোহাম্মাদ হোসাইন মোহাম্মাদীয়ান, মেইসাম্ মোস্তাফা জোকার, আলীরেযা কারীমী, রেযা ইয়ায্দানী, কোমেইল্ কাসেমী ও পারভীয্ হাদী এবং গ্রেকো-রোমান কুস্তিগীর আফ্শান্ বিয়াবানগার্দ্, স‘ঈদ্ আব্দে ওয়াালী, হাবীবুল্লাহ্ আখ্লাকী, সামান্ তাহ্মাসেভী, মোজতাবা কারীর্ন্ফা, কাসেম্ রেযায়ী, মেহ্দী আলীয়ারী, বেহ্নাম্ মেহ্দীযাদেহ্ ও বার্শী বাবাজান্যাদেহ্।
তৃতীয় পশ্চিম এশিয়া উশু চ্যাম্পিয়নশীপ প্রতিযোগিতায় ইরানের শিরোপা বিজয়
দক্ষিণ-পশ্চিম ইরানের সিস্তান-বালুচিস্তান প্রদেশে অনুষ্ঠিত তৃতীয় পশ্চিম এশিয়া উশু চ্যাম্পিয়নশীপ প্রতিযোগিতায় ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের ক্রীড়াবিদগণ তেরোটি স্বর্ণপদক জয় করে শিরোপা অর্জন করেছেন। গত ৯ ও ১০ ফেব্রুয়ারি (২০১৫) তারিখে অনুষ্ঠিত এ প্রতিযোগিতায় ইরানী ক্রীড়াবিদগণ তেরোটি স্বর্ণ পদক ছাড়াও চারটি রৌপ্য পদক ও দুইটি ব্রোঞ্জ পদক লাভ করেন। উল্লেখ্য, উশু প্রতিযোগিতা একটি চীনা মার্শাল আর্ট।
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী দেশগুলো হচ্ছে ইরান, ইরাক, লেবানন, ইয়েমেন, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, উযবেকিস্তান, কাযাকিস্তান, তাজিকিস্তান ও সিরিয়া। এ প্রতিযোগিতায় দু’টি স্বর্ণপদক, দু’টি রৌপ্যপদক ও দু’টি ব্রোঞ্জপদক জয় করে উযবেকিস্তান দ্বিতীয় স্থান দখল করে। এছাড়া আফগানিস্তান, লেবানন ও পাকিস্তান যথাক্রমে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থান অধিকার করে।
৩৫তম এশীয় বাইসাইকেল চালনা প্রতিযোগিতায় ইরানের তিনটি পদক লাভ
সম্প্রতি থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ৩৫তম এশীয় বাইসাইকেল চালনা চ্যাম্পিয়নশীপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের তিনজন বাইসাইকেল চালনাকারী তিনটি পদক জয় করেছেন। গত ৩ ফেব্রুয়ারি (২০১৫) এ প্রতিযোগিতা শুরু হয় ও ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়।
এবারের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ইরানী প্রতিযোগী বেহ্নাম খসরুশাহী স্বর্ণপদক, মোহাম্মাদ গান্জ্খান্লু রৌপ্যপদক ও এহ্সান খাদেমী ব্রোঞ্জপদক লাভ করেন।