রেল নয় যেন বাতাসগাড়ি
পোস্ট হয়েছে: অক্টোবর ১১, ২০১৬
রেলগাড়ি ঝমাঝম, পা পিছলে আলুর দম- রেলের কথা উঠলে আমাদের অনেকেরই এ ছড়াটি মনে পড়ে। বাষ্পীয় ইঞ্জিনের রেল এখন ইতিহাস। বিবর্তনের মধ্য দিয়ে রেল আজ এসে পৌঁছেছে আধুনিক এক দ্রুতযান হিসেবে। কাঠামো বদলেছে। গতি বেড়েছে। যুক্ত হয়েছে নতুন প্রযুক্তি। রেলকে আরও আধুনিক করতে অনেক দেশেই চলছে নানা পরিকল্পনা। আধুনিক কিছু রেলের কথা নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন। লিখেছেন-
রেল নয় যেন বাতাসগাড়ি
আট মিনিটে ত্রিশ কিলোমিটার
বর্তমানে বিশ্বের দ্রুততম চালু ট্রেনের অন্যতম একটি হল- ট্রান্সর্যাপিড সাংহাই। চলে ম্যাগনেটিক লেভিটেশনে ঘণ্টায় ৪৩০ কিলোমিটার গতিতে। সাংহাই থেকে এয়ারপোর্টে পৌঁছানোর দ্রুততম বাহন হিসেবে এ ট্রেনটিকে বেছে নেন বেশির ভাগ যাত্রী। সাংহাই থেকে এয়ারপোর্টের দূরত্ব ত্রিশ কিলোমিটার। ট্রান্সর্যাপিড সাংহাই এ পথ অতিক্রম করে মাত্র আট মিনিটে।
এ ট্রেনে চড়লে চলার সময় মনে হবে যেন বাতাসে উড়ে চলেছি। অন্যরকম এক আশ্চর্য অভিজ্ঞতা লাভ করেন যাত্রীরা। তবে সাধারণের জন্য এখনও ট্রেনটি চালু করা হয়নি। জাপানের অবাক করা এ ম্যাগলেভ ট্রেন আপাতত চালানো হচ্ছে পরীক্ষামূলকভাবে। শুধু বাছাই করা কিছু যাত্রী এ ট্রেনে চড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। সেই সঙ্গে লাভ করছেন আশ্চর্য অভিজ্ঞতাও। আশা করা হচ্ছে ২০২৭ সালে থেকে এ ট্রেন সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। ট্রেনটি ঘণ্টায় ৫০০ কিলোমিটার গতিতে চলবে টোকিও আর নাগোইয়ার মধ্যে।
অসাধারণ গতি
সাধারণ কিন্তু অসাধারণ গতির এ ট্রেনটি রয়েছে ফান্সে।
বর্তমানে চালু সব নিয়মিত ট্রেনের মধ্যে দ্রুততম হল ফ্রান্সের এই টিজিভি বা হাই স্পিড ট্রেন। ট্রেনটি চালু হয়েছিল ১৯৮১ সালে। সেই থেকে চলছে এখনও।
ফান্সের সবচেয়ে আধুনিক মডেলের ট্রেন হল এজিভি। সাধারণ টিজিভি ঘণ্টায় ৩২০ কিলোমিটার গতিতে চললেও ২০০৭ সালে ঘণ্টায় ৫৭৪ কিলোমিটার গতিতে পৌঁছায় এজিভি।
ঘণ্টায় ১,২০০ কিলোমিটার
এও কি সম্ভব? ট্রেন চলবে ঘণ্টায় এক হাজার দুইশ কিলোমিটার গতিতে? সাধারণ মানুষের চিন্তায় অসম্ভব হলেও ব্যাপারটি সম্ভব হতে চলেছে প্রযুক্তির কল্যাণে। আমেরিকার নেভাডায় চলছে অতি দ্রুত গতিসম্পন্ন এক রেলগাড়ি তৈরির প্রচেষ্টা। প্রকল্পটির দায়িত্বে রয়েছেন স্পেস-এক্সের প্রধান ইলন মাস্ক। তার এ প্রকল্পের নাম দেয়া হয়েছে হাইপারলুপ। মহাকাশ অভিযান সংস্থা স্পেস-এক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক আর মার্কিন বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা টেসলা মিলে এ নিউম্যাটিক টিউব প্রণালীর যানচলাচল পদ্ধতি সৃষ্টি করতে চলেছেন। সানফ্রানসিসকো আর সিলিকন ভ্যালিকে ক্যালিফোর্নিয়ার সেন্ট্রাল ভ্যালি ও লস এঞ্জেলেসের সঙ্গে যুক্ত করবে এ টিউব প্রণালী। টিউবের মধ্যে বায়ুর চাপ কম রাখা হলেও তা পুরোপুরি বায়ুশূন্য হবে না। আর একারণে হাইপারলুপ ট্রেনটি চলার সময় অনেক কম বায়ু প্রতিরোধের সম্মুখীন হবে।
আংশিক বায়ুশূন্যতা জন্য প্রায় কোনো ঘর্ষণ থাকবে না। দেখলে মনে হবে বাতাসের ওপর ভেসে চলেছে। হাইপারলুপ ট্রেনগুলো নিজেদের দুর্ধর্ষ গতি থেকে সৃষ্টি করা এয়ার কুশনের ওপর ভেসে থাকবে। এ ট্রেনের গতিবেগ হবে নাকি ঘণ্টায় ১,২০০ কিলোমিটার। এ ব্যাপারে সবার মনে একটি প্রশ্ন জাগতে পারে- যাত্রীরা ওই বিষম গতি সামলাতে পারবেন কিনা, বিশেষ করে ট্রেন যখন হঠাৎ দ্রুতগতি পেয়ে ছুটতে থাকবে। আরেকটি বিষয়ও যুক্ত হচ্ছে ভাবনায়- পথে বিপদ ঘটলে যাত্রীদের কাছে উদ্ধারকারীদের পৌঁছানোরও একটা ব্যবস্থা অবশ্যই থাকতে হবে। সূত্র: যুগান্তর