সোমবার, ২৪শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

মান্দার একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র শাহ কৃষি জাদুঘর

পোস্ট হয়েছে: আগস্ট ২৯, ২০১৮ 

news-image

নওগাঁর মান্দা উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লীগ্রামে গড়ে উঠেছে শাহ কৃষি তথ্য পাঠাগার ও কৃষি জাদুঘর। এটি এখন এ উপজেলার একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে আসছেন বিনোদনপ্রেমীরা। কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য দিন দিন যেসব নতুন যন্ত্রপাতি উদ্ভাবিত হচ্ছে তাতে কৃষির পুরনো যন্ত্রপাতিগুলো আজ বিলুপ্তির সম্মুখীন। প্রাচীনকাল ও কয়েক দশক আগের কৃষি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি এ জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। বিলুপ্তপ্রায় সেসব কৃষি উপকরণ দেখে পর্যটকেরাও উপকৃত হচ্ছেন।

কৃষিপ্রধান বৃহত্তর নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলা সদরের প্রসাদপুর বাজার থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত কালীগ্রাম গ্রাম। গ্রামে প্রবেশ পথে তীর চিহ্ন দিয়ে জাদুঘরে দিক নির্দেশনা দেয়া আছে। ২০০৮ সালে শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম শাহ ব্যক্তি উদ্যোগে তিন বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলেন শাহ কৃষি জাদুঘর ও কৃষি লাইব্রেরি। সেখানে প্রবেশ পথে বড় একটি লোহার দরজা। এরপর সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো রয়েছে অভ্যর্থনা গেট। আর এ গেটের ভেতর দিয়ে প্রবেশ পথ। গেটে প্রবেশের বাম দিকে কৃষি জাদুঘর এবং ডান দিকে কৃষি লাইব্রেরি। আর এরপর আশপাশে রয়েছে বিভিন্ন ফলদ ও ঔষধি বা ভেষজ গাছ।

এখানে ৯টি ঘরের মধ্যে একটি ঘরে জাদুঘর, একটিতে লাইব্রেরি, একটিতে গোলাঘর, একটিতে খাবার ঘর, একটিতে হেঁসেল ঘর ও চারটি অতিথিদের শোয়ার ঘর। কৃষি লাইব্রেরিতে কৃষি বিষয়ের ওপর বিভিন্ন ধরনের বই সংরক্ষিত রয়েছে। এ ছাড়া দুই শতাধিক ঔষুধি ও দেড় শতাধিক ফলদ গাছ আছে। লাইব্রেরি দেখাশোনার জন্য রয়েছেন জোছনা খাতুন এবং বাগান পরিচর্যার দায়িত্বে রয়েছেন আজাহার হোসেন ও হজরত আলী নামে দু’জন কর্মী।

কৃষি জাদুঘরে স্থান পেয়েছে কৃষি সরঞ্জামাদি- যেমন বিলুপ্তপ্রায় গরুর গাড়ি, গরুর গোমাই, মাথাল, ঢেঁকি, মই, লাঙল, জোয়াল, পানি সেচের জাঁতা, পালকি, নৌকা, কোদাল, কাস্তে, ঝাড়–, দাউল, দিদা, তৈল ভাঙা ঘানি, বায়োস্কোপ, বাঁশের টোপা, মাছ ধরার যন্ত্র, ধান রাখার মাটির হাঁড়ি বা মটকি, ধান মাড়াই মেশিন, কীটনাশক স্প্রে মেশিন, শ্যালো মেশিন, গোলাঘরসহ আরো অনেক কিছু।

কৃষি তথ্য পাঠাগার থেকে কৃষকেরা বই পড়ে তাদের ফসলের সমস্যার সমাধান পেতে পারেন। কৃষি বিষয়ে নতুন কিছু উদ্ভাবন হলে এলাকায় প্রজেক্টরের মাধ্যমে কৃষকদের দেখানো হয়ে থাকে। এতে করে কৃষকেরা খুব সহজেই কৃষির নতুন বিষয়ে ধারণা পেতে পারে ন। এ ছাড়া ছোটদের জন্য রয়েছে গল্প ও ছড়ার বই।

ঈদের দ্বিতীয় দিনে জাদুঘরে সপরিবারে কালীগ্রাম গ্রামে বেড়াতে এসেছেন আহসান উল্লাহ। তিনি বলেন, গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে এসেছি। শুনলাম এখানে কৃষি জাদুঘর আছে। শুনেই জাদুঘরটি দেখার ইচ্ছা হলো। আমার ছেলেমেয়েরা তো জানে না কৃষিতে কী কী যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয়। শুধু বইয়েই পড়েছে। এ জাদুঘরে এসে তারা নিজের চোখে সরঞ্জামগুলো দেখতে পেল। এখান থেকেও তাদের অনেক কিছু শেখার আছে। আগামী প্রজন্ম হয়তো কৃষি সরঞ্জাম দেখতে পাবে না। কিন্তু এ জাদুঘরে এলে কিছুটা ধারণা পাবে।

শাহ কৃষি তথ্য পাঠাগারের পরিচালক শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম শাহ বলেন, কৃষি ক্ষেত্রে উন্নতি করতে হলে কৃষি বিষয়ে জানতে এবং বই পড়তে হবে। আর এর অভাব থেকেই এ পদক্ষেপ নেয়া। আমার স্বল্প জায়গায় কিছুটা হলেও তা সংরক্ষণ করতে পেরেছি। কৃষি বিষয়ে কৃষকের মাঝে যে অভাব রয়েছে তা এখন উপলব্ধি করতে পারছি। এই লাইব্রেরিতে এসে কৃষকেরা তাদের সমস্যার বিষয়ে বই পড়ে সমাধান পেয়ে থাকে এবং সে মোতাবেক পদক্ষেপ নিতে পারে।-নয়া দিগন্ত ।