শুক্রবার, ৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

কঠিন অবরোধের মধ্যেও করোনা মোকাবেলায় যেভাবে সাফল্য পেল ইরান

পোস্ট হয়েছে: জুন ১২, ২০২০ 

 

সাইদুল ইসলাম

নোভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)এর প্রাদুর্ভাব চীনে প্রথম দেখা দিলেও প্রাণঘাতী এই উপসর্গটি এখন ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। দিনকে দিন অবস্থার চরম অবনতি হচ্ছে। চীন করোনার ধাক্কা অনেকটা সামলে উঠলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি ও ¯েপনসহ বিশ্বের অনেক দেশের অবস্থাই এখন ভয়াবহ। মৃত্যুর মিছিল ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। আর আক্রান্তের সংখ্যাও বিশ্বজুড়ে বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ৩০ এপ্রিল বৃহ¯পতিবার বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৩২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে সুস্থও হয়ে উঠেছেন ১০ লাখের বেশি। করোনার সংক্রমণের সার্বক্ষণিক তথ্য প্রকাশকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডট ইনফোর তথ্যমতে, ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ৩২ লাখ ৭২ হাজারের বেশি। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৩১ হাজার মানুষের। সুস্থ হয়েছেন ১০ লাখ ৩০ হাজারের বেশি। অর্থাৎ বৃহ¯পতিবার পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন মোট শনাক্ত রোগীর ৩২ শতাংশের মতো। বেশি আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে চীন, ইরান ও জার্মানিতে সুস্থ হওয়ার হার বেশি। সেই তুলনায় অনেক কম যুক্তরাষ্ট্রে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনসহ দেশটির অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় বুধবার ২৯ এপ্রিল আরও ২ হাজার ৩৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে মৃত্যু ৬২ হাজার ছাড়িয়েছে। সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ১০ লাখ ৭৫ হাজার ছাড়িয়েছে, যা সারা বিশ্বে মোট আক্রান্তের প্রায় এক তৃতীয়াংশ। ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্যমতে, বৃহ¯পতিবার রাত ১২টা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৪৯ হাজারের কিছু বেশি রোগী। অর্থাৎ দেশটিতে সুস্থ হয়েছেন প্রায় ১৪ শতাংশ রোগী, যা করোনার সংক্রমণ ছড়ানো শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম। তবে যুক্তরাজ্যে বৃহ¯পতিবার পর্যন্ত ঠিক কতজন সুস্থ হয়েছেন, সে তথ্য জানা যায়নি। বিবিসির তথ্যমতে, দেশটিতে বৃহ¯পতিবার পর্যন্ত ১ লাখ ৭১ হাজারের বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু ২৬ হয়েছে ২৬ হাজার ৭১১ জনের। অন্য দেশগুলোতে কমে আসায় ইউরোপে এখন প্রতিদিন সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে যুক্তরাজ্যে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ¯েপনে বৃহ¯পতিবার করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২৬৮ জনের। গত ২০ মার্চের পর দেশটিতে একদিনে মৃত্যুর ঘটনা এদিনই সবচেয়ে কম। এ নিয়ে ¯েপনে মারা গেলেন সাড়ে ২৪ হাজারের বেশি মানুষ। ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্যমতে, ¯েপনে ৩০ এপ্রিল বৃহ¯পতিবার পর্যন্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২ লাখ ৩৯ হাজারের বেশি। সুস্থ হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার রোগী। অর্থাৎ ¯েপনে সুস্থ হয়েছেন ৫৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ রোগী। বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ইতালিতে বৃহ¯পতিবার মৃত্যু হয় ২৮৫ জনের। এ নিয়ে দেশটিতে সাড়ে ২৭ হাজার ৯৬৭ জনের প্রাণ গেল করোনায়। বৃহ¯পতিবার পর্যন্ত সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজারের বেশি। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন প্রায় ৭৬ হাজার। অর্থাৎ ইউরোপের এই দেশে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন প্রায় ৩৫ শতাংশ। ব্যাপকভাবে করোনার সংক্রমণ ছড়ানো ইউরোপের আরেক দেশ ফ্রান্সেও সুস্থ হয়ে ওঠার হার প্রায় ২৯ শতাংশ। দেশটিতে মৃত্যু ২৪ হাজার ছাড়িয়েছে।
ইউরোপের আরেক দেশ জার্মানিতে বুধবার পর্যন্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি। অর্থাৎ দেশটিতে সুস্থ হয়ে উঠেছেন মোট শনাক্ত রোগীর ৭৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ। করোনার সংক্রমণ যে চীন থেকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে, সেখানেও সুস্থ হয়ে উঠেছেন মোট শনাক্ত রোগীর ৯৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। আর মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানে সুস্থ হয়ে উঠেছেন মোট শনাক্ত রোগীর ৭৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। ৩০ এপ্রিল বৃহ¯পতিবার পর্যন্ত দেশটিতে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯৪ হাজার ৬৪০ জনের বেশি, মৃত্যূর সংখ্যা ৬ হাজার ২৮ জন এবং সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন ৭৫ হাজার ১০৩ জন। তুরস্কে শনাক্ত হওয়া প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার রোগীর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৩৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আর রাশিয়ায় শনাক্ত হওয়া ১ লাখ ৬ হাজারের বেশি রোগীর মধ্যে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১০ দশমিক ৯১ শতাংশ।
চীনের পরেই যে দেশটিতে করোনা ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সেটি হলো ইরান। তেমন কোনো পূর্ব প্রস্তুতির সুযোগ না দিয়ে হঠাৎ করেই করোনার তা-ব শুরু হয় চীনের ঘনিষ্ঠ ইরানে। ফলে প্রথমদিকে পরিস্থিতি সামলাতে কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হয়েছে। তবে দ্রুতই ঘুরে দাঁড়ায় মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি । যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে সংকটে থাকা ইরান করোনা পরিস্থিতি যে খুব দক্ষতার সাথেই সামলে নিচ্ছে দেশটির অস্থায়ী করোনা চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোর দিকে তাকালে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। খুবই পরিপাটি সেগুলো। সংকটের কয়েকমাস পর যুক্তরাজ্যের মত দেশকে যেখানে স্বাস্থ্য কর্মীদের পিপিই দিতে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে ইরানে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। ইরান মৃত্যুর হার নিয়ন্ত্রণে ইউরোপ আমেরিকার চেয়ে সফলতা দেখিয়েছে। অথচ কঠিন এই সময়টাতে আইএমএফ এর কাছে ঋণ চেয়েও ইরান তা পায়নি যুক্তরাষ্ট্রের বাধার কারণে। ইরানে দ্রুত আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও মৃত্যু ছিল সে তুলনায় অনেক কম। তার মানে হলো অসুস্থদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়েছে ইরান।
জনসংখ্যার অনুপাতে ইরানে মৃত্যুর হার ইউরোপ-আমেরিকার চেয়ে অনেক কম। মৃত্যুর হার নিয়ন্ত্রণে দেশটি ইউরোপের সবচেয়ে সফল দেশে জার্মানির চেয়েও সাফল্য দেখিয়েছে । যেমন ¯েপনে প্রতি ১ হাজারে মারা গেছেন ৪৮২ জন আর ইরানে ৬৬ জন। যুক্তরাষ্ট্রে এই হার ১৫৮ এবং জামানিতে ৬৯। এতে বুঝা যাচ্ছে যে, অর্থনৈতিক সংকটে পর্যুদস্ত থাকলেও ইরানে স্বাস্থ্য সেবার মান এসব দেশের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।
ইরান এই সাফল্য পেয়েছে পদে পদে যুক্তরাষ্ট্রের বাধা উপেক্ষা করেই। ভয়াবহ এই মানবিক সংকটের মধ্যেও ইরানের উপর অবরোধ কঠিন থেকে কঠিনতর করেছে মার্কিন প্রশাসন। এই নিয়ে দেশের ভেতরে এবং বাইরে যথেষ্ট সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রা¤পকে। ডেমোক্রেটরা বার বার বলছে ইরানের এই বিপদের সময় অমানবিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া উচিত। তবে নিষেধাজ্ঞা তোলা তো দূরের কথা, যুক্তরাষ্ট্র পদে পদে বাধা দিয়ে চলেছে ইরানকে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ থেকে জরুরি ভিত্তিতে ৫০০ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছিল ইরান। যুক্তরাষ্ট্র এই ঋণের বিরোধিতা করেছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, এই সংকটের সময় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর উচিত তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা। তিনি বলেন, আমরা আইএমএফ এর সদস্য। আমরা তাদের কাছে একটা আবেদন করেছি। ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বৈষম্য করা তাদের উচিত হবে না। তবে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক খবরে বলা হয় আইএমএফের সর্ববৃহৎ অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র ওই ঋণ আবেদন আটকে দেয়ার পরিকল্পনা করছে। প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, এই মহামারির মধ্যেও ইরানের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা বর্বোরোচিত অপরাধ। তিনি বলেন, ইরানি জনগণ যখন করোনাভাইরাস মহামারির বিরুদ্ধে কঠিন লড়াইয়ে রয়েছে তখন মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অমানবিকতার সকল সীমা অতিক্রম করেছে। নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকলেও করোনা মোকাবেলায় তেহরানের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়নি বলে দাবি করেন রুহানি। তিনি বলেন, মহামারি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নির্মাণে ইরান প্রায় স্বয়ংস¤পূর্ণ। এই রোগ মোকাবেলায় অন্য দেশের তুলনায় ইরান অনেক বেশি সফল। ইরানি কর্মকর্তারা বলছেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে করোনা মহামারি মোকাবেলায় তাদেরকে বেগ পেতে হলেও পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার কমতে শুরু করেছে। ইরানের এই মহাবিপদ পাড়ি দেয়ার নেপথ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি দেশটির সেনাবাহিনী, বিপ্লবী গার্ড বাহিনীসহ সকল সশস্ত্র বাহিনী, অনেক বেসরকারি সংস্থা, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান রেখেছে অনন্য অবদান।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, করোনা মোকাবেলায় সারাদেশে কাজ করছে ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এর মধ্যে চিকিৎসাবিজ্ঞানে অধ্যয়নরত ২৩০টি দলও রয়েছে। সারাদেশে সোয়া লাখ স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছেন। তাঁরা ফেইস মাস্কসহ নানা প্রয়োজনীয় উপকরণ তৈরি করে তা বিলি করছেন। ইরানের সেনাবাহিনী করোনা চিকিৎসায় ২৮টি হাসপাতাল এবং বিপ্লবী গার্ডবাহিনী ৬টি ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করেছে। ইরানের শহর এবং খোলা জায়গাগুলো জীবাণুমুক্ত করার জন্য সেনাবাহিনী একটি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় মাস্ক, জীবাণুনাশক সামগ্রী তৈরি, সারা দেশে কনসালটেশন কেন্দ্র এবং মোবাইল হাসপাতাল পরিচালনাসহ নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ইরানের তৈরি ভেন্টিলেটর কেবল নিজেদের চাহিদা মেটাতেই সক্ষম হয়েছে তাই নয়; বরং এর চাহিদা বাড়ছে বিশ্বের অনেক দেশেই। রাশিয়া, ইতালি ও ¯েপনসহ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে ভেন্টিলেটর রপ্তানির জন্য অনুরোধ জানিয়েছে ইরানকে। বর্তমানে ইরানের বিশেষজ্ঞরা করোনা নির্ণয়ের কিট তৈরি করছেন এবং সপ্তাহে এক লাখ কিট তৈরিতে তারা সক্ষম। করোনা সংক্রমিত ব্যক্তিকে দ্রুত চিহ্নিত করতে র‌্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট কিটও তৈরি করেছে দেশটি। এই টেস্ট কিট এর মাধ্যমে কম সময়ে বেশি মানুষকে পরীক্ষা করা যাবে। করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ওষুধ উৎপাদনের চেষ্টাও থেমে নেই ইরানে। অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ ‘ফাভিপিরাভি’র উৎপাদনে কাজ করছে দেশটির তিন কো¤পানি। কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় ওষুধটি কার্যকর হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বিশ্বে করোনাভাইরাসের ওপর পরিচালিত বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রকল্পের সংখ্যায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান। দেশটির গবেষকরা এ পর্যন্ত করোনাভাইরাস সংশ্লিষ্ট ১ হাজার ২শ’র অধিক প্রকল্প পরিচালনা করেছেন। ইরানের উপস্বাস্থ্যমন্ত্রী রেজা মালেকজাদেহ এই তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, করোনাভাইরাসের ওপর গবেষণা ও উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালনা করে আন্তর্জাতিক পরিম-লে আমরা স্বল্প সময়ের মধ্যে দারুণ সব বৈজ্ঞানিক পণ্য তুলে ধরেছি। বর্তমানে দেশে পরিচালিত করোনাভাইরাস গবেষণার অধিকাংশই ইন্টারভেনশনাল স্কিমের আওতায়। এর মধ্যে ৩৫টি স্কিম কোভিড-১৯ এর কার্যকর চিকিৎসা উদ্ভাবন করছে বলে জানান ইরানি এই মন্ত্রী।
ইরানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট সোরেনা সাত্তারি বলেছেন, তাঁর দেশের জ্ঞানভিত্তিক কোম্পানিগুলো করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় প্রচুর সংখ্যক সরঞ্জাম উৎপাদন করেছে। ইরান এখন এসব সরঞ্জাম অন্যান্য দেশে রপ্তানি করতে সক্ষম। সাত্তারি বলেন, মেডিকেল সরঞ্জাম ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে জ্ঞানভিত্তিক কোম্পানিগুলো দুর্দান্ত অগ্রগতি লাভ করেছে। এসব কোম্পানি আইসিইউ ও সিসিইউ সরঞ্জাম, সিটি-স্ক্যান মেশিন, করোনাভাইরাস শনাক্তকারী কিট, জীবাণুনাশক উৎপাদন করছে। ফার্মগুলোর বিশেষভাবে লক্ষণীয় পদক্ষেপের একটি হলো দিনে ৬০ লাখ মাস্ক উৎপাদন করা।
অপরদিকে ইরানে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বক্তিগত ও গোষ্ঠীগত স্থাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে দেশটিতে আয়োজন করা হয়েছে আন্তর্জাতিক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার। একইসাথে করোনাভাইরাস মহামারি প্রতিরোধে স্বেচ্ছায় বাসাবাড়িতে অবস্থান করা নাগরিকদের মনোরঞ্জনে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন ইরানি শিল্পীরা। এলক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশব্যাপী একটি বিনোদনমূলক ক্যা¤েপইন চালু করেছেন দেশটির কয়েকশ শিল্পী। এক বিবৃতিতে নাটকের অভিনেতা, চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রশিল্পী, কার্টুনিস্ট ও লেখকরা বলেন, তাঁরা সোশ্যাল নেটওয়ার্কে প্রদর্শনের জন্য বিভিন্ন শিল্পকর্ম তৈরি করছেন। বাসাবাড়িতে থাকা আনন্দময় ও সহনীয় করে তুলতে তারা আগামী ১শ দিন এসব শিল্পকর্ম প্রদর্শন করবেন। এক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছে দেশটির বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় মিউজিক দলও। হোম কোয়ারিন্টিনে থাকা মানুষের দিনগুলো আনন্দময় করে তুলতে অনলাইন কনসার্টের আয়োজন করেছে তারা। রাস্তাক, জুয়ানা ও গিল-ও-আমার্দ এর মতো বিখ্যাত সংগীত ব্যান্ডগুলো এতে পারফর্ম করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু এর রিজিওনাল ইমারজেন্সি ডিরেক্টর রিচার্ড ব্রেননান বলেছেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ইরান গঠনমূলক প্রতিরোধ পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া নোভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মোকাবেলায় ইরানের ফলপ্রসূ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর জন্য অঞ্চলের অন্য দেশগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি বলেছেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে চিকিৎসা সরঞ্জাম সংগ্রহের ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও করোনাভাইরাস মোকাবিলায় তাঁর দেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেলেও ইরানে এই প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত কোনো রোগী বিনা চিকিৎসায় মারা যায়নি। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও করোনা রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করেছে তেহরান।