অধ্যাপক হেসাবী ‘ইরানের আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের জনক’ খেতাবে ভূষিত
পোস্ট হয়েছে: আগস্ট ৬, ২০১৩

ড. মাহমুদ হেসাবী বিশ্বের একজন উচ্চতর যোগ্যতা ও ধীশক্তিসম্পন্ন অধ্যাপক হিসাবে স্বীকৃত ও সুপরিচিত। তিনি ইরানের বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি অঙ্গনের এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। ড. মাহমুদ হেসাবীর বর্তমান বয়স ৮৮ বছর (১৯৯২ সালে)। এই বয়সেও তিনি শিক্ষাদানের কাজে ব্যাপৃত আছেন এবং ইরানের রাজধানী তেহরানস্থ প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সক্রিয় সহযোগিতা করে চলেছেন।
ইরানিয়ান ইনস্টিটিউট অব সাইন্স ড. মাহমুদ হেসাবীকে ‘ফাদার অব ইরান’স মডার্ন ফিজিক্স (ইরানের আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের জনক) খেতাবে ভূষিত করেছে। ইরান তথা সমগ্র বিশ্বের একজন শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাবিদ ড. হেসাবী অর্ধ শতাব্দীরও বেশি কাল ধরে ছাত্রদের পড়িয়েছেন এবং তাদেরকে বিজ্ঞানের উচ্চতর ও গবেষণামূলক শিক্ষা প্রদান করেছেন। ফারসি ভাষায় তাঁর একুশটি বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
মাহমুদ হেসাবী ১৯০৩ সালে তেহরানে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার শিক্ষা জীবন শুরু করেন সাত বছর বয়সে লেবাননের রাজধানী বৈরুতস্থ ফ্রেন্স ক্রিশ্চিয়ান স্কুলে। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রারম্ভিককালে স্কুলটি বন্ধ হয়ে গেলে তিনি বৈরুতেরই আমেরিকান হাই স্কুলে লেখাপড়া শুরু করেন। উঠতি বয়সেই ভাষার উপর বিশেষত আবরি ও ফরাসি ভাষার উপর তিনি যে দক্ষতা অর্জন করেন তা ছিল তাঁর অসাধারণ ও উল্লেখযোগ্য ধীশক্তি ও প্রতিভার ইঙ্গিতবহ।
বৈরুতের আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে মাহমুদ হেসাবীর ভর্তি হওয়ার সুযোগ প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে শিক্ষাদীক্ষায় তাঁর যোগ্যতার প্রমাণ পাওয়া যায়। সেখান থেকে তিনি বিজ্ঞানে গ্রাজুয়েট হওয়ার পর মাস্টার্স শ্রেণিতে ভর্তি হন। একই সাথে জনাব হেসাবী সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, জ্যোতির্বিজ্ঞান, অংকশাস্ত্র ও জীব বিজ্ঞানের উপরও ডিগ্রি লাভ করেন। ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র পাঁচ বছর অবস্থাকালের মধ্যেই তিনি এসব যোগ্যতা অর্জন করে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন।
বৈরুত থেকে প্যারিসে গিয়ে জনাব মাহমুদ হেসাবী সরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ের তাঁর প্রতিভা চর্চা শুরু করেন। সেখানে মাত্র দু’বছরেরও কম সময়ে তিনি পদার্থ বিজ্ঞানে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। এই সময়ের মধ্যেই তিনি উপার্জনের জন্য ক্যাপিটালস ইলেক্ট্রিক রেলওয়েজ-এ কর্মরত থাকাকালে ইকোল সুপিরিয়র ডী ইলেক্ট্রিসাইট অব প্যারিস থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অপর একটি ডিগ্রি অর্জন করেন।
ছয়টি ব্যাচেলর ডিগ্রি, একটি মাস্টার ডিগ্রি ও পিএইচডি ডিগ্রিসহ মাহমুদ হেসাবী ১৯২৭ সালে স্বদেশ ইরানে ফিরে আসেন। সে সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র চব্বিশ বছর। স্বদেশ প্রতাবর্তনের পর তিনি তখনকার সময়ের একমাত্র কলেজ দারুল মোয়াল্লেমিন-এ অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন। তিনি বহু বছর যাবৎ তেহরান টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ও তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় কারিগরি ও বিজ্ঞান অনুষদের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
ইরানে অধ্যাপক হেসাবীর কয়েকটি বড় বড় অবদান হচ্ছে : ইরানিয়ান জিওফিজিক্স ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা, অ্যাটমিক এনার্জি অ্যাসোসিয়েশন গঠন, ইনস্টিটিউট ফিজিক্স প্রতিষ্ঠা এবং অপর কয়েকটি বিজ্ঞান সংগঠন গড়ে তোলা। ১৯৭১ সালে তাঁকে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মানসূচক অধ্যাপক পদ দান করা হয়। জনাব মাহমুদ হেসাবী অধ্যয়ন ব্যপদেশে ফ্রান্সে থাকাকালে ‘কমান্ডার ডী লা লেজিয়ন ডী অনার’ খেতাবে ভূষিত হন। ঐ খেতাবটি ছিল ফ্রান্সের সর্বোচ্চ সম্মানসূচক খেতাব।
আন্তর্জাতিকভাবে এই ইরানী শিক্ষাবিদ তাঁর ‘অণুর অক্ষয় তত্ত্ব’-এর কারণে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। বৈজ্ঞানিক আলবার্ট আইনস্টাইনই কেবল এই তত্ত্বকে কার্যকর বলে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন এবং সহায়তা করেছিলেন। লেসার প্রযুক্তি ও অন্যান্য মৌলিক বস্তু বিষয়ে বিশ্বের অন্যান্য খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ও পদার্থ বিজ্ঞানীদের সাথে অধ্যাপক হেসাবী কাজ করেন। তিনি বিশ্বের ১৫টি শিক্ষা বিষয়ক সংগঠনের সদস্য ছিলেন।
তিনি নিয়মিত তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে সপ্তাহে দু’দিন পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক ও অন্যদের জ্ঞানচর্চায় সহায়তা করেন। তাঁর একটি প্রধান আগ্রহব্যঞ্জক কাজ হলো পবিত্র কুরআন এবং ফারসি সাহিত্য, সংগীত ও খেলা বিষয়ক বিভিন্ন অংশ লিপিবদ্ধ করে রাখা। চিত্রকর্মকে তিনি জীবনের প্রধান রুচিকর উপাদান বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি একে বিজ্ঞানেরও অন্তর্ভুক্ত বলে বর্ণনা করেছেন।
(নিউজলেটার, জানুয়ারি ১৯৯২)